গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সম্প্রীতি ধরে রেখেছেন সুনামগঞ্জবাসী

বাসস
প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২০২৫, ১৯:১৪
ছবি : বাসস

মো. আমিনুল হক

সুনামগঞ্জ, ৮ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : ‘মসজিদে আজান হোক, মন্দিরে ঘণ্টা, পৃথিবীটা হোক সবার, এই তো চাওয়াটা’। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর এভাবেই সম্প্রীতি রক্ষায় সুনামগঞ্জবাসী কাজ করে যাচ্ছেন। ২০২৪ সালে শেখ হাসিনা সরকার পালানোর পর ৩ দিন সরকারবিহীন রাষ্ট্রেও সুনামগঞ্জবাসী শান্তি ও সম্প্রীতির সেই ঐতিহ্য ধরে রেখেছিলেন।

জানা গেছে, শেখ হাসিনা সরকার পালানোর পর দেশ ছিল নেতৃত্বহীন। এ সময় জেলায় মানুষ উল্লাস করেছেন আপন মনে। তবে, ভিন্নধর্মালম্বীদের জন্য অনেকে চিন্তা করছিলেন। একদিকে দুর্গাপূজা অন্যদিকে সরকারবিহীন রাষ্ট্র। এই সময়টাকে সুনামগঞ্জের ছাত্র-জনতা ধারণ করছিলেন ভিন্ন আঙ্গিকে। তারা দলমত নির্বিশেষে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। 

সুনামগঞ্জের জল জোছনার শহর এর অনন্য উদাহরণ। চব্বিশের ৫ আগস্টের পর সুনামগঞ্জ শহরে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী নির্মিত বিভিন্ন স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলে বিক্ষুব্ধরা। কিন্তু ঐ মুহূর্তে জামায়াত, বিএনপির নেতাকর্মীরা মন্দির পাহারা দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। দেশের কিছু সংখ্যক জায়গায় ভিন্নধর্মালম্বীদের উপাসনালয়ে হামলা হলেও সুনামগঞ্জে ছিল ব্যতিক্রম। সুধীজন ও রাজনৈতিক মহলের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের পরম্পরা রক্ষার কারণেই কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি বলে মনে করেন সবাই। 

জেলার সুধীজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শেখ হাসিনার পালানোর খবরে রাজপথে নেমে আসে ছাত্র-জনতা। এ সময় বিচ্ছিন্নভাবে জেলায় সরকারি কিছু অফিসে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। কিছু এলাকায় ক্ষমতার অপব্যবহারকারী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাড়িঘরেও  হামলার ঘটনা ঘটে। তবে বড় ধরনের হামলা বা নাশকতার ঘটনা ঘটেনি। নিরাপদ ছিল জেলার ব্যবসা, সামাজিক ও পারিবারিক প্রতিষ্ঠানগুলো। 

তারা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো ও সুধীজন বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতাকে সামাল দিয়েছেন। ফলে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। সারা জেলার নেতাকর্মীদের শান্ত থেকে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী ও সাধারণ মানুষের জানমাল রক্ষায় ভূমিকা রাখার নির্দেশনা দিয়েছিলেন জেলার রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সরেজমিনে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে অভয় দিয়ে এসেছিলেন তারা। যে কারণে ৫ আগস্ট থেকে অন্তবর্তী সরকার গঠনের তারিখ ৮ আগস্ট পর্যন্ত এমনকি পরবর্তী সময়েও সুনামগঞ্জ জেলায় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। 

তারা জানান, এখনো স্বস্তিতে আছেন সাধারণ মানুষ। তবে এ ঘটনায় রাজনৈতিক দলগুলোও প্রতিবাদ জানিয়েছিল। প্রশাসনও দ্রুত পরিস্থিতি সামাল দিয়েছিল। 

স্থানীয়রা জানান, ব্রিটিশ আমলের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, ষাটের দশকে সিলেটি-আবাদি দ্বন্দ্ব, বাবরি মসজিদ নিয়ে দাঙ্গাসহ নানা সময়ে সামাজিক ও সাম্প্রদায়িক মুখোমুখি অবস্থানে পৌঁছে ছিল স্থানীয় জনতা। সে সময়গুলোতে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ এসব দাঙ্গা সাহসের সঙ্গে মোকাবেলা করে সম্প্রীতির ঐতিহ্য বজায় রেখেছিলেন। ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত নেতৃবৃন্দ রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক দ্বন্ধ-সংঘাত এড়িয়ে সম্প্রীতির ধারা বজায় রেখে চলেছেন। 

সুনামগঞ্জের পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বিমল বনিক বলেন, আমাদের সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সুদীর্ঘ ঐতিহ্য আছে। সব সংকটে আমরা দলমত নির্বিশেষে শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এই ঐতিহ্য রক্ষা করেছেন। ফলে ৫ আগস্ট থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত সরকারবিহীন সময়েও আমরা নিরাপদ ছিলাম। 

তিনি বলেন, অবশ্য কতিপয় সাম্প্রদায়িক ব্যক্তি উস্কানীর চেষ্টা করেছিলেন তবে তাদের ফাঁদে কেউ পা দেয়নি। 
সুনামগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সরকারবিহীন তিনদিন স্বৈরাচারের প্রেতাত্মাসহ দুষ্কৃতকারীরা আমাদের সুনামগঞ্জের সুনাম বিনষ্ট করার চেষ্টা করেছিল, আমরা তা হতে দেইনি। 

আমরা রাজপথে রাতদিন শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করেছি। জনগণের জানমালের হেফাজত করেছি। 
সুনামগঞ্জ জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল হাসান রাজু বলেন, স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দেশবাসীর সঙ্গে সুনামগঞ্জবাসীও খুশি হয়েছেন। তবে এ সময়ে সরকারি, বেসরকারি স্থাপনা, ভিন্ন মতাবলম্বীদের ধর্মীয় ও সামাজিক স্থাপনা যাতে দুষ্কৃতকারীদের টার্গেটে না পড়ে সচেতন ছিলাম। মানবঢাল হয়ে আমরা কাজ করেছি, পাহারা দিয়েছি। যার ফলে অন্ধকার শক্তি আমাদের গ্রাস করতে পারেনি। 

সুনামগঞ্জ জেলা জাসাসের আহবায়ক অধ্যক্ষ (অব:) শেরগুল আহমেদ বলেন, স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের দুঃশাসনে অতিষ্ঠ মানুষ রাজপথে নেমে এসেছিলেন। তখন অরক্ষিত ছিল সব কিছু। আমরা রাস্তায় নেমে সরকারি-বেসরকারি এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদের স্থাপনার সুরক্ষা দিয়েছি। আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্য বজায় রেখেছি। 

সুনামগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা তোফায়েল আহমদ খান বলেন, ৫ আগস্ট স্বৈরাচার সরকার প্রধান শেখ হাসিনার পলায়নের পর আমরা ট্রাফিক পয়েন্টে ছিলাম। আমরা শান্তি, সম্প্রীতি বজায় রেখেছি। কোনো ক্ষতি হতে দেইনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বীর শহীদ যোদ্ধারা আমাদের অহংকার : অ্যাটর্নি জেনারেল
গাজা দখলের পরিকল্পনার ঘটনায় বেলজিয়ামে ইসরাইলি রাষ্ট্রদূতকে তলব
বিভিন্ন খাতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য নিয়ে এক বছর পূর্ণ করল অন্তর্বর্তী সরকার
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে নোয়াবের বিবৃতি প্রত্যাখ্যান করেছে সরকার
কাজাখস্তানে রুশ পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ শুরু
চট্টগ্রামে ১৮ মামলার আসামি মাদক সম্রাট সোবাহান গ্রেফতার
মালদ্বীপে বাংলাদেশের নতুন হাইকমিশনার হলেন ড. নাজমুল ইসলাম
ফাইনালের আগে বড় জয় দিয়ে লিগ পর্ব শেষ করল বাংলাদেশ
ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন পুরো বাংলাদেশকে এক সুতোয় বেঁধেছিল : আখতার হোসেন
সাতক্ষীরা সীমান্তে বিজিবির অভিযানে চোরাচালান পণ্য জব্দ
১০