ওবাইদুর রহমান
ঢাকা, ১০ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস): হাসপাতালে বসেই সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনুদান পাচ্ছেন সারাদেশের ক্যান্সার ও কিডনিসহ ছয় ধরনের অসংক্রামক রোগীরা। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় গত এক বছরে এ খাতে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে রোগীদেরকে। রোগী প্রতি এককালীন পেয়েছে ৫০ হাজার টাকা।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোক-এ প্যারালাইজড, জন্মগত হৃদরোগ এবং থ্যালাসেমিয়া রোগীসহ ছয়টি প্রধান অসংক্রামক রোগের জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে এসব অসংক্রামক রোগের রোগীদের ৬৪ জেলার ৪৫ হাজার রোগীকে ২২৫ কোটি টাকা সহায়তা করা হয়। সরাসরি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সহায়তা প্রদান করা হয় ১৫ হাজার রোগীকে ৭৫ কোটি টাকা দেয়া হয়। সাপোর্ট সার্ভিসেস ফর ভালনারেবল গ্রুপ (এসএসভিজি) প্রকল্পের মাধ্যমে মোট ৬০ হাজার জনকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
১৯৭২ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশে স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় নামে যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৯ সালে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় একক নামে সম্পূর্ণ পৃথক মন্ত্রণালয় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
গত বছরের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। বর্তমানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। তিনি ২০২৪ সালের ৯ আগস্ট দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় জনগণের কল্যাণে একাধিক কার্যকর ও ফলপ্রসূ কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছে।
চা-শ্রমিকদের সহায়তা: চা-শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জন প্রতি ৬ হাজার টাকা হারে ভাতা দেয়া হয়। যা ৬০ হাজার শ্রমিকের মধ্যে ৩৬ দশমিক ২৬ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়।
একই সময়ে জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে গৃহহীন চা-বাগান শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে টেকসই আবাসন নির্মাণের লক্ষ্যে অনুমোদিত মডেল অনুযায়ী চা-বাগান অধ্যুষিত জেলাগুলোতে ৬৫টি গৃহহীন পরিবারকে আবাসন নির্মাণের জন্য ২ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়।
বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী নিগৃহিতা ভাতা: ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে ‘বয়স্কভাতা’ কর্মসূচি প্রবর্তন করা হয়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৬০ দশমিক ১ লাখ মানুষকে মাসিক ৬০০ টাকা হারে ভাতা প্রদান করা হয়। যার মোট বরাদ্দ ৪ হাজার ৩৫০ দশমিক ৯৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলাদের মাসিক ৫৫০ টাকা হারে ২৭ দশমিক ৭৫ লাখ ভাতা দিয়েছে সরকার। যা ২৪-২৫ অর্থবছরে দেয়া হয় ১ হাজার ৮৪৪ দশমিক ৩২ কোটি টাকা।
প্রতিবন্ধী জনগণের সহায়তা: অন্যান্য নাগরিকদের সঙ্গে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমসুযোগ ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ২৪-২৫ অর্থবছরে ৩২ দশমিক ৩৪ লাখ প্রতিবন্ধীর মধ্যে ৩ হাজার ৩২১ দশমিক ৭৭ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়। যার মাসিক ভাতার পরিমাণ ছিল জন প্রতি ৮৫০ টাকা। সেই সঙ্গে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় আগ্রহী এবং উচ্চ শিক্ষার লক্ষ্যে ২৪-২৫ অর্থবছরে ১ লাখ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে ভাতা দেয়া হয়। যার জন্য বরাদ্দ ছিল ১১৩ দশমিক ৭১ কোটি টাকা। যেখানে মাসিক ভাতা হিসেবে প্রাথমিক স্তর ৯০০ টাকা, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে ৯৫০ টাকা এবং উচ্চতর স্তরে ১৩০০ টাকা করে দেয়া হয়। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ক্রীড়াবিদদের জন্য ক্রীড়া কমপ্লেক্স স্থাপনের জন্য সাভার উপজেলার বারইগ্রাম ও দক্ষিণ রামচন্দ্রপুর মৌজার ১২ দশমিক ১ একর জমিতে ৪৮৬ দশমিক ৭৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণ কার্যক্রম চলমান আছে। ঢাকাস্থ সংসদ ভবনের পশ্চিম পাশে শহীদ ফারহান ফাইয়াজ খেলার মাঠের জন্য ৪ দশমিক ১ একর জমি সরকার কর্তৃক বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। এ মাঠে প্রতিবন্ধী শিশু কিশোরদের জন্য খেলাধুলার আয়োজন করে কর্মমুখর রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
হিজড়া জন গোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়ন কর্মসূচি: হিজড়া জন গোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়নে সারাদেশে ১৪ হাজার ১২৯ জনকে সহায়তা করা হয়েছে। যার মধ্যে বিশেষ ভাতা পেয়েছে ১২ হাজার ২২৯ জন এবং শিক্ষাবৃত্তি ভাতা পেয়েছেন ৪০০ জন এবং বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ ১৫০০ জন।
বেদে জনগণের জন্য সহায়তা: পিছিয়ে পড়া বেদে জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূল স্রোতের ধারায় সম্পৃক্ত করতে বিশেষ ভাতা ও শিক্ষাবৃত্তির পাশাপাশি কর্মক্ষম বেদে জনগোষ্ঠীর দক্ষতা বৃদ্ধি ও আয় বর্ধনমূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করতে বিভিন্ন বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হয়েছে। এতে ২৪-২৫ অর্থবছরে মোট ১০ হাজার ৮৯৮ জনকে সহায়তা করা হয়েছে। এদের মধ্যে বিশেষ ভাতা প্রাপ্ত ৫ হাজার ৬০০ জন, শিক্ষা উপবৃত্তি ৪ হাজার ৩৯৮ জন এবং বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের আওতায় ৯০০ জন।
অনগ্রসর জনগোষ্ঠীদের সহায়তা: সমাজসেবা অধিদপ্তরের জরিপ মতে, বাংলাদেশে অনগ্রসর জনগোষ্ঠী যেমন জেলে, সন্ন্যাসী, ঋষি, বেহারা, নাপিত, ধোপা, হাজাম ইত্যাদি প্রায় ১৪ লাখ ৯০ হাজার। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এসব জনগোষ্ঠীকে বিশেষ ভাতা ৬০ হাজার জন, শিক্ষা উপবৃত্তি ২৮ হাজার ৯১২ জন এবং বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ ১ হাজার ৯২০ জনকে দেয়া হয়। যা মোট উপকৃতের সংখ্যা ৯০ হাজার ৮৩২ জন।
ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান: ভিক্ষাবৃত্তির মত অমর্যাদাকর পেশা থেকে মানুষকে নিবৃত্ত করার লক্ষ্যে ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য ‘ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান’ শীর্ষক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। সমাজসেবা অধিদফতর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩ হাজার জনের অনুকূলে বিতরণের জন্য ১২ কোটি টাকা বরাদ্দ করে। পাশাপাশি বাংলাদেশ জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ থেকে ভিক্ষাবৃত্তি নিরসন ও পুনর্বাসনের জন্য ৫০ লাখ টাকা অনুদান প্রদানের মাধ্যমে ১২০ জন ভিক্ষুককে পুনর্বাসন করা হয়।
জাতীয় পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানকে অনুদান: বাংলাদেশ জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদের স্বীকৃতি প্রাপ্ত জাতীয় পর্যায়ের ২১টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ১ কোটি টাকা অনুদান প্রদান করা হয়।
নিবন্ধিত সাধারণ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে অনুদান: ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ ৪ হাজার ৫৩৩টি নিবন্ধিত সাধারণ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের অনুকূলে মোট ১১ কোটি টাকা অনুদান প্রদান করে।
মানবসম্পদ উন্নয়নে সমন্বয় পরিষদ, শহর সমাজসেবার অনুকূলে অনুদান: জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ থেকে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ৮০টি সমন্বয় পরিষদের অনুকূলে ২ কোটি টাকা অনুদান প্রদান হয়।
দুঃস্থ, অসহায়, গরীব ও প্রতিবন্ধী রোগীদের চিকিৎসার জন্য রোগীকল্যাণ সমিতিকে অনুদান: ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ থেকে ৫৩০টি রোগীকল্যাণ সমিতির অনুকূলে ২২ কোটি টাকা অনুদান দেয়া হয়।
অপরাধী সংশোধন ও পুনর্বাসন: ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ থেকে ৬৩টি অপরাধী সংশোধন ও পুনর্বাসন সমিতির অনুকূল মোট ৬৪ লাখ টাকা অনুদান প্রদান করা হয়েছে।
জেলা ও উপজেলা সমাজকল্যাণ কমিটিকে অনুদান: ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ থেকে ৬৪টি জেলা সমাজকল্যাণ কমিটির অনুকূলে মোট ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা অনুদান প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া ৪৯২টি উপজেলা সমাজকল্যাণ কমিটির অনুকূলে ৩ কোটি টাকা অনুদান প্রদান করা হয়েছে।
ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়নে এককালীন সহায়তা: ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ থেকে ১০ হাজার জন ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়নে মোট ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা অনুদান প্রদান করা হয়।
নদীভাঙ্গনে ভিটামাটিহীন বা ক্ষতিগ্রস্ত ও বস্তিবাসীদের পুনর্বাসনে গৃহ নির্মাণ: ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ থেকে নদীভাঙ্গনে ভিটামাটিহীন বা ক্ষতিগ্রস্ত ও বস্তিবাসীদের পুনর্বাসনকল্পে ১৩১টি গৃহ নির্মাণের জন্য মোট ৪ কোটি টাকা অনুদান প্রদান করা হয়।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে সহায়তা: ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ থেকে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য সারাদেশে মোট ১ কোটি টাকা অনুদান প্রদান করা হয়।
বিশেষ অনুদান: সমাজকল্যাণ পরিষদ ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে বিশেষ অনুদান বাবদ ১৭ কোটি টাকা অনুদান প্রদান করে। এছাড়াও ৩ হাজার ২৪৯ জন গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীকে শিক্ষা সহায়তা প্রদান করা হয়।
প্রশিক্ষণ কর্মসূচি: ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ‘সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রমে কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়ন’ কর্মসূচির আওতায় ২২টি কোর্সে ৮০৪ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। যার মধ্যে ৫৯৩ জন পুরুষ, ২০৩ জন নারী ও আটজন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তি রয়েছেন।
মাতা-পিতা বা অভিভাবকগণের প্রশিক্ষণ: এনডিডি সুরক্ষা ট্রাস্ট থেকে এনডিডি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু বা ব্যক্তিদের পিতা-মাতা বা অভিভাবকদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। এর আওতায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২৫০ জন অভিভাবককে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।
বিশেষ স্কুলের শিক্ষকবৃন্দের প্রশিক্ষণ: এনডিডি সুরক্ষা ট্রাস্ট থেকে এনডিডি বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২২০ জন বিশেষ স্কুলের শিক্ষককে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।
কেয়ারগিভার স্কিল ট্রেনিং কার্যক্রম: অটিজম ও এনডিডি শিশুর পিতা-মাতা বা অভিভাবকগণকে শিশুদের যত্ন ও পরিচর্যা, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ অধিকার সম্পর্কে সচেতন করার লক্ষ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কারিগরি সহযোগিতায় এনডিডি সুরক্ষা ট্রাস্ট কর্তৃক কেয়ার গিভার স্কিল ট্রেনিং নামে ৪৯৩ পৃষ্ঠার একটি প্রশিক্ষণ মডিউল প্রণয়ন করা হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১০০ জনকে কেয়ার গিভার প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
চিকিৎসা সহায়তা হিসেবে এককালীন অনুদান প্রদান: এনডিডি ব্যক্তিদের চিকিৎসা সহায়তা হিসেবে এনডিডি সুরক্ষা ট্রাস্ট হতে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩ হাজার ৮৪৭ জন এনডিডি ব্যক্তিকে ১০ হাজার টাকা করে চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সম্পাদিত বিশেষ কার্যক্রম: জিটুপি পদ্ধতিতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে চার কিস্তিতে ১ কোটি ২১ লাখ ৪৪ হাজার ৭৮২ জন উপকারভোগীর হাতে সরাসরি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে স্বচ্ছতার সাথে ৯ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। ভাতা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে উপকারভোগীর সর্বোচ্চ বার্ষিক গড় আয় ১০ হাজার টাকা হতে ৪৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করে ইতোমধ্যে পরিপত্র জারিপূর্বক ভাতাভোগী নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বেদে, হিজড়া, অনগ্রসর ও চা-শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রম সংক্রান্ত চারটি নীতিমালা একীভূত করে ‘অনগ্রসর জনগোষ্ঠীসমূহের জীবনমান উন্নয়ন’ শীর্ষক সমন্বিত নীতিমালা, ২০২৫ প্রণয়ন করা হয়েছে।
এছাড়া প্রতিবন্ধী ভাতা ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপবৃত্তি কার্যক্রম সংক্রান্ত দু’টি নীতিমালা একীভূত করে ‘প্রতিবন্ধী ভাতা ও শিক্ষা উপবৃত্তি কার্যক্রম’ শীর্ষক সমন্বিত নীতিমালা, ২০২৫ প্রণয়ন করা হয়েছে।
ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড, জন্মগত হৃদরোগ এবং থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীদের আর্থিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় আক্রান্ত ব্যক্তিগণকে সরাসরি অর্থ প্রদানের লক্ষ্যে এবারই প্রথম ৬৩৩ জনের মধ্যে সহায়তা প্রদান করা হয়। যা ৩০টি (১৯টি সরকারি ও ১১টি বেসরকারি) হাসপাতালের মাধ্যমে ৫৮ কোটি ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা ১১ হাজার টাকা। অর্থছাড়ের এক সপ্তাহের মধ্যে রোগীগণ অর্থগ্রহণ করেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছাত্র-জনতার জন্য সহায়ক উপকরণ যেমন: হইল চেয়ার, ট্রাই সাইকেল বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। আহত শিক্ষার্থী-জনতার জন্য মোবাইলভ্যান দিয়ে বাড়ির দোরগড়ায় সেবা প্রদানের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আহত ছাত্র-জনতার মধ্যে ১৯ জন ছাত্র-জনতাকে থেরাপি ভ্যানের মাধ্যমে ৭৬টি সেবা প্রদান করা হয়েছে। জুলাই আন্দোলনে গুরুতর আহত ও ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিদের মধ্যে প্রয়োজন অনুসারে জনপ্রতি ৫০ হাজার টাকা করে বিভিন্ন হাসপাতালে ১ কোটি ২৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত ছাত্র জনতাকে ঢাকা মহানগরীসহ ৬৪ জেলায় সরকারি ও বেসরকারী হাসপাতালে মোট ১১৮টি ইউনিট এবং উপজেলা পর্যায়ে ৪২০টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট ৬৩৮টি হাসপাতালে সমাজসেবা কার্যালয়ের মাধ্যমে ২৪৫৮ জন আহত ছাত্র জনতাকে চিকিৎসা সহায়তা বাবদ ২ কোটি ৯৯ লাখ ৯৩ হাজার ৫০ টাকা প্রদান করা হয়।
দেশের ৪ হাজার ২৭১টি ক্যপিটেশন গ্র্যান্টপ্রাপ্ত বেসরকারি এতিমখানার ১ লাখ ১৬ হাজার ৬৬৬ জন এতিমের মধ্যে জনপ্রতি মাসিক ২ হাজার টাকা করে সর্বমোট ২৮০ কোটি টাকা অনুদান প্রদান করা হয়।
বাস্তবায়নাধীন ৩৫ টি প্রকল্পের মধ্যে ১৭ টি প্রকল্পের কার্যক্রম বিভিন্ন মেয়াদে সম্পন্ন করা হয়।
প্রতিবন্ধীতা শনাক্তকরণ কর্মসূচির আওতায় প্রায় ৩৬ লাখ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে শনাক্ত করে সুবর্ণ নাগরিক কার্ড প্রদান হয়েছে।
কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট বিতরণের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকল্পে স্পেসিফিকেশন নির্ধারণপূর্বক হাসপাতালসমূহে সরাসরি ৪০ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়।
১৯টি শিশু পরিবারের আধুনিক অবকাঠামোগত সুবিধাদি সৃষ্টির মাধ্যমে প্রায় ২ হাজার ৫০০ নিবাসীর উন্নত আবাসন সুবিধা প্রদান করা হয়।
অনুদান আবর্তক সহায়তা কার্যক্রমের আওতায় চারটি নতুন সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র অনুমোদন। প্রতি কেন্দ্রে ১০০ জন বালক ও ১০০ জন বালিকা রয়েছে।
মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প ও কার্যক্রমসমূহ নিয়মিত পরিবীক্ষণের জন্য পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন অনুবিভাগ বা অধিশাখা স্থাপন করা হয়।
ইন্টার্নশিপ নীতিমালা-২০২৩-এর আওতায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন অনুবিভাগ বা অধিশাখা বা শাখা এবং অধীনস্থ দপ্তরে চার মাস মেয়াদে ১২ জন ছাত্র বা ছাত্রীকে ইন্টার্নশিপ প্রদান করা হয়।
অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত ৩০০ জন কিশোর-কিশোরীকে কর্মমুখী ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নানামুখী প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য কোডেস্ট ট্রাস্ট ও ইউসেফ’র সঙ্গে এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়।
আটটি প্রবীণ নিবাসে ২৫ জন করে প্রবীণ ব্যক্তির উন্নতর বসবাসের জন্য স্থাপনা নির্মাণ ও আসবাবপত্র সংযোজন করা হয়।
দগ্ধ, আহত ও প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন নীতিমালা, ২০২৫ প্রণয়ন করা হয়।
‘জুলাই কন্যারা আমরা তোমাদের হারিয়ে যেতে দেবো না’ শীর্ষক নারী সমাবেশের আয়োজন করা হয় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে।
জুলাই পুনর্জাগরণ ও লাখো কণ্ঠে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সারা দেশে ১ লাখ ৭২ হাজার নারী-পুরুষ শপথ গ্রহণ করেন।
দেশের বিভিন্ন স্থানে সমাজসেবা অধিদফতরের আওতাধীন ১ হাজার ৩১৪ টি গণমিলনায়তন কেন্দ্র পুনঃউদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে যেগুলো দলিলায়ন হয়েছে সেগুলো রেকর্ডভুক্তকরণ এবং বাকিগুলো দলিলায়ন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
রোগী কল্যাণ সমিতিকে সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে যাকাত মেলার আয়োজন করা হয়েছে এবং ৮৫ লাখ টাকা অনুদান সংগ্রহ করা হয়েছে।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়। এ বছর জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন থেকে ৫০ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মেধাবী শিক্ষার্থীদের প্রত্যেককে ৮ হাজার টাকা টাকা করে মোট ৪ লাখ টাকা অনুদান ও সম্মাননা সনদ প্রদান করা হয়।
দেশব্যাপী ১০৩ টি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রর মাধ্যমে বিনামূল্যে ৬ লাখ ৯১ হাজার ৪৫০টি প্রাথমিক থেরাপি সেবা প্রদান করা হয়।
ভ্রাম্যমাণ ৪৫টি ওয়ান স্টপ থেরাপি সার্ভিস (মোবাইল ভ্যানের মাধ্যমে) বিনামূল্যে ৬৪ হাজার ৫৯৫ জনকে থেরাপি সেবা প্রদান করা হয়।
১০৩টি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের মাধ্যমে ৫ হাজার ৮৪০ টি সহায়ক উপকরণ (কৃত্রিম অঙ্গ, হুইল চেয়ার, ট্রাইসাইকেল, ক্রাচ, স্ট্যান্ডিং ফ্রেম, ওয়াকিং ফ্রেম, সাদাছড়ি, এলবো ক্রাচ, আয়বর্ধক উপকরণ হিসেবে সেলাই মেশিন) প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়।
৭৪ টি বিশেষ স্কুলের শিক্ষক বা কর্মচারীদের শতভাগ বেতন ভাতা জাতীয় বেতনস্কেল ২০১৫ অনুযায়ী প্রদান করা হয়।
দেশের মোট ১২টি স্কুল ফর চিলড্রেন উইথ অটিজমের মাধ্যমে মোট ১৬০ জন অটিজম সমস্যাগ্রস্ত শিশুকে বিনামূল্যে লেখাপড়ার সুযোগ করে দেয়া হয়।
অটিজম রিসোর্স সেন্টারের মাধ্যমে বিনামূল্যে ১ হাজার ৮৯০টি অটিজম সমস্যাগ্রস্ত শিশু ও ব্যক্তিকে ম্যানুয়াল ও ইন্সট্রুমেন্টাল থেরাপি সার্ভিস প্রদান করা হয়।