রংপুর, ১৪ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : টানা কয়েকদিনের ভারি বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে তলিয়ে যাচ্ছে বিস্তীর্ণ এলাকা।
এতে করে জেলার গংগাচড়া, কাউনিয়া এলাকার নিচু ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে এবং নিম্নাঞ্চলের শাক, সবজি, রোপা আমনসহ বীজতলা তলিয়ে গেছে। এসব উপজেলার কয়েকহাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।
গতকাল বুধবার সকাল ১০ টায় বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, ডালিয়া ডিভিশনের উপসহকারী প্রকৌশলী (পানি শাখা) তহিদুল ইসলাম।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং সকাল ৯ টায় ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ডালিয়ায় তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায়, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তিস্তার পানি হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় পানিতে ডুবে গেছে বসতবাড়ি, গবাদিপশুর চারণভূমি পানিতে ডুবে যাওয়ায় পশু খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। এতে কয়েকহাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
বিশেষ করে রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলার নোহালী, আলমবিদিতর, কোলকোন্দ, লক্ষ্মীটারী, গজঘন্টা ও মর্ণেয়া ইউনিয়ন, কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া, টেপামধুপুর ইউনিয়ন এবং পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নে তিস্তার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল, চর, দ্বীপচরের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। ইতিমধ্যে পানিবন্দী মানুষ উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।
এদিকে, গঙ্গাচড়া মহিপুরে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত সড়ক সেতুর পশ্চিম তীরে সেতু রক্ষা বাঁধের প্রায় ৭০ মিটার এলাকা ধসে পড়েছে। যার কারণে বাঁধে প্রায় ৭০ ফুট গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রবল স্রোতে ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে লালমনিরহাট, রংপুর সড়ক সহ পার্শ্ববর্তী হাজারেরও বেশি পরিবারের বসতবাড়ি। ভাঙন ঝুঁকিতে থাকায় বাঁধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া না হলে পুরো বাঁধ ভেঙে গিয়ে সেতু ও যোগাযোগ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
মহিপুর এলাকার বাসিন্দা আব্বাস আলী বলেন, এর আগের দুই বারের বন্যায় বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তা রক্ষণাবেক্ষনে কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এবার নদীতে পানি আসা মাত্রই বাঁধের ৭০ মিটার জায়গা ধসে গিয়ে বিশাল গর্ত হয়েছে। অথচ এখনো পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো উদ্যোগ চোখে পরেনি।
লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, আগের দুইবার বন্যায় বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমরা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলাম, কিন্তু তারা পদক্ষেপ নেয়নি। এবারও প্রবল স্রোত বাঁধে আঘাত হানছে, আরও বৃষ্টি হলে বাঁধ ভেঙে যেতে পারে। বাঁধ ভেঙে গেলে তখন পানি সরাসরি লালমনিরহাট ও রংপুরের সড়কে আঘাত করবে, এতে করে কয়েকলাখ মানুষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হবে। পাশাপাশি তিনটি গ্রামের অন্তত দেড় হাজার পরিবার সরাসরি ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
গঙ্গাচড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, বন্যায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আজকে সরেজমিন পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা করে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে।