//এনামুল হক এনা//
পটুয়াখালী, ২০ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : জেলা সদরের সাথে তিন উপজেলার মানুষের সড়কপথে একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম 'পটুয়াখালী-বাউফল' আঞ্চলিক সড়ক। এমন বাস্তবতায় কালাইয়া ও নওমালা ভাঙা ব্রিজ থেকে শৌলা পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার সড়ক জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে শতাধিক গর্ত। এসব গর্তে বৃষ্টির পানি জমে নালা, ডোবা তৈরি হয়েছে। এতে প্রায় প্রতিদিন দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছেন হাজারো যাত্রী।
বাউফল, দশমিনা ও গলাচিপা উপজেলার প্রায় ১৫ লাখ মানুষের নিয়মিত চলাচলের এ সড়ক দিয়ে ঢাকাগামী বাসসহ সব ধরনের যানবাহন বগা হয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে চলাচল করে। শুধু তাই নয়,ব্যস্ততম এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিনই অটোরিকশা, মাহিন্দ্রা, নসিমন, করিমন, মোটরসাইকেল, ট্যাক্সি, বাস, ট্রাকসহ অসংখ্য যানবাহন চলাচল করে।
কিন্তু সড়কে বড় বড় গর্তের কারণে প্রায়ই যানবাহন মাঝপথে আটকে যায়। যাত্রীদের বাস থেকে নেমে কিংবা পরিবহন থেকে নেমে গর্ত পেরিয়ে আবার বাসে উঠতে হয়। সম্প্রতি মালবাহী ট্রাক ও চেয়ারম্যান পরিবহনের বাসসহ একাধিক যানবাহন আটকে পড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি সড়কের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা সোলাবুনিয়া ও ছিদ্দিকের বাজারে একই বাস দুইবার আটকে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এ অবস্থায় অনেক পরিবহন চালক বিকল্প পথে ৩০-৪০ কিলোমিটার ঘুরে গন্তব্যে পৌঁছাতে বাধ্য হচ্ছে। এতে সময় অপচয়ের সাথে খরচ হচ্ছে অতিরিক্ত জ্বালানিও।
স্থানীয়দের অভিযোগ, অটো রিক্সা, মালবাহী ট্রাক, অটো বাইক প্রায়ই দুর্ঘটনার স্বীকার হচ্ছে। গর্তে পড়ে গাড়ি উল্টে গিয়ে অনেক যাত্রীদের হাত-পা ভেঙে গেছে।
অতি সম্প্রতি আসুরীহাট বাজার এলাকার একটি বড় গর্তে পানি জমে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে স্থানীয়রা সেখানে নৌকা ভাসিয়ে অভিনব প্রতিবাদ জানান, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ভাইরাল হয়। স্থানীয় যুবক রুমেন সিকদার ওই নৌকা ভাসিয়ে সড়কের দুর্ভোগ নিয়ে ভিডিও নির্মাণ করেন।
পরিবহন যাত্রী জসিম উদ্দীন অন্তু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ঢাকা যেতে পথে তিনবার বাস থেকে নেমেছি। এখন আবার আটকে আছি। কখন পৌঁছাবো, কোনো নিশ্চয়তা নেই। অন্তত ইট ফেলে গর্ত ভরাট করলেও দুর্ঘটনা কিছুটা কম হতো। আমরা এ দুর্ভোগ থেকে স্থায়ী সমাধান চাই।’
অটোচালক আবদুর রহিম জানান, নিজস্ব অর্থায়নে অনেকগুলো গর্ত ইট দিয়ে ভরাট করেছেন তারা। কিন্তু বর্ষায় নতুন গর্ত সৃষ্টি হচ্ছে, আর পুরনো ভরাট গর্তের ইট উঠে যাচ্ছে। ফলে যেই লাউ সেই কদু। কোনো কাজেই আসছে না চেষ্টা।
পরিবহন যাত্রী রাসেল মিয়া বলেন, এই সড়কের বাজে অবস্থার জন্য একমাত্র দায়ী বড় বড় অবৈধ ট্রলি গাড়িগুলো। এই গাড়িগুলোকে প্রধান সড়কে উঠতে দেওয়া যাবে না। বিকল্প চিন্তা করতে হবে প্রশাসনের।
তবে এলাকাবাসী বলছে, প্রায় এক বছর আগে এলজিইডি তত্ত্বাবধানে সড়কটি সংস্কার করা হলেও নিম্নমানের কাজ, অনিয়ম আর দুর্নীতির কারণে কিছুদিনের মধ্যেই পিচ উঠে গিয়ে গর্ত সৃষ্টি হয়। এমনকি সেই গর্ত বৃষ্টির পানি জমে পুকুর হয়ে গিয়েছে।
স্থানীয়দের দাবি, পটুয়াখালী-বাউফল সড়কটি এলজিইডি থেকে রোডস অ্যান্ড হাইওয়েতে হস্তান্তর করে জরুরি ভিত্তিতে পুনর্নির্মাণ করতে হবে। নইলে অচিরেই এ সড়কে স্থায়ীভাবে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। দুর্ভোগে পড়তে হবে তিন উপজেলার ১৫ লাখ মানুষকে।
এ বিষয়ে জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হোসেন আলী মীর বলেন, “ওই সড়কটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সংস্কারের জন্য ইস্টিমেট করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। তবে যেসব স্থানে বেশি খানাখন্দ, দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে সেসব স্থানে আমাদের লোকাল ফান্ডের মাধ্যমে এ সপ্তাহেই কিছু কাজ করবো। আর টেন্ডার শেষ হতে ২ মাস সময় লাগবে।