ঢাকা, ২৫ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস): রোহিঙ্গা সংকটের দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই সমাধানের ওপর জোর দিয়েছে ঢাকায় বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক মিশন।
সোমবার এসব মিশন যৌথ এক বিবৃতিতে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অবস্থানকালে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অর্থপূর্ণ সম্পৃক্ততা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের আট বছরপূর্তিতে ঢাকায় কানাডার হাই কমিশন, অস্ট্রেলিয়ার হাই কমিশন, ব্রিটিশ হাই কমিশন, ডেনমার্কের দূতাবাস, নরওয়ের দূতাবাস, সুইজারল্যান্ডের দূতাবাস, সুইডেনের দূতাবাস, নেদারল্যান্ডসের দূতাবাস, ইতালির দূতাবাস এবং নয়াদিল্লিস্থ ফিনল্যান্ডের দূতাবাস যৌথভাবে এ বিবৃতি দিয়েছে।
বিবৃতিতে মিশনগুলো বলেছে, আট বছর পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়ে সংকটের দীর্ঘমেয়াদি সমাধান এবং এর মূল কারণগুলো নিরসনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বাংলাদেশের ভূমিকা ও সহনশীলতার স্বীকৃতি
বিৃবতিতে মিশনগুলো রোহিঙ্গাদের বাস্তুচ্যুতির সময় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর কর্মকাণ্ড স্মরণ করে জানায়, বর্তমানে বাংলাদেশে ১৩ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। এখনো নতুন করে আরো রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিচ্ছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা রোহিঙ্গাদের দৃঢ়তা ও সহনশীলতাকে সাধুবাদ জানাই, যারা দীর্ঘদিন ধরে কঠিন বাস্তবতা ও বাস্তুচ্যুতি সহ্য করে চলেছেন। বিশেষ করে রাখাইন রাজ্যের বর্তমান নিরাপত্তা ও মানবিক পরিস্থিতির অবনতির মধ্যেও তারা দৃঢ়তা দেখিয়ে যাচ্ছেন।
মিশনগুলো বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এবং সাধারণ মানুষের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেছে, তারা রোহিঙ্গাদের, বিশেষ করে নতুন করে আসা শরণার্থীদেরও আশ্রয় ও নিরাপত্তা এবং জীবন রক্ষাকারী মানবিক সহায়তা দিচ্ছেন।
প্রত্যাবাসনে বাধা
বিবৃতিতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হয়। তবে সতর্ক করা হয়, এখনো সীমান্ত পেরিয়ে বাস্তুচ্যুতি অব্যাহত রয়েছে। অনেক রোহিঙ্গা এখনো রাখাইনে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত এবং মিয়ানমারে এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছে, যা রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদে, সম্মানের সঙ্গে ও স্থায়ীভাবে প্রত্যাবাসনের উপযোগী নয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের উপযুক্ত পরিবেশ তখনই হবে, যখন তাদের বাস্তুচ্যুতির মূল কারণগুলো সমাধান করা হবে। আর এর জন্য মিয়ানমারে শান্তি ও স্থিতিশীলতা আবশ্যক।
মিশনগুলো মনে করে, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য এখন নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। তাই সব পক্ষকে প্রত্যাবাসনের একটি সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সহযোগিতার অনুরোধ জানিয়েছে মিশনগুলো।
জবাবদিহিতা নিশ্চিতের আহ্বান
বিবৃতিতে মিয়ানমারে সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের তীব্র নিন্দা জানিয়ে ‘সকল সহিংস কর্মকাণ্ডের অবসান এবং মানবিক সহায়তায় নিরাপদ ও অবাধ প্রবেশাধিকারের’ আহ্বান জানানো হয়।
তারা সামরিক জান্তার কাছে অন্যায়ভাবে আটককৃতদের মুক্তির আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে বলেছে, আমরা আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন এবং অন্যান্য গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জবাবদিহিতা নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকে সমর্থন দিতে দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
অগ্রগতির পথ
বিবৃতিতে বলা হয়, মিয়ানমারের পরিস্থিতি ও বাংলাদেশের চলমান মানবিক সংকটের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সরকারের সঙ্গে কাজ করে যাবে। বিশেষ করে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠেয় উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এক সঙ্গে কাজ করবে।
মিশনগুলো রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য টেকসই সমাধাননের লক্ষ্যে রোহিঙ্গাদের আত্মনির্ভরশীলতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করা এবং রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠীকেও সহায়তা দিয়ে যাব, যারা উদারভাবে শরণার্থীদের আতিথেয়তা জানাচ্ছেন।