চট্টগ্রাম, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : বর্তমানে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পরিমাণ ২১ লাখ ৩১ হাজার টন খাদ্যশস্য মজুত রয়েছে। সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, ওএমএস এর মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠির কাছে স্বল্প মূল্যে চাল বিক্রি ও ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু হওয়ায় তিন মাস পর চট্টগ্রামে পাইকারি বাজারে চালের দাম কমতে শুরু করেছে। ইিমধ্যে মানভেদে কেজিতে কমেছে পাঁচ থেকে আট টাকা।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে সরকারিভাবে ১৯ লাখ ৫৪ হাজার টন চাল এবং ১ লাখ ৭৭ হাজার টন গম মজুদ রয়েছে। ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদে আরও ৫ লাখ টন চাল এবং ৪ লাখ টন গম আমদানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ ও পাহাড়তলীতে পাইকারি দরে চাল বিক্রি হয়। সেখানকার ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, কম্বোডিয়া, পাকিস্তান, ভারত ও মায়ানমারসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করে সরকার সর্বোচ্চ পরিমাণ খাদ্যশস্য মজুদ করেছেন। কিন্তু মিলার ও কর্পোরেট চাল ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়িয়ে দেন। এতে চালের বাজারের অস্থিরতা সৃষ্টি হয়।
সম্প্রতি সরকার চাল আমদানির অনুমতি দেওয়ায় ভারত থেকেও স্থলবন্দর দিয়ে প্রচুর পরিমাণে চাল আসছে। দরিদ্র মানুষের নাগালে রাখতে সরকারের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচিও দাম কমার ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। বর্তমানে চার ধরণের চালের দাম কেজিতে পাঁচ থেকে আট টাকা কমেছে। সরকারের খাদ্যপণ্য মজুদ ও খাদ্য বান্ধব নানা কর্মসূচি অব্যাহত থাকায় চালের দাম সহসা আর বাড়বে না বলেও জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা জানান, মূলত গত জুন মাসের মাঝামাঝি থেকে চড়া হতে শুরু করে চালের দাম। তবে চট্টগ্রামে গত জুলাই মাসের শেষদিকে পাইকারিতে আরও অস্থির হয়ে পড়ে চালের বাজার। সে সময় প্রতি কেজি চালে দুই থেকে আট টাকা পর্যন্ত বাড়ে। বর্তমানে কেজিতে কমেছে পাঁচ থেকে আট টাকা। এক মাসের ব্যবধানে বর্তমানে পাইকারি বাজারে কেজিতে তিন টাকা কমে জিরা শাইল ৭১ টাকা, গুটি স্বর্ণা ৫৪ টাকা ও কাটারি আতপ ৭৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কেজিতে চার টাকা কমে প্রতি কেজি বেতি আতপ ৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া পাইকারিতে প্রতি কেজি নাজির শাইল মিনিকেট ৫৭ টাকা, মোটা সেদ্ধ চাল ৪৯ টাকা ও নুরজাহান স্বর্ণা ৫৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চালের দামের বিষয়ে জানতে চাইলে পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম নিজাম উদ্দিন দাবি করেন, উত্তরবঙ্গের মিলারদের কারসাজিতে চালের দাম কয়েক মাস ধরে বাড়তি ছিল। এখন দাম অনেকটাই নিম্নমুখী। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে চাল আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু আগস্টের মাঝামাঝিতে আবার চাল আমদানি হচ্ছে। সবমিলিয়ে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দেশের মানুষের প্রধান খাদ্যপণ্যটির দাম কমতে শুরু করেছে। আশা করছি, চালের দাম আর বাড়বে না।
আজ মঙ্গলবার চট্টগ্রাম নগরীর খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজার, আসকারদীঘির পাড় কাঁচাবাজার এবং মোমিন রোডের বিভিন্ন ভ্রাম্যমাণ দোকানে চালের দর যাচাই করে দেখা গেছে, পাইকারি পর্যায়ে মোটা, মাঝারি ও সরু চালের দাম বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। কেজি দরে এই কমার হার পাঁচ থেকে আট টাকা। মিনিকেট চাল কেজি প্রতি ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, আটাশ বালাম ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা, স্বর্ণা মোটা ৫০ থেকে ৫৬ টাকা, নাজির শাইল ৮০ থেকে ৮৫ টাকা, বাসমতী ৯৫ থেকে ১০০ টাকা এবং চিনিগুঁড়া ১০০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। তবে খুচরা বাজারে এখনও দাম বেশি। মিনিকেট চাল কেজিপ্রতি ৭৮ থেকে ৮৫ টাকা, আটাশ বালাম ৭০ থেকে ৭৫ টাকা, নাজির শাইল ৮৫ থেকে ৯০ টাকা, স্বর্ণা মোটা ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, পাইজাম ৬২ থেকে ৬৫ টাকা, বাসমতী ৯৫ থেকে ১২০ টাকা এবং চিনিগুঁড়ার প্যাকেট ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
চট্টগ্রাম ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ বলেন, আমরা বাজার পর্যবেক্ষণ করছি। যদি দেখা যায় খুচরা পর্যায়ে অযৌক্তিকভাবে দাম ধরে রাখা হয়েছে, তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চাক্তাইয়ের পাইকারি আড়তদার নুর হোসেন জানান, এপ্রিলের মাঝামাঝিতে বিদেশ থেকে চাল আমদানি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আগস্টের মাঝামাঝি থেকে আবার আমদানি শুরু হয়েছে। এজন্য পাইকারিতে দাম কমতে শুরু করেছে। সপ্তাহখানেকের মধ্যে খুচরায়ও এর প্রভাব পড়বে বলে তিনি জানান।
ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) চট্টগ্রামের সহকারি পরিচালক মো. কবির হোসেন বলেন, চট্টগ্রামে ৪ লাখ ১১ হাজার ৭৩টি স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে প্রতি পরিবার সপ্তাহে ৩০ টাকা দরে পাঁচ কেজি করে চাল পাচ্ছে। এছাড়া খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির মাধ্যমে ১৫ টাকা দরে ৩ কেজি চাল পাচ্ছে উপকারভোগীরা। ট্রাক সেলের মাধ্যমে ২ কেজি ডাল, ২ লিটার তেল ও ১ কেজি চিনি ৪৬০ টাকার প্যাকেজে পাচ্ছেন ভোক্তারা। সরকারের এসব কর্মসূচির কারণে বাজারে প্রভাব পড়ছে বলেও জানান তিনি।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চালের বাজার অস্থির ছিল। এবার ভরা মৌসুমেও নানা কারসাজিতে পণ্যটির দাম বেড়ে যায়। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। মানুষকে অন্তত ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। চালের দাম যাতে আর না বাড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পাশাপাশি বাজার তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।