ঢাকা, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : গণমাধ্যম কর্মীদের সুরক্ষা, অধিকার আদায় ও পেশার নিশ্চয়তার লক্ষ্যে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ রিভিউ করার দাবি জানিয়েছে সাংবাদিকগণ।
আজ শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) শফিকুল কবির মিলনায়তনে ডিআরইউ ও জার্নালিস্ট কমিউনিটি অব বাংলাদেশ এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ পর্যালোচনা ও করণীয়’ শীর্ষক গোল টেবিল বৈঠকে বক্তারা এ দাবি জানান।
তারা ‘নো ওয়েজ বোর্ড নো মিডিয়া’ নীতি কার্যকর করা এবং সর্বনিম্ন মাসিক বেতন ৩৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করার পরামর্শও দিয়েছেন। পাশাপাশি প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক- সব মিডিয়ার জন্য ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন করার তাগিদ দিয়েছেন।
ডিআরইউ সভাপতি আবু সালেহ আকনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল-এর সঞ্চালনায় গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম।
অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জার্নালিস্ট কমিউনিটির সদস্য সচিব মো. মিয়া হোসেন।
এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আবদুল্লাহ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি, ওবায়দুর রহমান শাহীন, ডিআরইউ’র সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, ডিবিসি নিউজের সম্পাদক একরামুল হক ভূঁইয়া (লোটন একরাম), ঢাকা মেইল ডটকম এর নির্বাহী সম্পাদক হারুন জামিল, ডিআরইউ’র সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ।
মোহাম্মদ শফিকুল আলম বলেন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে অনেক ভালো ভালো সুপারিশ রয়েছে। আর যেসব জায়গায় অসংগতি রয়েছে সেগুলোর নিয়ে সমালোচনা করা প্রয়োজন। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের যে ধারা তুলে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে তা থাকা প্রয়োজন। কেননা ধর্মীয় কারণে অনেক ভায়োলেন্স তৈরি হয়। এসব ভায়োলেন্স বন্ধ করার জন্য ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের শাস্তির বিধানটা থাকা প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেন তিনি ।
শফিকুল আলম আরো বলেন, নো ওয়েজ বোর্ড নো মিডিয়া নীতির সঙ্গে আমি একমত। এটি বাস্তবায়ন করার প্রয়োজন। এসময় তিনি প্রস্তাব করেন, মিডিয়া লাইসেন্স নিতে হলে অনলাইনের জন্য ১০ থেকে ১৫ কোটি, পত্রিকার জন্য ২০ কোটি ও টেলিভিশনের জন্য ২০-২৫ কোটি টাকা সিকিউরিটি হিসেবে সাংবাদিকদের জন্য সরকারের কল্যাণ তহবিলের কাছে জমা রাখা যেতে পারে, কেননা যখন হাউজ এবং সাংবাদিক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকবে তখন সাংবাদিকদের বেতন-ভাতা দেয়ার জন্য এ ব্যবস্থা কাজে আসবে।
‘যারা সম্পাদক হবেন তাদেরকে ইউনিয়ন থেকে পদত্যাগ করা উচিত’ - এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কারণ নেতৃত্বের জায়গা থেকে যিনি পত্রিকা বা মালিক হয়ে যায় সে সাংবাদিকদের দেখে না। সুতরাং এটি নীতি বিরুদ্ধ। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের অবশ্যই সার্টিফিকেশন থাকতে হবে। যেভাবে অপসাংবাদিকতা বেড়ে যাচ্ছে, নৈতিকতার না মেনে যেকোনো তথ্য প্রতিবেদন আকার ছড়িয়ে দিচ্ছেন তাতে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
প্রধান অতিথি আরো বলেন, সাংবাদিকরা কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতায় পড়লে এর দায়দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মিডিয়া মালিককে নিতে হবে। প্রয়োজনে মালিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ব্যবস্থাও রাখা যেতে পারে।
এসময় তিনি যে কোনো প্রতিবাদকে প্রতিবাদ হিসেবে দেখার জন্য এবং মবকে মব হিসেবে বলার জন্য সকলকে অনুরোধ করেছেন।
আন্তর্জাতিক ফিনটেক কোম্পানি নালা এর সহযোগিতায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে আরো বক্তৃতা করেন, ডিআরইউ’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন মাসুম, মসিউর রহমান খান, ডিআরইউ’র সহ-সভাপতি গাযী আনোয়ার, মানি ট্রান্সফার অ্যাপ নালা’র হেড অব গ্রোথ মাহমুদুর হাসান, ডিইউজে’র যুগ্ম সম্পাদক দিদারুল আলম, সিনিয়র সাংবাদিক হাফিজুল ইসলাম।
সভাপতির বক্তব্যে আবু সালেহ আকন বলেন, সাংবাদিকরা যতদিন পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ না হবে ততদিন পর্যন্ত সংস্কার কাজে আসবে না।
তিনি বলেন, আমাদের সাংবাদিকদের আমাদেরই ব্যবস্থা করতে হবে। যারা গণমাধ্যম আইনের সংস্কারে যুক্ত পর্যায়ে রয়েছেন তারা কি জানেন না সাংবাদিকদের কোথায় সমস্যা? তাহলে কি করেন এ ধরনের কাজ হয়। সুতরাং আমাদের সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজেদের অধিকার আদায়ে কাজ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের অধিকার আমাদের আদায় করে নিতে হবে। বিপ্লবের পরে মিডিয়ার কাঠামোগত কোনো পরিবর্তন হয়নি। সাংবাদিকরা এখনো মবের শিকার হচ্ছে। ডিএফপির অনিয়মের কারণে সমালোচনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। কিন্তু ব্যবস্থা নিচ্ছে না সরকার।
এম আবদুল্লাহ বলেন, ইউনিয়নের পাশাপাশি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, প্রেস ক্লাব ও অন্যান্য সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে সরকারের স্বীকৃতি দেওয়া দরকার। প্রবীণ সাংবাদিকদের ভাতার আওতায় আনতে হবে।
ওবায়দুর রহমান শাহীন বলেন, গণমাধ্যম কমিশন মূলত বিভিন্ন জেলায় পিকনিক করেছে। স্বচ্ছতা ও সত্যতার অনেক ঘাটতি রয়েছে তাদের রিপোর্টে। এই রিপোর্ট রিভিউ হওয়া দরকার।
মাইনুল হাসান সোহেল বলেন, যারা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত এবং পদধারী তারা সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিতে নৈতিকভাবে পারেন না।
সাখাওয়াত হোসেন বাদশা বলেন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনসহ সরকারের মিডিয়া বিষয়ক বিভিন্ন কমিটিতে ডিআরইউ’র প্রতিনিধি না থাকলে সত্যিকারের গণমাধ্যম সংস্কার হবে না। সাংবাদিক সুরক্ষা আইন যথাযথ হওয়া দরকার।
রফিকুল ইসলাম আজাদ বলেন আমাদের সাংবাদিকদের পেশা আজ ঝুঁকিতে পড়েছে। এই সংকটাপন্ন সময় থেকে আমাদেরকে মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে হবে।
এছাড়াও সাংবাদিকদের চিকিৎসা করতে এর জন্য আলাদা হাসপাতাল নির্মাণ ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসতে হবে।
মসিউর রহমান খান বলেন, মিডিয়ার সংখ্যা বাড়লেও কোনো সরকারই সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতে কোনো কাজ করে নাই। মালিকরা মিডিয়ায় বিনিয়োগ করে তাদের পুঁজির নিরাপত্তার জন্য।
লোটন একরাম বলেন, টিভি এবং অনলাইনকে ওয়েজবোর্ডের নীতিমালায় আনা দরকার। পত্রিকার সার্কুলেশনের মতো টিভির টিআরটির হাস্যকর।
হারুন জামিল বলেন, সাংবাদিকদের সপ্তাহে দুই দিন ছুটি দেয়া খুব জরুরি।
গাযী আনোয়ার বলেন, কমিশনের রিপোর্টে আদিবাসী অথবা উপজাতি কোনো শব্দই আসা উচিত নয়। সবাই বাংলাদেশি। আর সাংবাদিকদের হত্যা-নির্যাতনের বিচারের জন্য আলাদা কমিশন গঠন করতে হবে।
দিদারুল আলম বলেন, সাংবাদিকদের নির্দিষ্ট বেতন কাঠামো নেই। সাংবাদিকরা নেতিবাচক অবস্থার মধ্যে রয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতির আলোকে কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায় সে লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, অন্যদিকে সাংবাদিকদের আয়কর মালিকদের দেয়ার বিষয়ে আপিল বিভাগের রায় আছে। এটি বাস্তবায়ন করার দরকার। তাছাড়া মফস্বল সাংবাদিকদের বেতন কাঠামো বিষয়ে সুপারিশে বিস্তারিত আসা দরকার।