সীমানা পেরিয়ে কুমিল্লার কচুর লতি যাচ্ছে বিদেশে

বাসস
প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩:০৯
কচুর লতি. ছবি : বাসস

কামরুল হাসান

কুমিল্লা, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস): দেশের সীমানা ছাড়িয়ে কুমিল্লার কচুর লতি যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। জেলার বরুড়া উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হওয়া এ সবজির বাজার তৈরি হয়েছে দেশে-বিদেশে। প্রতিদিন ৮০ টনেরও বেশি লতি রপ্তানি হচ্ছে এ উপজেলা থেকে। 

মাসে আড়াই থেকে তিন লাখ ডলারের রপ্তানি বাণিজ্য ঘিরে উপজেলা জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে কর্মসংস্থান।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার আগানগর, ভবানীপুর, খোশবাস ও শিলমুড়ি ইউনিয়নসহ বরুড়ায় চলতি মৌসুমে কচু ও লতির চাষ হয়েছে ১০০ হেক্টরের বেশি জমিতে। স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যাপারীরা প্রতিদিনই বড়ুরা উপজেলার কৃষকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কচু ও লতি সংগ্রহ করছেন। উপজেলায় কচু আর লতিকে ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান।

দেশ, বিদেশে চাহিদা বাড়ায় এবং উৎপাদন খরচের তুলনায় লাভ বেশি হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে কচু চাষে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের। একবার রোপণ করলে বছরের ৯ মাস ফলন পাওয়া যায়।

তাই দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বরুড়ার সুস্বাদু লতি। এ সবুজ সবজির চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। তবে মধ্যস্বত্বভোগী থাকায় কৃষকদের লাভের একটি অংশ চলে যাচ্ছে, অভিযোগ করে কৃষকরা সরাসরি রপ্তানিকারকদের কাছে বিক্রির সুযোগ চেয়েছেন।

জানা গেছে, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পোকা দমন ও এ অঞ্চলের মাটি উর্বর হওয়ায় লতির গুণগত মানও ভালো। এ উপজেলায় উৎপাদিত লতির দৈনিক বাজার রয়েছে ৮০ টনেরও বেশি। টাকার অংকে যা ৩০-৩২ লাখ টাকা।

উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. গোলাম সারওয়ার ভূঁইয়া জানান, পরিচ্ছন্ন পরিবেশে লতির চাষ এবং জমিতে জিংক ব্যবহার করেন কৃষকরা। ফলে স্বাদ ভালো থাকার পাশাপাশি গলাও চুলকায় না।

কথা হয় বেশ কয়েকজন পানি কচু ও লতি চাষীর সঙ্গে। তারা জানান লতি চাষে আগ্রহী এখন বরুড়ার অনেক কৃষক। স্বল্প খরচ ও অধিক লাভের কারণে অনেকেই ঝুঁকছেন পানি কচু চাষে।

লতি চাষী আব্দুল মতিন জানান, চাষীদের এখন আর বাজারে যেতে হয় না। উপজেলায় অর্ধশতাধিক ব্যাপারী রয়েছে, তারাই কৃষকদের কাছ থেকে কেজিতে মোটা লতি ৪৫-৫০ টাকা, চিকন ২৫-৩০ টাকা দরে সংগ্রহের পর প্রতিদিন বিকেলে ট্রাকে করে ঢাকা-চট্টগ্রাম পাঠান। সেখান থেকে বাছাই করা লতি ও কচু কিনে বিদেশে পাঠাচ্ছে এজেন্সিগুলো। বাকিগুলো চলে যাচ্ছে বিভিন্ন আড়তে।

আরেক চাষী আরশাদ মিয়া জানান, পানি কচু আর লতির চাহিদা বেড়ে গেছে।  অনেকেই লতি চাষ শুরু করছে। আশপাশের উপজেলা, জেলা থেকেও চাষীরা কচুর চারা নিতে আসে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এখানে আরও বৃহৎ আকারে চাষ করা যাবে, এতে অধিক লাভবান হওয়ার সুযোগ হবে।

কয়েকজন সবজি রপ্তানিকারক জানান, বরুড়ায় উৎপাদিত এ পানি কচু ও লতি ঢাকায় প্যাকেটজাত হয়ে বিমানে বিশ্বের অন্তত ২৫টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি যাচ্ছে দুবাই, সৌদি আরব, কাতার, বাহরাইনসহ মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সব দেশে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের প্রায় সব দেশে যাচ্ছে লতি ও কচু। এখান থেকে মাসে অন্তত আড়াই থেকে তিন লাখ ডলার আয় করছে বাংলাদেশ।

জেলা কৃষি বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক শেখ আজিজুর রহমান জানান, পানি কচু ও লতির চাষাবাদ বেড়েছে। রপ্তানির কারণে ভালো দাম পাচ্ছে প্রান্তিক কৃষকরা। মাঠে এসেই পাইকাররা লতি সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে কৃষকদের পরিবহন খরচও কমে যাচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিসের পাশাপাশি জেলা কৃষি অফিসও সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রাখছে ও কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
চাঁদপুরে ৫৪'তম জাতীয় সমবায় দিবস উদযাপন
মার্কিন চাপের মুখে কলোম্বিয়ায় শান্তিরক্ষা সীমিত করার সিদ্ধান্ত জাতিসংঘের
পানামা খাল মামলা: স্প্যানিশ কোম্পানির বিরুদ্ধে জয় পেল পানামা
তানজানিয়ার প্রাথমিক ফলাফলে প্রেসিডেন্ট হাসানের নিরঙ্কুশ জয়ের ইঙ্গিত
রাজশাহীতে পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার ৯
খুলনা অঞ্চলে আমন ধান কাটা শুরু
রাজবাড়ীতে বর্ণাঢ্য আয়োজনে জাতীয় সমবায় দিবস পালিত
রেডক্রসের মাধ্যমে গাজা থেকে ৩টি অজ্ঞাত লাশের সন্ধান ইসরাইলের
পাকিস্তানে উৎসবের জন্য ভারতীয় শিখদের ভিসা
চুয়াডাঙ্গায় জাতীয় সমবায় দিবস পালিত
১০