আজাদ রুহুল আমিন
বাগেরহাট, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : আসন্ন সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় দুর্গা উৎসবকে ঘিরে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা বিধানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদা তৎপর। অসম্প্রদায়িক চেতনার দেশ হিসেবে পরিচিত হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ, খৃষ্টান, চাকমা, মারমা সম্প্রদায়ের এই দেশের সমতল পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষের জন্য রয়েছে সমান অধিকার। দুর্গা উৎসবকে ঘিরে বাগেরহাটে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছে।
বাগেরহাট জেলা প্রশাসন সূত্র থেকে জানা যায় ,এ বছর জেলায় ৬১৭ টি পূজামন্ডপে মৃত শিল্পিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। এছাড়া বাগেরহাট সদর উপজেলায় ১১২ টি, ফকিরহাট উপজেলায় ৬৮ টি, কচুয়া উপজেলায় ৪৪টি, মোল্লাহাট উপজেলায় ৮৬ টি, মোরেলগঞ্জ উপজেলায় ৭৩ টি, রামপাল উপজেলায় ৩৫টি, শরনখোলা উপজেলায় ২২টি, চিতলমারী উপজেলায় ১৪৩ টি, মোংলা উপজেলায় ৩৪ টি পুজামণ্ডপে হিন্দু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গাপূজার মুর্তি তৈরির ধুম পড়েছে। প্রতিবছর পূজামন্ডপ বাড়ছে এবং শেষ সময় পর্যন্ত আরও বাড়বে বলে আশাবাদী।
ইতোমধ্যে বাগেরহাটের নবাগত জেলা পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় দুর্গা উৎসব নির্ভিঘ্নে সম্পন্ন করতে উপজেলা জেলা পুজা উদযাপন কমিটির সাথে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে মতবিনিময় সভা করেছেন। সেখানে তিনি স্পষ্টত জানিয়েছেন, আসন্ন শারদীয় উৎসবকে নিয়ে কোন উদ্বেগ উৎকন্ঠার কারন নেই, প্রতিটি পূজামন্ডপে কঠোর নিরাপত্তা বিধানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সেনাবাহিনীসহ সকল গোয়েন্দা বাহিনী ততপর রয়েছে।
মণ্ডপে আগত দর্শনার্থীদের জন্য সকল ধরনের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে জেলা পুলিশ সুপার বাগেরহাটের ৯ টি উপজেলা ও ৩ টি পৌরসভায় সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। আলাদাভাবে প্রতিটি উপজেলায় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এলাকার সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক দল ও পুজা উদযাপন কমিটির সাথে ঘন ঘন বৈঠক করছেন।
বাগেরহাটে সদ্য আগমনরত জেলা পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পুজা অর্চনায় কোন ধরনের অপ্রিতিকর ঘটনা এড়াতে সতর্কবস্থায় রয়েছে যেখানে কোন নাশকতার আশংকা নেই। তিনি আরও বলেন, অন্যায়কারীকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়া হবেনা। তিনি পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের বাগেরহাট খুলনা, পিরোজপুর, মোল্লাহাট, চিতলমারী, ফকিরহাট হাইওয়ে সড়কে পুলিশের চেকপোস্ট বসিয়ে সন্দেহভাজনদের প্রবেশ রোধ ও ঘন ঘন টহল ব্যবস্থা জোরদার করতে সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশনা প্রদান করেন।
এদিকে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় বাগেরহাট জেলা প্রশাসক আহমেদ কামরুল হাসান সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পূজা উৎসবকে ঘিরে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন সদা তৎপর রয়েছেন বলেও দৃঢ় আস্থা ব্যক্ত করেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টায় বাগেরহাট জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক আহমেদ কামরুল হাসানের সভাপতিত্বে দুর্গাপূজা উদযাপন সংক্রান্ত একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও এ এস এম মোস্তাফিজুর রহমান বাসসকে জানান, এবার সদরে ১১২ টি পূজামন্ডপে শান্তিপূর্ণভাবে শারদীয় উৎসব পালিত হবে। তিনি অনেক মন্দির পরিদর্শন করেছেন। মৃত শিল্পিরা শেষ সময়ে তুলির নরম ছোয়ায় দৃশ্যমান মুর্তিতে এখন শুধু রঙ লাগানোর কাজে মনোনিবেশ করছেন।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহমুদ- উল- হাসান বাসসকে জানান, বাগেরহাট সদরের সকল পূজামন্ডপে কঠোর নিরাপত্তা বিধানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদা তৎপর রয়েছে, কোন ধরনের অপতৎপরতার সুযোগ নেই। বাগেরহাট বাসস্ট্যান্ড, দূরপাল্লার গাড়ি ও অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলরত সকল যানবাহনের গতি বিধি পর্যবেক্ষণে পুলিশ বাহিনী সজাগ রয়েছে।
কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আলী হাসান বাসসকে জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে এখানে পূজামন্ডপে আগত দর্শনার্থীদের জান মাল নিরাপত্তা বিধানে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে যৌথভাবে উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসন কাজ করবে বলে জানান। তিনি আরও জানান, ঘন ঘন মনিটরিং করছেন এবং অনেকগুলো পূজামন্ডপে সরেজমিন গিয়ে যাতায়াত ব্যবস্থা সুগম করতে চলচল পথকে আরও মসৃন করেছেন।
মোল্লাহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শ্যামানন্দ কুন্ডু বলেন, এবার এই উপজেলায় ৮৬ টি পূজামন্ডপে দুর্গা উৎসব আড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশে পালিত হবে।