ফারাজী আহম্মদ রফিক বাবন
নাটোর, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : এ বছর জেলায় ৩৬৮টি মন্দির ও মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হচ্ছে। মহালয়ায় দেবী দুর্গার আবাহন শেষে এখন পঞ্চমী আর ষষ্ঠীর সন্ধিক্ষণে আগামী রোববার দেবী দুর্গার বোধন হবে। তাই মন্দির আর মণ্ডপে চলছে প্রতিমা তৈরির কর্মযজ্ঞ।
শহরের পালপাড়াতে ব্যস্ত সময় অতিক্রম করছেন প্রতিমাশিল্পী সুকুমার পাল। এ বছর তৈরি করছেন আটটি প্রতিমা। বাবার অনুসারী হয়ে কাজ শিখেছেন। পরিবারের অন্য সদস্যদের সহযোগিতা নিয়ে এখন কাজ করছেন। সুকুমার পাল সবচে ব্যয়বহুল প্রতিমা তৈরি করেছেন শহরের দু’শো বছরের প্রাচীন রাধাবল্লভ জিঁউ আখড়ার জন্য। এই মন্দিরের প্রতিমা তৈরির পারিশ্রমিক নিয়েছেন সোয়া দুই লাখ টাকা। মন্দিরটিতে প্রতিমা প্রতিস্থাপন শেষে এখন চলছে রঙের কাজ।
সুকুমার পাল বলেন, আশাকরি দর্শনার্থীদের মন জয় করবে এই মন্দিরে আমার তৈরি প্রতিমা।
রাধাবল্লভ জিঁউ আখড়া মন্দিরে প্রতিমা তৈরির দায়িত্বে নিয়োজিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক কুনাল আগরওয়ালা জানান, দু’শো বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী এই মন্দিরের প্রতিমা দর্শনীয় হবে বলে আশা করি।
মন্দিরের পুরোহিত কল্লোল মৈত্র জানান, আগামী রোববার বোধনের মাধ্যমে পূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। পূজা নিবেদনে প্রতিমা দর্শনার্থীদের জন্যে উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চারুকলায় স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে প্রতিমা তৈরির কাজ করেন তন্ময় সরকার। শহরের মোহনপুর এলাকার কারখানায় প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন তিনি। তন্ময় সরকার জানান, শেষ মুহূর্তে প্রতিমা তৈরি, রঙ, সাজসজ্জা-সব কাজই চলছে যুগপৎভাবে।
নিজের বাড়িতে চারটি প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষ করেছেন বিশ্বজিৎ পাল। বাবা নিমাই চন্দ্র পালের প্রতিমা তৈরির খ্যাতি ছিল। বাবার সুনাম ধরে রেখে দৃষ্টিনন্দন প্রতিমা তৈরি করছেন বিশ্বজিৎ পাল। সৃজনশীল এবং বৈচিত্র্যময় প্রতিমা তৈরির কারিগর বিশ্বজিৎ পাল। গত বছর তিনি ধান দিয়ে প্রতিমা তৈরি করে আলোচিত হন। এ বছর প্রতিমা তৈরি করছেন পাট দিয়ে। পাটের শৈল্পিক কাজে জীবন্ত হয়ে উঠছে প্রতিমা। এই কাজের সহযোদ্ধা হয়েছেন বিশ্বজিৎ পালের নবম শ্রেণীতে পড়ুয়া ছেলে অভিজিৎ পাল আর স্ত্রী আভা রানী পাল।
অভিজিৎ পাল জানায়, আমি প্রতিমার চোখের কাজগুলো করছি, বাবা-মাকে সহযোগিতা করছি। ‘পারিবারিক কাজের অবসরে প্রতিমা তৈরির কাজে সহযোগিতা করে আনন্দ পাই’-বলে জানান আভা রানী পাল।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ নাটোর জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এডভোকেট খগেন্দ্র নাথ রায় জানান, এ বছর জেলায় ৩৬৮টি মন্দির ও মণ্ডপে দুর্গাপূজা আয়োজন করা হবে। প্রতিমা তৈরির কাজ এখন শেষের পথে।
নাটোরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম বাসস’কে বলেন, শুধু মন্দির আর মণ্ডপই নয়, যেসব বাড়ি বা কারখানাতে প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে, সেসব স্থানকেও নিরাপত্তা বলয়ের আওতায় রাখা হয়েছে। প্রতিমা তৈরির কাজ নির্বিঘ্নে এগিয়ে যাচ্ছে। আশাকরি, একই ধারাবাহিকতায় দুর্গাপূজার আয়োজনও সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হবে।