মোহাম্মদ জিগারুল ইসলাম
চট্টগ্রাম, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হচ্ছে আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর। উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতিবছরই চট্টগ্রামের মার্কেটগুলোতে কেনাকাটার ধুম পড়ে যায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। নতুন ডিজাইনের পোশাক এবং জিনিসপত্রের পাশাপাশি, পূজার্থীদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে শঙ্খ, শাঁখা সিঁদুর এবং পূজার জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী সামগ্রীর দোকানে।
শারদীয় দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে নগরীর সর্বত্র এখন উৎসবের আমেজ। ব্যবসায়ীরা বিক্রি নিয়ে আশাবাদী, আর ক্রেতারা ব্যস্ত প্রিয়জনদের জন্য পছন্দের পোশাক, অলংকার ও উপহার কিনতে। বলা চলে, নগরের পাশাপাশি আশপাশের উপজেলার বাজারগুলোতেও যেন উৎসবের আনন্দে মেতে উঠেছে।
দুর্গাপূজার জন্য প্রায় ১০০টি জিনিসপত্রের প্রয়োজন হয়, যার বেশিরভাগই বিভিন্ন শপিং মল, বিশেষ করে নগরীর টেরিবাজারে পাওয়া যায়। টেরিবাজার ও রিয়াজউদ্দিন বাজারে মুকুট, শাড়ি, অলঙ্কার, জরি, সিঁদুর, ফুলের মালা, প্রতীকি অস্ত্র এবং প্রতিমা সাজানোর জন্য পাত্র কিনতে ব্যস্ত দেখা গেছে ক্রেতাদের। আশেপাশের উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে খুচরা বিক্রেতারাও আসেন পাইকারি মূল্যে পূজার প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে টেরিবাজারে। শঙ্খ, শাঁখা এবং পূজার অন্যান্য সামগ্রী কিনতে টেরিবাজারের সরু গলিতে এখন ক্রেতাদের প্রচণ্ড ভিড়।
টেরিবাজারে পূজা উপলক্ষে কেনাকাটা করতে আসা অশোক চক্রবর্তী বাসস প্রতিবেদক’কে বলেন, অতীতে এলাকার বেশিরভাগ দোকানে দক্ষ কারিগরদের দ্বারা ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিতে শাঁখা তৈরি করা হতো। এখন নতুন প্রযুক্তির প্রবর্তনের ফলে ধীরে-ধীরে এই প্রথাটি বিলুপ্ত হতে শুরু করেছে। এখন হস্তনির্মিত শাখার পরিবর্তে জটিল নকশার শঙ্খ তৈরিতে মেশিন ব্যবহার করা হয়। হস্তনির্মিত শাখা উচ্চমানের হলেও, মেশিনে তৈরি পণ্যগুলো বিভিন্ন ধরণের নকশা প্রদান করে, যার ফলে মানুষ ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্পের চেয়ে মেশিনের নকশা পছন্দকে অগ্রাধিকার দেয়।
চট্টগ্রামের বিপণিবিতান, টেরি বাজার, রিয়াজউদ্দিন বাজার, আফমি প্লাজা, সানমার ওশান সিটি, আখতারুজ্জামান সেন্টার, ফিনলে স্কয়ারসহ প্রধান শপিংমলগুলোতে এই প্রতিবেদক ঘুরে দেখেন, ফুটপাত ও দোকানগুলো জমে উঠেছে পূজার কেনাকাটায় ব্যস্ত মানুষ। পূজা উপলক্ষে কাপড়ের মার্কেট ও শোরুমগুলোতে নারীদের জন্য সাজিয়ে রাখা হয়েছে বিভিন্ন রংঙের থ্রি-পিস, জামদানি শাড়ি, কাতান শাড়ি, লেহেঙ্গা ও তাঁতের শাড়ি। ছেলেদের জন্য রয়েছে- বাহারি ডিজাইনের ধুতি, শর্ট পাঞ্জাবি, শার্ট, টি-শার্ট, প্যান্ট ও শিশুদের নানা ডিজাইনের পোশাক। তাছাড়াও জুতার দোকানগুলোতে রয়েছে- বিভিন্ন রকমের জুতা। রয়েছে- বাচ্চাদের বাহারি পোশাক। নগরীর এসব মার্কেট ও ফুটপাতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়।
নগরীর দেবী দাস লেন থেকে কেনাকাটা করতে আসা গৃহিণী পূজা রাণী দত্ত বলেন, ‘দুর্গাপূজা মানেই আনন্দ, আর আনন্দের শুরু হয় নতুন পোশাক দিয়ে। সন্তানদের জন্য শাড়ি, পাঞ্জাবি আর ছোটদের জামা কিনেছি।
দাম একটু বেশি মনে হচ্ছে, তবে উৎসব বলে না কিনে উপায় নেই।’
নগরীর চকবাজার থেকে টেরিবাজারে এসছেন উপমা কর্মকার। তিনি বলেন, দোকানদাররা সবকিছুর দাম বাড়িয়ে নিচ্ছে। দুর্গাপূজাতো বাচ্চারা মানছে না, তাই কিনতে আসা। আরেক ক্রেতা প্রীতি দাশ বলেন, পরিবারের সবার জন্য কাপড় কিনতে আসলাম। এবার পূজা গ্রামে করবো। তিনি বলেন, ‘মায়ের জন্য শাড়ি, বাবার জন্য ধুতি-পাঞ্জাবি কেনা হয়েছে। এ ছাড়া ছোটদের জন্য জুতা কিনেছি। তবে গতবারের চেয়ে দাম বেশি মনে হয়েছে এবার।’
কলেজছাত্রী মিষ্টি দে জানান,‘নতুন ফ্যাশনের কালেকশন এসেছে। অনলাইনে ঘুরেও দেখেছি, তবে সরাসরি পোশাক দেখে কেনার আনন্দ অন্যরকম।’
শিশুদের পোশাকের দোকানে ভিড় বেশি থাকায় সেখানে গিয়েই কথা হয় আরেক ক্রেতা নিলয় চক্রবর্তীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাচ্চাদের জন্য শারদীয় পূজা সবচেয়ে আনন্দের সময়। তাই চেষ্টা করি তাদের নতুন জামা-কাপড় আর খেলনা কিনে দিতে।’
রিয়াজউদ্দিন বাজারের দোকানদার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘পূজাকে ঘিরে আমরা সব সময় নতুন ডিজাইনের পোশাক আনি। এবারও অনেক সুন্দর কালেকশন এনেছি। বিক্রি ভালো চলছে। শেষ কয়েকদিন তো ভিড়ে দোকান সামলানোই কষ্ট হয়ে যায়।’
প্রসাধনীর দোকানি সেলিনা বেগম বলেন, ‘মেয়েদের প্রসাধনী, অলংকার আর পারফিউমের চাহিদা এখন তুঙ্গে। আমরা বিশেষ ছাড় দিয়েছি। বিক্রি গত বছরের তুলনায় অনেক ভালো হচ্ছে।’
আফমি প্লাজার জুতার দোকানের মালিক নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘পূজার সময় শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ নয়, সব ধর্মের মানুষ কেনাকাটা করেন। এই মৌসুম আমাদের ব্যবসা সবচেয়ে ভালো সময়।’
এছাড়াও, ভারত ও পাকিস্তানের মতো বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পোশাক এবং প্রসাধনী পণ্য মিমি সুপার মার্কেট, টেরি বাজার, রিয়াজউদ্দিন বাজার, আমিন সেন্টার, সানমার ওশান সিটি, মতি টাওয়ার এবং চট্টগ্রাম শপিং কমপ্লেক্সের মতো শপিং সেন্টারগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে। গ্রাহকদের আকর্ষণ করার জন্য বিভাগীয় দোকান এবং বাজার কর্তৃপক্ষ আকর্ষণীয় পুরস্কার, নগদ ছাড়, র্যাফেল ড্র এবং তাৎক্ষণিক কুপন ঘোষণা করেছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পূজা উপলক্ষে নগরের মার্কেট, মণ্ডপ ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ টহল ও সিসিটিভি নজরদারিও থাকবে।