খুলনা, ১২ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : দেশব্যাপী টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (টিসিভি) টিকাদান ক্যাম্পেইন-২০২৫ এর অংশ হিসেবে খুলনা বিভাগীয় পর্যায়ে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রোববার সকালে খুলনা জিলা স্কুলের অডিটোরিয়ামে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার মো. ফিরোজ সরকার।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, “টাইফয়েড টিকা হালাল, নিরাপদ ও কার্যকর। ইপিআই কর্মসূচির আওতায় যে টিকা দেওয়া হচ্ছে, তা ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। আগামী প্রজন্মকে সুস্থ ও সবল রাখতে টিকার বিকল্প নেই। টাইফয়েড একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ, যার থেকে শিশুদের সুরক্ষিত রাখতে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।”
তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “টিকাদান ক্যাম্পেইন চলাকালে গণমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোনো শিশু যেন এই ক্যাম্পেইন থেকে বাদ না পড়ে, সেজন্য প্রচার বাড়াতে হবে। গুজবে কান না দিয়ে অভিভাবকদের সন্তানদের টিকাদানে উৎসাহী হতে হবে।” পাশাপাশি তিনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে টিকা বিষয়ে সঠিক তথ্য প্রচারে সহযোগিতার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দেশব্যাপী প্রায় পাঁচ কোটি শিশুকে টাইফয়েড টিকা প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে খুলনা বিভাগে প্রায় ৪৩ লাখ শিশুকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে—যার মধ্যে ২৮ লাখ ৯৭ হাজার ৪৪ জন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং ১৩ লাখ ৮৭ হাজার ৫৩৩ জন কমিউনিটি পর্যায়ে টিকা পাবে। খুলনা বিভাগের ১০টি জেলার মোট ৩২ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কেন্দ্র এই ক্যাম্পেইনে অংশ নেবে।
টিকাদান কার্যক্রম দুটি ধাপে সম্পন্ন হবে: প্রথম ধাপে (১২-৩০ অক্টোবর) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রে টিকা প্রদান। দ্বিতীয় ধাপে (১-১৩ নভেম্বর) কমিউনিটি পর্যায়ে নিয়মিত ও স্থায়ী কেন্দ্রে টিকাদান কার্যক্রম।
নয় মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী সকল শিশুকে এক ডোজ টাইফয়েড টিকা প্রদান করা হবে। জন্মনিবন্ধন সনদের ১৭-সংখ্যার নম্বর দিয়ে নির্ধারিত ওয়েবসাইটে নিবন্ধনের মাধ্যমে টিকা পাওয়া যাবে। যাদের জন্মনিবন্ধন নেই, তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় টিকা প্রদানের সুযোগ রাখা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. শেখ ছাইদুল হক, যুগ্মসচিব (প্রকল্প বাস্তবায়ন ও জনস্বাস্থ্য) মো. সফিউল আলম এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি ডা. মো. আরিফুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন খুলনা স্বাস্থ্য দপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. মুজিবুর রহমান।
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. মো. খালেদ হোসেন, ইউনিসেফের খুলনা চিফ মো. সাজিদুল ইসলাম, খুলনা প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক এনামুল হকসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা, শিক্ষক ও গণমাধ্যমকর্মীরা।
একইদিন সকালে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ও খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি) প্রশাসক মো. ফিরোজ সরকার খুলনা খালিশপুর কলেজিয়েট গার্লস স্কুল অডিটোরিয়ামে টিসিভি টিকাদান ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, খুলনা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় এক লাখ ৭২ হাজার ৩৭০ জন শিশুকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কেসিসি এলাকায় ৫৬৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কমিউনিটি কেন্দ্রে টিকা প্রদান কার্যক্রম চলবে।
এই ক্যাম্পেইনও দুই ধাপে অনুষ্ঠিত হবে:
১২-৩০ অক্টোবর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রে। ১-১৩ নভেম্বর: কমিউনিটি পর্যায়ে।
এ কার্যক্রম বাস্তবায়নে দায়িত্ব পালন করবেন: ২৫২ জন টিকাদানকারী, ৩৫০ জন স্বেচ্ছাসেবী, ৬২ জন প্রথম সারির সুপারভাইজার, ৮ জন দ্বিতীয় সারির সুপারভাইজার, ৪ জন কোল্ড চেইন ব্যবস্থাপক, ৪ জন আইটি ম্যানেজার।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কেসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শরীফ শাম্মীউল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন কেসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) শরীফ আসিফ রহমান, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিভাগীয় পরিচালক মো. আনিসুজ্জামান, পরিবার পরিকল্পনা দপ্তরের উপপরিচালক মো. আকিব উদ্দিন, জেলা শিক্ষা অফিসার এস এম ছায়েদুর রহমান, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শেখ অহিদুল আলমসহ সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাবৃন্দ।