চট্টগ্রাম, ১৩ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ডেন্টাল বিভাগে চরম অব্যবস্থাপনা, যন্ত্রপাতির সংকট এবং প্রশাসনের উদাসীনতার অভিযোগে আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘ ৩৬ বছরের পুরনো দাবি, একটি পূর্ণাঙ্গ ডেন্টাল কলেজ প্রতিষ্ঠার দাবিকে সামনে রেখে তারা ‘ডেন্টাল ইউনিট কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।
আজ সোমবার সকালে চমেক হাসপাতাল এলাকায় আয়োজিত মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা এসব দাবি তুলে ধরেন।
তাদের অভিযোগ, ডেন্টাল বিভাগকে বরাবরই উপেক্ষা করা হয়। যেখানে এমবিবিএস শিক্ষার্থীদের জন্য তিনটি ভবন রয়েছে, সেখানে ডেন্টাল বিভাগের জন্য বরাদ্দ মাত্র দুটি ফ্লোর। বাজেট, যন্ত্রপাতি, অবকাঠামো ও জনবল—কোনোটিই পর্যাপ্ত নয়।
শিক্ষার্থীরা বলেন, “আমরা প্রতিটি পদে বৈষম্যের শিকার। ভবন নেই, অটোক্লেভ নেই, পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। ডেন্টাল চিকিৎসাকে প্রশাসন গুরুত্বই দেয় না।”
তাদের দাবি:
* একটি পূর্ণাঙ্গ ডেন্টাল কলেজ প্রতিষ্ঠা
* পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি, জনবল ও অবকাঠামোর নিশ্চয়তা
শিক্ষার্থী শোয়েব সিফাত, সাদমান সাকিব ও আহমেদ নাফিস জানান, ৩০০ শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র চারটি ক্লাসরুম রয়েছে, যেখানে একসঙ্গে ক্লাস করা প্রায় অসম্ভব। লাইট ও ফ্যান নষ্ট হলেও তা মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয় না।
তারা আরও বলেন, কার্যকর এক্স-রে মেশিন নেই, প্রশিক্ষিত অপারেটরও নেই। ফলে রোগীদের বাইরে গিয়ে অতিরিক্ত খরচে এক্স-রে করাতে হয়। রুট ক্যানেল চিকিৎসার পর ক্যাপ পরানোর ব্যবস্থাও বন্ধ। প্রস্থডনটিক্স বিভাগেও নেই প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, অনেক সময় শিক্ষকদের নিজেদের পকেট থেকে যন্ত্রপাতি কিনে দিতে হয়। পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের বেতনও সরকার থেকে না দিয়ে শিক্ষকরা ব্যক্তিগতভাবে মাসে তিন হাজার টাকা করে দেন।
কম্পিউটার অপারেটর সেলিনা বেগম বলেন, “আমাদের বেতন সরকার দেয় না। স্যাররাই ব্যক্তিগতভাবে টাকা দেন। আমি কম্পিউটার অপারেটর হলেও এক্স-রে মেশিন চালাতে হয়।”
অটোক্লেভ না থাকায় যন্ত্রপাতি জীবাণুমুক্ত করার জন্য শিক্ষার্থীরা স্যালাইন ব্যবহার করেন, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতিদিন গড়ে ২০০ু৩০০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন, কিন্তু একমাত্র এক্স-রে মেশিনটি পুরনো ও অচল।
ভুক্তভোগী রোগী ইব্রাহিম খলিল বলেন, “ডাক্তার এক্স-রে করতে বললে হাসপাতালে করা যায় না। বাইরে গিয়ে টাকা খরচ করে করতে হয়। শুনেছি তিনটা মেশিন আছে, কিন্তু সব নষ্ট। আমি গরিব মানুষ, তাই এখানে আসছি, কিন্তু ভালো চিকিৎসা পাই না।”
চমেক ডেন্টাল বিভাগের পরিচালক জানিয়েছেন, এসব বিষয় তার এখতিয়ারভুক্ত নয়। ফলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।