সিলেট, ১৬ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : চলতি বছরের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলে সিলেটে বিপর্যয় ঘটেছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঘোষিত ফলাফলে দেখা গেছে, সিলেট বোর্ডে কৃতকার্য হয়েছে ৫১ দশমিক ৮৬ শতাংশ শিক্ষার্থী। পাসের হারের দিক থেকে এটা বিগত ১২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
শিক্ষাবোর্ডের সম্মেলন কক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ফলাফল ঘোষণা করেন সিলেট শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. আনোয়ার হোসেন চৌধুরী। তিনি জানান, চলতি বছর সিলেটে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ৬৯ হাজার ৯৪৪ জন। যেখানে ৬৯ হাজার ১৭২ জন পরীক্ষায় অংশ নেন। তার মধ্যে ছাত্র ২৭ হাজার ৭৬৪ জন এবং ছাত্রী ৪১ হাজার ৪০৮ জন। মোট কৃতকার্য পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৫ হাজার ৮৭০ জন।
কৃতকার্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে, ছাত্র ১৩ হাজার ৮৭০ জন এবং ছাত্রী ২২ হাজার ১ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৬০২ জন, তার মধ্যে ছাত্র ৬৮১ জন এবং ছাত্রী ৯২১ জন।
পাসের হারে পিছিয়ে রয়েছে ছাত্ররা। ছাত্রদের মধ্যে পাস করেছে ৪৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ এবং ছাত্রীদের পাসের হার ৫৩ দশমিক ১৩ শতাংশ।
পাসের হার সবচেয়ে কম মানবিক বিভাগে। এই বিভাগে পাস করেছে ৪৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ পরীক্ষার্থী।
বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ৭৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৫০ দশমিক ১৮ শতাংশ।
১ হাজার ৬০২ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে পেয়েছে ১ হাজার ৩৭৯ জন, মানবিক বিভাগে ১৫৩ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৭০ জন শিক্ষার্থী। গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৬ হাজার ৬৯৮ জন।
জেলাভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সিলেট বিভাগে পাসের হার সবচেয়ে কম মৌলভীবাজারে এবং বেশি সিলেট জেলায়। সিলেট জেলায় পাসের হার ৬০ দশমিক ৬১ শতাংশ, হবিগঞ্জে ৪৯ দশমিক ৮৮, সুনামগঞ্জে ৪৭ দশমিক ৩৫ এবং মৌলভীবাজারে ৪৫ দশমিক ৮০ শতাংশ।
গত বছর সিলেটে পাসের হার ছিল ৮৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ, ২০২৩ সালে ৭১ দশমিক ৬২ শতাংশ, ২০২২ সালে ৮১ দশমিক ৪০ শতাংশ, ২০২১ সালে ৯৪ দশমিক ৮০ শতাংশ, আর ২০২০ সালে শতভাগ, ২০১৯ সালে ৬৭ দশমিক ০৫ শতাংশ, ২০১৮ সালে ৭৩ দশমিক ৭ শতাংশ, ২০১৭ সালে ৭২ শতাংশ, ২০১৬ সালে ৬৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ, ২০১৫ সালে ৭৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং ২০১৪ সালে ৭৯ দশমিক ১৬ শতাংশ।
২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারির সময়ে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় সবাইকে পাস করে দেওয়া হয়। যেটিকে ‘অটোপাস’ বলা হয়। ফলাফল প্রস্তুতের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের এসএসসির ফল বিবেচনায় নেওয়া হয়। আর ২০২১ সালে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় এবং জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার কিছু নম্বর যোগ করে চূড়ান্ত ফলাফল তৈরি করা হয়েছিল, যার ফলে পাসের হার স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি ছিল।
সিলেট শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, ইংরেজিতে এবার ৩৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ শিক্ষার্থী ফেল করেছে। পরিসংখ্যানে ২৩ দশমিক ২২ শতাংশ, পদার্থ বিজ্ঞানে ১৬ দশমিক ২৫ শতাংশ, একাউন্টিংয়ে ৩১ দশমিক ৮৯ শতাংশ, উচ্চতর গণিতে ২০ দশমিক ৯৮ শতাংশ, ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিষয়ে ১৯ দশমিক ১৩ শতাংশ ও ইতিহাস বিষয়ে ১৮ দশমিক ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ফেল করেছে। এই কারণে সিলেটে পাসের হার কমেছে। তবে, সার্বিক ফলাফল ভালো হয়েছে।
কারণ, এবার সারাদেশেই গড় পাসের হার কম। ফলাফলে আমরা সন্তুষ্ট।
তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত না হওয়া ও দুর্গম হাওরাঞ্চল ও গ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ইংরেজি ও বিজ্ঞান বিভাগের বিভিন্ন বিষয়ে মান সম্পন্ন শিক্ষক না থাকায়ও সার্বিক ফলাফলে প্রভাব পড়েছে বলে মনে করেন।