।। জীতেন বড়ুয়া।।
খাগড়াছড়ি, ২১ অক্টোবর ২০২৫ (বাসস): প্রকৃতিতে হেমন্তের শুরু হতে না হতেই শুষ্ক হয়ে উঠছে আবহাওয়া। শীতের আগমনি বার্তার সাথে সাথে বাড়ছে আবহাওয়াজনিত রোগের প্রকোপ। জ্বর, সর্দি, কাশিসহ নানা উপর্সগ নিয়ে হাসপাতালের ভর্তি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
খাগড়াছড়ি জেলা সদরের বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আক্রান্তদের বেশীর ভাগই শিশু। গত ১ সপ্তাহে প্রায় সহস্রাধিক শিশুকে চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে ।
বহির্বিভাগে রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সরা । আতঙ্কিত না হয়ে শিশুর বাড়তি যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি নিউমোনিয়া প্রতিরোধে পরার্মশ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
এদিকে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে দিন-রাতে চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া বিরাজ করছে। দিনের বেলায় প্রচণ্ড গরম থাকলেও রাতের বেলায় শীত অনুভূত হচ্ছে। ঠাণ্ডার প্রকোপ সবচেয়ে বেশি পাহাড়ের গ্রামাঞ্চলে। এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে দুর্গম এলাকার মানুষ। ঋতু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়ার তারতাম্যের জন্য বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা।
খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, চলতি মাসে ২০ দিনের ব্যবধানে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১২ জন শিশু। শ্বাসকষ্ট, জ্বর, ঠাণ্ডা ছাড়াও শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায়। আক্রান্ত শিশুদের বেশির ভাগের বয়স ৬ থেকে ১৮ মাস।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের শিশু ওর্য়াডে ধারণ ক্ষমতার চার গুণ বেশি শিশু রোগী ভর্তি হওয়ায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সরা। ১৫ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে অন্তত ৬২ জন।
প্রতিদিন বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছে কয়েকশ রোগী। ভর্তিকৃত রোগীদের বেশিরভাগই ডায়রিয়া-বমি ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। হাসপাতালের শয্যা সংকটের কারণে মেঝেতেও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজন মো. রেশমত উল্ল্যা, মরিয়ম বেগম ও কবিতা চাকমা বলেন, ‘ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর এখন বাচ্চাকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি। এখানে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে। তবে হাসপাতালের ভেতরে জায়গা খুব কম হওয়ায় অনেককে মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’
এদিকে পাশেই হাসপাতালের নতুন ভবনের কাজ ছয় বছরেও শেষ হয়নি। হাসপাতালের শয্যা সংকটের কারণে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে নার্স ও চিকিৎসকরা। কাগজে কলমে ২৫০ শয্যার হাসপাতালে জনবল রয়েছে ১০০ শয্যার। ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুণ বেশী রোগী সামাল দিতে নির্মানাধীন ভবনের কাজ দ্রুত শেষ করার দাবি জানিয়েছেন হাসপাতালের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স প্রিয়াঙ্কা রানী ভৌমিক বাসসকে বলেন, এখানে রোগীর চাপ বেশি প্রতিদিন প্রচুর রোগী আসছে। স্থান সংকুলান না হওয়ায় চিকিৎসাসেবা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ হাসপাতালে ১৫ বেডের শিশু ওর্য়াডে ভর্তি রয়েছে ৬২ জন। নতুন ভবনের কাজ শেষ হলে এ ভোগান্তি শেষ হবে।
খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা.ওমর ফারুক বাসসকে বলেন, ঋতু পরিবর্তনের কারণে নবজাতক ও শিশুরা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। তবে অনেক শিশু মারাত্মক নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে আশংকাজনকভাবে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। ঠাণ্ডার কারণে সামনে রোগীর চাপ বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। এসময় বাচ্চাদের বাড়তি যত্ন নেয়ার পরার্মশ দেন তিনি।
একই হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রিপল বাপ্পী চাকমা বলেন, দিনে ও রাতের বেলায় আবহাওয়ার বিপরীত অবস্থার কারণে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এ অবস্থায় আতংকিত না হয়ে শিশুদের বাড়তি যত্ন নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি ।
তিনি বলেন, দিনের বেলা প্রচণ্ড গরমের সময় এবং জ্বরে আক্রান্ত হলে বাচ্চাদের শরীর কুসুম গরম পানি দিয়ে মুছে দিতে হবে। ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হলে দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, খাগড়াছড়ি ১০০ শয্যার জেলা সদর হাসপাতালকে ২৫০ শয্যার হাসপাতালে উন্নিত করা হলেও এখনো ৫০ শয্যার জনবল দিয়ে এর কার্যক্রম চলছে । বর্তমানে ৫৭ জন চিকিৎসক পদের বিপরীতে ১৮ জন চিকিৎসক কর্মরত রয়েছেন। খাগড়াছড়িতে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট আধুনিক সদর হাসপাতালের নতুন ভবনের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করে জনবল নিয়োগ দিলে জেলায় দীর্ঘ দিনের চিকিৎসা সংকট দূর হবে।