নদীভাঙনে সব হারিয়ে কুড়িগ্রামে চরবাসীর মানবেতর জীবনযাপন 

বাসস
প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১৯:১০
ছবি : বাসস

কুড়িগ্রাম, ২ নভেম্বর ২০২৫ (বাসস) : জেলায় অসময়ে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে দুধকুমার নদীর ভাঙনে শতাধিক পরিবার সর্বস্বান্ত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। দুধকুমার নদীর অব্যাহত ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করায় কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের খাড়ুয়ারপাড় সবুজপাড়া এলাকার শতাধিক পরিবার ঠিকানা হারিয়ে এখন নিঃস্ব।

আজ রোববার সকালে চর উন্নয়ন কমিটি ঘোগাদহ ইউনিয়ন শাখার উদ্যোগে নদীভাঙন কবলিত মানুষের দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং চরাঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নের দাবিতে চর বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠনের আহ্বান জানিয়েছে স্থানীয়রা। এ ছাড়াও এসব দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।

এ কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আব্দুল জলিল।

এতে বক্তব্য দেন, জেলা চর উন্নয়ন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বেবু, সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক আশরাফুল হক রুবেল, সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ খাজা শরিফ উদ্দিন আহমেদ রিন্টু, আবদুর রাজ্জাক, আমিনুল ইসলাম, যাত্রাপুর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান রহিমুদ্দিন হায়দার রিপন, এরশাদ আলী, সাবেক মেম্বার আব্দুল আউয়াল, আব্দুর রহমান, পনির উদ্দিন, সাবেরা খাতুন ও সালেমা খাতুন প্রমুখ।

প্রতিকূল আবহাওয়া ও বৃষ্টির মধ্যে খাড়ুয়ারপাড় সবুজপাড়া নদীতীরবর্তী এলাকার পাঁচ শতাধিক নদীভাঙনকবলিত মানুষ এ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন।

দুধকুমার নদীর তীরে দাঁড়িয়ে কান্না জড়িত কণ্ঠে ক্ষতিগ্রস্ত শরীফ বলেন, আমার বাড়ি ১৮ বার নদীতে ভেসে গেছে। এখন এমন অবস্থা—সকাল থেকে দুপুর হয়ে গেছে, পেটে একমুঠো ভাতও পড়েনি। সবুরা বেগমের স্বামী নেই, তিন মেয়েকে নিয়ে মানুষের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালান। তিনি বলেন, আজ কাজও পাইনি, জানি না রাতে খেতে পারব কিনা। 

সালেমা বেগমের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, তার স্বামী প্রতিবন্ধী। নদীর কিনারায় একচালা টিনের ঘরে থাকেন তারা। তবে ঘরটি যেকোনো মুহূর্তে নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে।

আরেক ক্ষতিগ্রস্ত সাহেরা খাতুন বলেন, আমার স্বামী আমার খোঁজ নেয় না। আমার বাড়ি ৯ বার ভাঙেছে। এখন কোথায় যাব জানি না।

এছাড়া আমিনুল ইসলাম, আইয়ুব আলীসহ আরও অনেকে জানান, তাদেরও ঘরবাড়ি বারবার নদীগর্ভে চলে গেছে। কেউ কেউ একবেলা খাবার জোটাতেও হিমশিম খাচ্ছেন।

কুড়িগ্রাম জেলা চর উন্নয়ন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বেবু বলেন, গত দশ বছরে প্রায় এক লাখ মানুষ নদীভাঙনের কারণে তাদের ঠিকানা বদল করতে বাধ্য হয়েছেন। এতে সামাজিক বন্ধন ছিন্ন হচ্ছে, পরিবার বিচ্ছিন্ন হচ্ছে।

তিনি বলেন, কুড়িগ্রাম জেলার আয়তন ২,২২৯ বর্গকিলোমিটার, যার মধ্যে প্রায় ৮৫০ বর্গকিলোমিটার চরাঞ্চল। এখানে বসবাস করে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষ, যাদের অধিকাংশই শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থার বাইরে থেকে যাচ্ছে।

অধ্যাপক বেবু আরও বলেন, চরবাসীর জীবনমান উন্নয়নে একটি ‘চর বিষয়ক মন্ত্রণালয়’ গঠন এখন সময়ের দাবি। তা না হলে কুড়িগ্রাম আবারও ১৯৭৪ সালের মতো দুর্ভিক্ষের মুখে পড়বে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
নির্বাচনের আগে জুলাই সনদের ওপর গণভোট চায় জামায়াত : ডা. তাহের
বিএনপির ৩১ দফা বাস্তবায়নে টাঙ্গাইলে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ
প্রবাসীদের ভোটাধিকার দেয়ায় ইসিকে তারেক রহমানের ধন্যবাদ
বিনিয়োগ সহজীকরণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে
গুপ্ত স্বৈরাচার ওত পেতে আছে, ঐক্যবদ্ধ হোন: তারেক রহমান
রাজধানীতে বিশেষ অভিযানে গ্রেফতার ১৪
সরকার সকলক্ষেত্রে নারী উন্নয়নে গুরুত্ব দিচ্ছে: গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের ডিজি
নতুন ও সম্ভাবনাময় স্টার্ট-আপদের আইডিয়া প্রকল্পের কো-ওয়ার্কিং স্পেস ব্যবহারের আহ্বান ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের
বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ মাদক কারবারি গ্রেফতার 
জনগণের সচেতনতা ও সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব: ডিএনসিসি প্রশাসক
১০