
শাহজাহান নবীন
ঝিনাইদহ, ১৮ নভেম্বর ২০২৫ (বাসস): প্রতিষ্ঠার ১৭ বছর পেরিয়ে গেলেও চালু হয়নি জেলার একমাত্র স্যালাইন কারখানাটি। বন্ধ রয়েছে কারখানার আধুনিক ভবন। ভবনে জমে আছে ময়লার স্তূপ। অযত্ন অবহেলায় পড়ে আছে স্যালাইন তৈরির সরঞ্জাম। এতে জেলার হাসপাতালগুলোতে খাবার স্যালাইনের চাহিদা মেটানো হচ্ছে যশোর ও বগুড়া থেকে আনা স্যালাইন দিয়ে। দিন দিন বাড়ছে আমদানি খরচ।
ঝিনাইদহে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে করতে ও হাসপাতালে স্যালাইনের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে খাবার স্যালাইন তৈরির কারখানাটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর ১৭ বছর পেরিয়ে গেলেও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে চালু করা হয়নি ঝিনাইদহবাসীর স্বাস্থ্যসেবার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত এ কারখানা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ঝিনাইদহ শহরের মদনমোহন পাড়ায় ২০০৫ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি প্রকল্পের আওতায় স্যালাইন কারখানাটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। হাসপাতালটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন সংসদ সদস্য মসিউর রহমান। ২০০৮ সালে ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর স্যালাইন কারখানাটি আর চালু করা হয়নি।
বিএনপি আমলে তৈরি হয়েছে, এমন প্রচারণা চালিয়ে কারখানাটি চালুর ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি দীর্ঘ ১৭ বছর। বর্তমানে কারখানার অত্যাধুনিক মেশিন পলিথিনে মুড়িয়ে রাখা আছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, দুই তলা বিশিষ্ট ভবনের নিচতলার দুটি কক্ষে বর্তমানে ইপিআই সেন্টার পরিচালিত হচ্ছে। সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিস ইপিআই সেন্টার পরিচালনা করছে। এ ছাড়া বাকি কক্ষগুলো তালাবদ্ধ হয়ে পড়ে আছে। দ্বিতীয় তলার মেঝেতে জমেছে ময়লার স্তূপ। দেয়ালে দেয়ালে মাকড়সার জাল। ভবনের মাঝখানে খোলা জায়গায় বুনো গাছ-গাছালির আবাস। এছাড়া কারখানার আধুনিক ভবনটির অধিকাংশ কক্ষই তালাবদ্ধ।
জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতাল, ৫টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রতি মাসে গড়ে ২০ হাজার পিস খাবার স্যালাইনের চাহিদা রয়েছে। স্থানীয় চাহিদা মেটাতে যশোর ও বগুড়া থেকে স্যালাইন কিনে আনা হয়। এতে প্রতিমাসেই পরিবহণ খরচ বাবদ মোটা টাকা খরচ হচ্ছে।
জেলার বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আনোয়ারুল ইসলাম বাদশা বাসসকে বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)র প্রয়াত সংসদ সদস্য মসিউর রহমান এই কারখানাটি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। নোংরা রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় দীর্ঘদিন স্যালাইন কারখানাটি বন্ধ রয়েছে। আওয়ামী লীগের আমলে কারখানাটি চালুর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। কারখানাটি চালু হলে জেলাবাসী উপকৃত হবে।
জেলার সিনিয়র সাংবাদিক আসিফ কাজল বলেন, আমরা চাই, কারখানাটি দ্রুত চালু করা হোক। স্যালাইন কারখানাটি চালু হলে এই জেলার মানুষ উপকৃত হবে। জেলার স্বাস্থ্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিবহণ খরচ কমে যাবে। পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, মাগুরাসহ অন্যান্য জেলাগুলোতে স্যালাইন বিক্রি করার সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ ছাড়া কারখানাটি চালু করা হলে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. কামরুজ্জামান বাসসকে বলেন, ‘কারখানাটির অবকাঠামো থাকলেও সিভিল সার্জন অফিসে কারখানা বিষয়ক কোনো নথিপত্র নেই। দীর্ঘদিন ধরে কারখানাটি চালু না হওয়ার পেছনে রাজনৈতিক কারণ থাকতে পারে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে আমিও শুনেছি। কারখানাটি চালুর ব্যাপারে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে সিভিল সার্জন অফিস থেকে যোগাযোগ করা হবে।’