বাসস
  ২৪ জানুয়ারি ২০২৩, ১৯:২৮

শারক্বীয়া’র সামরিক শাখার প্রধান রনবীরসহ দু’জন গ্রেফতার

ঢাকা, ২৪ জানুয়ারি, ২০২৩ (বাসস) : নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র শুরা সদস্য ও সামরিক শাখার প্রধান রনবীর ও তার সহযোগি বোমা বিশেষজ্ঞ বাশারকে কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। 
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, মাসুকুর রহমান ওরফে রনবীর ওরফে মাসুদ (৪৪) ও  মো. আবুল বাশার মৃধা  ওরফে আলম (৪৫)।
রনবীর সিলেট জেলার সদর থানার মৃত আব্দুস সাত্তারের পুত্র ও  বাশার মাদারীপুর জেলার রাজৈর থানার আব্দুর রউফ মৃধার পুত্র। 
সোমবার  ভোর ৫ টার দিকে র‌্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা, র‌্যাব-২, র‌্যাব-৩ এবং র‌্যাব-১৫ এর যৌথ অভিযানে কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন ইয়াহিয়া গার্ডেনের গহীন বনাঞ্চল থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। 
তাদের কাছ থেকে ১টি বিদেশী পিস্তল, ৩টি পিস্তলের ম্যাগাজিন, ১০ রাউন্ড পিস্তলের গুলি, ১টি কার্টিজ, ২টি একনলা বন্দুক, ১১টি ১২ বোরের কার্তুজ, ১শ’ রাউন্ড ২২ বোরের গুলি, ১টি মোবাইল, নগদ আড়াই লক্ষাধিক টাকা এবং পার্বত্য অঞ্চলে সামরিক প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর ভিডিও কন্টেন্ট উদ্ধার করা হয়।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারস্থ র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান। 
সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৩ এর কমান্ডিং অফিসার (অধিনায়ক) লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদসহ র‌্যাবের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
খন্দকার আল মঈন জানান, এ পর্যন্ত বিভিন্ন সংগঠনের প্রায় ৩ হাজার জঙ্গি সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এরমধ্যে হলি আর্টিজান হামলার পরবর্তী সময়ে প্রায় ২ হাজার জঙ্গি সদস্যকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।  
র‌্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতারকৃত মাসুকুর রহমান রনবীর ওরফে মাসুদ ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ এর অন্যতম শূরা সদস্য ও সামরিক শাখার প্রধান। সে ২০০৭ সালের পূর্বে পোস্ট অফিসে চাকুরী করত এবং চাকুরীর পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি করত।  পরবর্তীতে ডাকাতি মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাভোগও করে। কারাগারে থাকাকালীন সময় কারাগারে থাকা জঙ্গিদের সাথে তার সাক্ষাত হয় এবং একপর্যায়ে সে জেএমবির আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়। জেল থেকে বের হওয়ার পর সে বিভিন্ন সময়ে কারাগারে থাকা জেএমবি সদস্য ও তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে। ২০১৭ সালে জামাতুল আনসার এর শূরা সদস্য এবং অর্থ ও মিডিয়া শাখার প্রধান রাকিবের সাথে তার পরিচয় হয় এবং সে প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য হিসেবে জামাতুল আনসারে যোগদান করে। 
সিলেট থেকে ৪ তরুণের নিখোঁজের ঘটনায় মাসুকুর রহমান রনবীর ওরফে মাসুদ জড়িত ছিল উল্লেখ করে খন্দকার আল মঈন জানান, সে সিলেট অঞ্চলে সংগঠনের দাওয়াতি ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমসহ সামরিক শাখার সদস্য নির্বাচন কার্যক্রম তত্বাবধান করত। 
তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত আবুল বাশার মৃধা ওরফে আলম হাটহাজারীর একটি মাদ্রাসা থেকে পড়াশোনা করে একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করত। তার সাংগঠনিক নাম আলম। আবুল বাশার মৃধা দীর্ঘদিন নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হুজি’র সাথে জড়িত ছিল। সে হুজি সংগঠনে থাকাকালীন সময়ে ঝালকাঠির নলসিটি এলাকায় সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমের জন্য দায়েরকৃত নাশকতার মামলায় ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন বছর কারাভোগ করে। সে ২০১৬-১৭ সালের দিকে জামাতুল আনসারের আমীর মাহমুদের মাধ্যমে জামাতুল আনসারে যোগ দেয়। পাহাড়ে প্রশিক্ষণের জন্য ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে গৃহত্যাগ করে এবং ২ মাস সমতলের বিভিন্ন জায়গায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। পরবর্তীতে সে রনবীর ও রাকিব এর মাধ্যমে প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য পার্বত্য অঞ্চলে যায়। সে আইইডিসহ বিভিন্ন ধরণের বোমা তৈরিতে দক্ষ ছিল। সে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিকট হতে বোমা তৈরির বিষয়ে বেশ কয়েকটি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। 
তার বিরুদ্ধে ঝালকাঠির নলছিটি থানায় অস্ত্র ও সন্ত্রাস বিরোধী আইনে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। ওই মামলায় সে একাধিকবার কারাভোগ করে।