বাসস
  ২০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৫৪

গোপালগঞ্জে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে ১৮ জাতের ধান প্রদর্শনী

// মনোজ কুমার সাহা //
টুঙ্গিপাড়া(গোপালগঞ্জ), ২০ এপ্রিল, ২০২৩ (বাসস) : বাতাসে দুলছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) উদ্ভাবিত ১৮টি জাতের সবুজ ও সোনালী ধান। সারিবদ্ধভাবে রোপিত ধানের শীষে রাশি-রাশি ধান শোভা পাচ্ছে।
ধানের এমন ফলন ও সৌন্দর্য  দেখে আগ্রহ ভরে কৃষক এই সব জাতের ধানের খোঁজ নিচ্ছেন। তারা এসব ধান আগামী বোরো মৌসুমে আবাদের আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এই কারণে গোপালগঞ্জসহ ৩ জেলায় বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট  (ব্রি)  উদ্ভাবিত ধানের জাতের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের  গোপালগঞ্জ  আঞ্চলিক কার্যালয়ের সামনের খোলা জায়গায় ব্রি উদ্ভাবিত ১৮টি জাতের ধানের এই প্রদর্শনী প্লট করা হয়েছে। এই  কার্যালয়ের পাশ দিয়ে  ঢাকা-গোপালগঞ্জ-টুঙ্গিপাড়া-পিরোজপুর ব্যস্ত মহাসড়ক চলে গেছে। এই সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী কৃষক, কৃষি কাজের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তি ও পথিককে এই ধান আকৃষ্ট করছে।
ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গোপালগঞ্জ  আঞ্চলিক কার্যালয় ২০১৯ সালে  গোপালগঞ্জে কার্যক্রম শুরু করে। এই কার্যালয় থেকে গোপালগঞ্জ, নড়াইল ও বাগেরহাট জেলায় ব্রি ধানের নতুন-নতুন জাত ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি বিনামূল্যে বীজ, সার বিতরণ, কৃষক প্রশিক্ষণ, কৃষকের মাঠ সরেজমিনে পরিদর্শন করে পরাামর্শ দিচ্ছে। এতে ৩ জেলায় ক্লাইমেট স্মার্ট নতুন-নতুন জাতের সাথে কৃষক পরিচিত হচ্ছে। এসব জেলায় ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।  সেই সাথে কৃষকের আয় বাড়ছে।
ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের  গোপালগঞ্জ  আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান ও ব্রি’র উর্ধ¦তন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড.  মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বলেন,  গোপালগঞ্জ, নড়াইল ও বাগেরহাট জেলায় ধানের উৎপাদন বৃদ্ধিতে আমরা কাজ করছি। চলতি বোরো মৌসুমে  আমরা আমাদের অফিসের সামনে ব্রি উদ্ভাবিত ব্রিধান-৫০, ব্রিধান-৫৮, ব্রিধান-৬৩, ব্রিধান-৬৭, ব্রিধান-৭৪,  ব্রিধান-৮১, ব্রিধান-৮৬, ব্রিধান-৮৮, ব্রিধান-৮৯, ব্রিধান-৯২, ব্রিধান-৯৬, ব্রিধান-৯৭, ব্রিধান-৯৯, বঙ্গবন্ধু ধান-১০০, ব্রিধান-১০১, ব্রিধান-১০২, ব্রি হাইব্রিড ধান-৩ ও ব্রি হাইব্রিড ধান-৫ সহ ১৮টি জাতের প্রদর্শনী প্লট করেছি। ওই প্লটে ধান খুবই সুন্দর হয়েছে। প্রদর্শনী প্লটের ধান দেখে কৃষকরা আগামী বছর এসব জাতের ধান আবাদের আগ্রহ দেখাচ্ছেন। আমাদের কাছে তারা বীজ চাইছে। তাই আগামী মৌসুমে  আমাদের বীজের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ঘোনাপাড়া গ্রামের কৃষক জব্বার মিয়া (৬০), টুঙ্গিপাড়া উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের রহমত আলী (৫৫), বাগেরহাট জেলার বড়গুনী গ্রামের শাহজাহান মিয়া (৪৫), নড়াইল জেলার বাগুডাঙ্গা গ্রামের মহসিন মল্লিক (৫৮) বলেন, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের সামনের ধানের প্রদর্শনী প্লট দেখে আমাদের চোখ জুড়িয়ে গেছে। ধানের গাছ যেমন সতেজ, তেমনি ধানের সমরোহে মন ভরে যাচ্ছে। ধানের  এত ভাল ফলন সচরাচর দেখা যায় না। এই ১৮টি জাতের ধানই আমাদের আকৃষ্ট করেছে। আগামী বছর আমরা আমাদের জমিতে এই ধানের আবাদ করতে চাই। এই জন্য গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের কাছে আমরা বীজ চেয়েছি।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরা গ্রামের কৃষক ঝুনা চৌধূরী বলেন, বিগত ৪ বছর ধরে ব্রি উদ্ভাবিত অন্তত ১০টি নতুন ধানের চাষাবাদ করেছি। পুরনো জাতের তুলনায় নতুন জাত প্রায় দ্বিগুন ফলন দেয়। নতুন জাতের ধানে রোগ বালাই নেই। তাই ব্রি’র নতুন জাত চাষাবাদে বাড়তি ফলন পেয়ে লাভবান হচ্ছি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাফরোজা আক্তার বলেন, ব্রি উদ্ভাবিত নতুন-নতুন ধানের জাতগুলো ক্লাইমেট স্মার্ট। তাই এসব জাতের ধান শীত, বন্যা, খরা ও লবন সহিষ্ণু। আমরা কৃষকদের পুরনো জাতের ধান বাদ দিয়ে এসব নতুন জাতের ধান চাষাবাদে পরামর্শ দিচ্ছি। এসব ধানের আবাদ করে কৃষক ধানের অধিক ফলন পেয়ে লাভবান হচ্ছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নিটুল রায় বলেন, ধান গবেষণা উদ্ভাবিত উফশী জাতগুলো হেক্টরে ৬ থেকে ৭ দশমিক ৫ টন ফলন দিচ্ছে। এছাড়া ব্রি হাইব্রিড ধান-৩, ব্রি হাইব্রিড ধান-৫ জাত হেক্টরে ৯ থেকে ১০ টন পর্যন্ত  ফলন দিচ্ছে। ব্রি উদ্ভাবিত ধানের উফশী বা হাইব্রিড নতুন জাতের আবাদ বৃদ্ধি পেলে দেশে ধানের উৎপাদন বাড়বে। কৃষক লাভবান হবেন।