শিরোনাম
ঢাকা, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বুধবার এক বিদায়ী ভাষণে আমেরিকান জনগণকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছত্রছায়ায় গঠিত হতে থাকা একটি ‘বিপজ্জনক অলিগার্কি’ সম্পর্কে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, আগামী সপ্তাহে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর প্রক্কালে ওভাল অফিস থেকে এক প্রাইমটাইম ভাষণে ৮২ বছর বয়সী এই ডেমোর্ক্যাট প্রেসিডেন্ট একটি অতি-ধনী ‘প্রযুক্তি শিল্প জোট’ আমেরিকার জনগণের ওপর সীমাহীন ক্ষমতা অর্জন করতে পারে বলে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন।
তিনি বলেন, ‘আজ আমেরিকায় একটি অলিগার্কি গঠিত হচ্ছে, যার মাধ্যমে বিপুল সম্পদ, ক্ষমতা ও প্রভাব (দেশের) গণতন্ত্র, মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ফেলছে।’
বাইডেন তার চার বছরের শাসনামলের উত্তরাধিকার তুলে ধরে বক্তব্য শুরু করেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, এর সুফল পেতে হয়তো সময় লাগবে, তবে ভবিষ্যতের জন্য এর বীজ বপন করা হয়েছে।
কিন্তু তিনি বিশেষত বিলিয়নিয়ার ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রযুক্তি মোগল ইলন মাস্ক এবং অন্যান্য টেক টাইকুনদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের দিকে ইঙ্গিত করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামনে থাকা বিভিন্ন বিপদের কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘অতি-ধনী হাতে গোন কিছু মানুষের হাতে ক্ষমতার বিপজ্জনক কেন্দ্রীকরণ হচ্ছে, ক্ষমতার অপব্যবহার হলে এটি ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনতে পারে।’
বাইডেন সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ‘ট্রাম্পের মন জয় করতে ইলন মাস্ক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সকে একটি ডানপন্থী প্ল্যাটফর্মে পরিণত করেছেন এবং মেটার প্রধান মার্ক জাকারবার্গ যুক্তরাষ্ট্রে ফ্যাক্ট-চেকিং কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন।’
বাইডেন আরও বলেন, ‘আমেরিকানরা বিভ্রান্তি এবং মিথ্যা তথ্যের প্রবল তরঙ্গের নিচে চাপা পড়ছে।’
বাইডেন বলেন, ‘মুক্ত গণমাধ্যম ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। সম্পাদকরা হারিয়ে যাচ্ছেন। সোশ্যাল মিডিয়া ফ্যাক্ট-চেকিং থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। ক্ষমতা ও লাভের আশায় বলা মিথ্যা দিয়ে সত্যকে ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে।’
১৯৬১ সালে প্রেসিডেন্ট ডোয়াইট আইজেনহাওয়ারের বিদায়ী ভাষণে সামরিক শিল্প জোটের বিপদ সম্পর্কে দেওয়া সতর্কবার্তার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বাইডেন বলেন, ‘আমি প্রযুক্তি শিল্প জোটের সম্ভাব্য উত্থান নিয়ে একইভাবে উদ্বিগ্ন।’
ট্রাম্প জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় মার্কিন প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসার পরিকল্পনা করছেন এমন সময় বাইডেন সতর্ক করেন যে, ‘পরাক্রমশালী শক্তি’ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় তার অর্জনকে হুমকির মুখে ফেলছে।
তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) প্রসঙ্গেও সতর্ক করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে এই পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির ক্ষেত্রে চীনের চেয়ে এগিয়ে থাকতে হবে।
‘সবচেয়ে বড় সম্মান’
বাইডেন তার সুদীর্ঘ অর্ধ-শতাব্দীর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের সমাপ্তি লগ্নে বলেন, ‘কমান্ডার ইন চিফ হিসেবে আপনাদের নেতৃত্ব দেওয়া ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সম্মান।’
সোমবার ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ফিরে আসার প্রক্কালে বাইডেন আমেরিকানদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘এখন আপনাদের সতর্ক নজর রাখার পালা।’
ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন, ছেলে হান্টার ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ওভাল অফিসে উপস্থিত ছিলেন।
বক্তৃতার পর প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার পরিবারের সদস্যদের চুম্বন ও আলিঙ্গন করেন, যার মধ্যে তার ছোট নাতি বো-ও ছিলেন।
তবে এই বিদায়ী বক্তৃতার গুমোট সুর বাইডেনের স্বভাবগত ইতিবাচক বক্তব্য থেকে ছিল একবারে আলাদা। নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে তিনি মূলত তার প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্পের সমালোচনা কমিয়ে একটি মসৃণ ক্ষমতা হস্তান্তর নিশ্চিত করার চেষ্টা করছেন।
আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বর্ষীয়ান এই প্রেসিডেন্ট তার শেষ কয়েক মাস মূলত নিজের প্রশাসনের উত্তরাধিকার মজবুত করার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তবে, তিনি সেই ব্যক্তির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে যাচ্ছেন, যাকে ২০২০ সালের নির্বাচনে পরাজিত করেছিলেন তিনি। অবশ্য সে ফলাফল ট্রাম্প এখনও মেনে নেননি।
বাইডেনের প্রচেষ্টাগুলোর একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হলো- ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে গাজায় বুধবারের যুদ্ধবিরতি এবং বন্দী বিনিময় চুক্তিতে সম্মত হওয়া। বাইডেন এ নিয়ে ট্রাম্পের টিমের সঙ্গে বিরল সহযোগিতার প্রশংসা করেছেন।
তবে নিজের বার্ধ্যক্য সত্ত্বেও দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং পরে সরে দাঁড়ানোর বিষয়টি বাইডেন প্রশাসনের ওপর একটি বড় ধাক্কা নিয়ে আসে।
২০২৪ সালের জুন মাসে এক বিতর্কে ট্রাম্পের কাছে বড় পরাজয়ের পর তিনি প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন। পরে নির্বাচনে ট্রাম্প কমলা হ্যারিসকে সহজেই পরাজিত করেন।
সিএনএন-এর একটি জরিপে দেখা গেছে, বাইডেন একজন অজনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিদায় নিতে যাচ্ছেন। বুধবার প্রকাশিত জরিপে তার সমর্থনের হার ছিল ৩৬ শতাংশ, যা তার মেয়াদের সবচেয়ে কম।
তবে এই হার ট্রাম্পের চেয়ে কিছুটা বেশি, যিনি ৩৪ শতাংশ সমর্থন নিয়ে অফিস ছেড়েছিলেন। নিকট অতীতে সবচেয়ে কম জনপ্রিয় বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ছিলেন রিচার্ড নিক্সন, যার সমর্থন হার ছিল ২৪ শতাংশ। আর ক্লিনটন ৬৬ শতাংশ নিয়ে ছিলেন সর্বোচ্চ। আর বারাক ওবামার অবস্থান ছিল তার নিচে। তিনি ৫৯ শতাংশ সমর্থন নিয়ে ক্ষমতা ছাড়েন।