বাসস
  ০৬ নভেম্বর ২০২৩, ১৬:৫০

বাবার জামিন, আপাতত শিশু থাকবে ভারতীয় মায়ের কাছে : আপিল বিভাগ

ঢাকা, ৬ নভেম্বর ২০২৩ (বাসস) : আদেশ না মেনে শিশুকে নিয়ে দেশত্যাগ করায় আদালত অবমাননার মামলায় ছয় মাসের দ-িত বাবা সানিউর টি আই এম নবীকে জামিন দিয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ আজ  আদেশ দেন। বিষয়টি নিয়ে পারিবারিক আদালতে থাকা মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শিশুটি মা সাদিকা শেখের কাছে থাকবে। বাবা সপ্তাহে দুদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শিশুটির সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। তবে আদালতের অনুমতি ছাড়া শিশুকে দেশের বাইরে নেয়া যাবে না। শিশুটির মা ভারতের হায়দরাবাদের নাগরিক।
আদালতে শিশুটির বাবার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মুন্সী মনিরুজ্জামান। মায়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী কাজী মারুফুল আলম।  
এর আগে একটি মানবাধিকার সংগঠন হাইকোর্টে রিট করে। হাইকোর্ট প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ২৬ আগস্ট মাসহ শিশুকে হাজির করতে নির্দেশ দেন। হাজিরের পর ওইদিন শিশুকে মায়ের জিম্মায় দিয়ে বাবাকে সপ্তাহে তিন দিন দেখা করার সুযোগ দেন।   
এডভোকেট কাজী মারুফুল আলম বলেন, ওই আদেশের পর শিশুর কথা চিন্তা করে গুলশান ক্লাবে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। এর মধ্যে শিশুর মায়ের বিরুদ্ধে জিডি করেন বাবা। জিডি মূলে নন-এফআইআর মামলাও হয়। আর কৌশলে শিশুটিকে নিয়ে যান বাবা। বিষয়টি আদালতে জানালে ১৫ নভেম্বর হাইকোর্ট শিশুটিকে পরদিন সকাল ১০টার মধ্যে আইনজীবীর চেম্বারে হাজির করতে বলেন। কিন্তু শিশুকে হাজির করেননি তারা। এ কারণে আবেদনে শিশুকে বিদেশ নেয়ায় নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। ১৭ নভেম্বর আদালত ওই শিশুকে বাবাসহ ২১ নভেম্বর বিকেল ৩টার মধ্যে আদালতে হাজির করতে পুলিশের ঢাকা মহানগর কমিশনার ও গুলশান থানার ওসিকে নির্দেশ দেয়।
শিশুকে নিয়ে ১৬ নভেম্বর বাবা দেশত্যাগ করেছেন। এরপর আদালত শিশুর দাদাকে তলব করেন। ওই বছরের ১৫ ডিসেম্বর হাইকোর্ট আদালতের আদেশে শিশুকে হাজির না করে বিদেশ চলে যাওয়ায় বাবা সানিউর টি আই এম নবীকে ছয় মাসের সশ্রম কারাদ- দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাকে এক লাখ টাকা অর্থদ- দেয়া হয়, অনাদায়ে আরও এক মাস কারাদ- দেন উচ্চ আদালত।
এরপর চলতি বছরের ২৩ অক্টোবর সানিউর আত্মসমর্পণ করেন এবং ওই দ-ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে জামিন চান। এর মধ্যে আজ সকালে শিশুটিকে মায়ের জিম্মায় দেয়া হয়।
২০১৭ সালে হায়দরাবাদের সাদিকা শেখ নামের এক নারীকে বিয়ে করেন বারিধারার সানিউর টি আই এম নবী। বিয়ের পর তারা মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে বসবাস শুরু করেন। কয়েক মাস পর তারা ঢাকায় ফিরে আসেন। এরই মধ্যে ওই দম্পতির এক ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু করোনাকালে তাদের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন দেখা দেয়। এমনকি ভারতের আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সাদিকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। বিষয়টি ভারতে মেয়ের স্বজনরা জানতে পারেন।  
এরপর ওই দেশ থেকে তাদের পরিবারের পক্ষে প্রথমে ভারতীয় হাইকমিশনে যোগাযোগ করা হয়। এতেও বিষয়টি সমাধান হয়নি। পরে সাদিকার বোন মানবাধিকার সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ল’ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ফ্লাড) কাছে আইনি সহায়তা চান। এর মধ্যে সাদিকাকে ডিভোর্স দেন নবী।