বাসস
  ১০ নভেম্বর ২০২৩, ২২:৪৬

বাংলাদেশ বিষয়ে জাতিসংঘের কিছু পর্যবেক্ষণ তথ্য-ভিত্তিক নয় : বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ

ঢাকা, ১০ নভেম্বর, ২০২৩ (বাসস) : জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার একটি ত্রুটিপূর্ণ প্রতিবেদনে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রায় ৮৬ জন মানবাধিকার কর্মী, যুদ্ধাপরাধ বিরোধী আন্দোলনকর্মী, সংখ্যালঘু নেতা, লেখক এবং সমাজ কর্মীরা বলেছেন, গত ৩১ অক্টোবর, ২০২৩ তারিখে জাতিসংঘ  মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার কার্যালয়ের বিবৃতিতে ঘটনার সত্যতা প্রতিফলিত হয়নি।
'বাংলাদেশ রাজনৈতিক প্রতিবাদ' শীর্ষক ব্রিফিংয়ের প্রসঙ্গে বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা বলেন, "জাতিসংঘের সংস্থাটির বিবৃতিটির কিছু পর্যবেক্ষণ সত্য তথ্য ভিত্তিক নয় এবং তাই এগুলো পুনর্বিবেচনা করা উচিত" এবং জাতিসংঘের সংস্থাকে সংশ্লিষ্ট বিষগুলো সম্পর্কে তথ্য ও পরিসংখ্যান আরও যাচাই করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছে।
স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও পরিবেশবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. সারওয়ার আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক উপাচার্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান খান, সাবেক সচিব ও বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) এর সাবেক সদস্য কে.এইচ.মাসুদ সিদ্দিকী,  বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি), সচিব ও কলামিস্ট মোহাম্মদ নুরুল হুদা, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মুস্তাফিজুর রহমান, সাবেক সচিব ও বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের  (পিএসসি) সাবেক সদস্য  উজ্জ্বল বিকাশ দত্ত, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য  অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়–য়া, প্রমুখ।
তারা আরও উল্লেখ করেছে যে, এই ধরনের বিবৃতি আপত্তিজনক যা তথ্য ভিত্তিক নয় এবং তা আরও সুস্পষ্টভাবে অপরাধীদেরকে তাদের জঘন্য হিংসাত্মক কার্যকলাপ চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করতে পারে।
গত ২৮ অক্টোবর থেকে দেশে অব্যাহতভাবে অগ্নিসংযোগ, পুলিশের উপর হামলাসহ সহিংসতা ঘটেছে যখন বিরোধী দল বিএনপি-জামায়াত অবরোধ পালন করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'রাজনৈতিক প্রতিবাদ' হিসাবে নির্মম অগ্নিসংযোগ, পুলিশ হত্যা, মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা এবং বিবেকহীন ভাংচুরসহ সকল নজিরবিহীন সহিংসতা অপরাধীদেরকে জঘন্য হিংসাত্মক কার্যকলাপ চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করতে পারে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, "আমরা এখানে ২৮ অক্টোবর এবং তারপরে আসলে কী ঘটেছিল তা আরও ভালভাবে বোঝার জন্য বলতে চাই- নির্মম অগ্নিসংযোগ, পুলিশ হত্যা, মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা এবং ভাঙচুরসহ সকল নজিরবিহীন সহিংসতাকে 'রাজনৈতিক প্রতিবাদ' হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।  
তদুপরি, বিবৃতিতে ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে একটি ভুল ধারণা প্রতিফলিত হয়েছে এবং এতে 'তাদেরকে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক বলে মনে করা হয়েছিল'।
মিডিয়া রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সহিংসতার সময় বিশেষ করে ছয়জন বিরোধী দলের সদস্যসহ ১১ জনের মৃত্যুর বিষয়ে নোটে যা দাবি করা হয়েছে তা বিভ্রান্তিকর।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, রফিক ভূঁইয়া (৭৩) নগরীর সেগুনবাগিচা এলাকায় রিকশা থেকে পড়ে ব্রেন হ্যামারেজের কারণে মারা গেছেন বলে তার মেয়ে ঊর্মি ভূঁইয়ার বরাত দিয়ে গণমাধ্যম জানালেও বিএনপি রফিককে হত্যার জন্য পুলিশের ওপর দোষ চাপিয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে, দুই গার্মেন্টস শ্রমিক রাসেল হাওলাদার ও এমরান হোসেন পৃথক ঘটনায় মারা গেছেন। অন্যদিকে, জাহাঙ্গীর আলম ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা এবং গত ২৯শে অক্টোবর লালমনিরহাটে বিএনপির লোকজনের হাতে নিহত হন। শামীম নামে আরেকজন, যিনি ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশস্থলে পদদলিত হয়ে মারা যান। তার বাবা ইউসুফের দাবি অনুযায়ী তিনি রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন না।
"প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারপতিদের  বাসভবনে হামলাকারী সকল দুর্বৃত্তকে বিএনপি কর্মী হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও, বিবৃতিতে প্রকৃত পরিস্থিতির প্রতিফলন ঘটেনি। এমনটি করতে গিয়েও মনে হয়েছে যে, বিরোধীরা তথাকথিত হামলা চালিয়েছে বলে সন্দেহের সুফল দুষ্কৃতকারীদের পক্ষে গেছে।
আন্দোলনকারী বিরোধীদলগুলো ' পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল হক পারভেজকে ২৮ অক্টোবর নয়া পল্টনে বিএনপির সমাবেশস্থলের কাছে নির্মমভাবে হত্যা করে এবং ২৯ অক্টোবর ভোররাতে ঘুমন্ত অবস্থায় বাসের হেলপার মোঃ নাঈমকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়। '
একজন বিরোধী কর্মী আব্দুর রশিদের মৃত্যু নিয়ে শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার লিখেছে, 'বিএনপি কর্মী মৃত্যু হয়েছে ছাদ তেকে পড়ে গিয়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের উদ্ধৃত করে, বেশিরভাগ মূলধারার মিডিয়া বলেছে, ২৯ অক্টোবর শহরের অন্য অংশে একটি বাসে আগুন লাগানোর পরে পালিয়ে যাওয়ার সময় একটি নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ থেকে পড়ে তার মৃত্যু হয়েছিল।
যুবদল কর্মী জিলু আহমেদ গত ৩১ অক্টোবর ঢাকা থেকে প্রায় ২৩৫ কিলোমিটার দূরে সিলেটের একটি মহাসড়কে একটি দলীয় মিছিলে যোগ দেওয়ার সময় তার দ্রুতগামী মোটরসাইকেল একটি গাছের সাথে ধাক্কা লেগে গুরুতর আহত হন।
পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। বিভিন্ন সূত্র থেকে আমরা জানতে পেরেছি যে, বিল্লাল হোসেন ও রিফাত উল্লাহ বিএনপির প্রায় ১,৫০০ জন উচ্ছৃঙ্খল লোকের মধ্যে যারা সহিংস বেআইনি সমাবেশ গড়ে তোলে এবং কর্তব্যরত পুলিশকে আক্রমণ করেছিল। ৩১ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচরে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুজনেই মারা যান।
প্রধান বিচারপতি ও সুপ্রিম কোর্টের অন্যান্য বিচারপতিদের বাসভবনে নজিরবিহীন হামলায় গোটা জাতি হতবাক। প্রায় ৩৫ জন সাংবাদিককে আহত করার ঘৃণ্য হামলাও জাতিকে হতবাক করেছে। পুলিশ ইতিমধ্যেই ঘটনার সঙ্গে জড়িত মুখোশধারী বা মুখোশহীন হামলাকারীদের চিহ্নিত করেছে এবং বিএনপির সঙ্গে তাদের সুস্পষ্ট সংযোগ খুঁজে পেয়েছে।
পুলিশ সদস্যদের পিটিয়ে হত্যার ভিডিও ফুটেজে কিছু হামলাকারীকে মুখোশ পরা অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। ওএইচসিএইচআর অনুমান করেছে যে, মুখোশধারী হামলাকারীরা শাসক দলের লোক। এটা ভুল এবং গভীর পর্যবেক্ষণের দাবি রাখে।  
উল্লেখ্য, গত ২৮ অক্টোবর 'প্রেস' লেখা ভেস্ট পরিহিত হয়ে ঢাকা-দক্ষিণ যুবদলের (বিএনপি) সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করছেন এমন ছবি ও ভিডিওসহ সব গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ করে।
ব্রিফিংয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, পুলিশ রড নিয়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা করছে। এটি তথ্য ভিত্তিক নয়। হামলাকারীরা চরম হিংস্র হয়ে উঠলে পুলিশ আইন অনুযায়ী শুধুমাত্র লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
নির্বিচারে অভিযান ও গ্রেপ্তারের বিষয়ে হাইকমিশনার কার্যালয়ের অভিযোগের এটি বোঝা যায় যে, ২৮ অক্টোবর পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় চরম ধৈর্য দেখিয়েছিল।
 তারা  আরো বলেন, "সংঘটিত নৃশংসতার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের পদক্ষেপের মূল্যায়ন করার জন্য, আমরা ওএইচসিএইচআরকে এ বিষয়গুলো বিবেচনার অনুরোধ করছি যে, প্রধান বিচারপতি ও সুপ্রিম কোর্টের অন্যান্য বিচারকদের বাসভবনে আক্রমণ করা হয়েছে, সাংবাদিকের উপর বিবেকহীন হামলা, নৃশংসতা ও বর্বরতা, পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল, সেন্ট্রাল পুলিশ হাসপাতাল ভাংচুর করা হয়েছে, সেখানে আগুন দেওয়া হয়েছে, কয়েক ডজন গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে, বাংলাদেশ পুলিশের কেন্দ্রীয় ও বৃহত্তম পুলিশ লাইনে আক্রমণ করা হয়েছে, নিরীহ মানুষ পুড়িয়ে মারা হয়েছে।”