বাসস
  ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯:১৮

চাঁদাবাজি প্রতিরোধ স্কোয়াড প্রতিষ্ঠার জন্য টাস্কফোর্সের সুপারিশ  

শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন। ছবি: পিআইডি

ঢাকা, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একটি টাস্কফোর্স সমাজের সর্বক্ষেত্রে বিস্তৃত ব্যাপক চাঁদাবাজি মোকাবেলায় একটি স্বাধীন ‘চাঁদাবাজি প্রতিরোধ স্কোয়াড’ প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেছে।

টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "ট্রেনের টিকিট কেনা বা পাসপোর্ট প্রাপ্তির মতো বিভিন্ন সরকারি পরিষেবা লাভের ক্ষেত্রে নাগরিকরা যেসব সমস্যার সম্মুখীন সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সমস্যা হল চাঁদাবাজির ব্যাপকতা। সমাজে গভীরভাবে প্রোথিত সমস্যাটি সরকারি পরিষেবাগুলোর বাইরেও বাজার, পরিবহন ব্যবস্থা এবং নির্মাণকাজের ক্ষেত্রেও বিস্তৃত।" 

তাই, এই জরুরি উদ্বেগ মোকাবেলায় টাস্কফোর্স স্বাধীন "চাঁদাবাজি প্রতিরোধ স্কোয়াড" প্রতিষ্ঠার জন্য দৃঢ়ভাবে সুপারিশ করেছে।

টাস্কফোর্স আরও বলেছে যে, এই বিশেষ ইউনিটটি সরকারি খাতের মধ্যে কাজ করতে পারে অথবা বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে আউটসোর্স করা যেতে পারে। তবে, এক্ষেত্রে অপব্যবহার রোধ করার জন্য শক্তিশালী সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকতে হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "তাছাড়া, যুব ও নাগরিক গোষ্ঠীগুলোর পর্যবেক্ষণ ও তদারকি অবশ্যই স্কোয়াডের কার্যকারিতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করবে। উদ্ভুত চ্যালেঞ্জগুলোর ক্ষেত্রে উদ্যোগটিকে সক্রিয় রাখার জন্য এর পরিচালনা পদ্ধতিতে অব্যাহতভাবে সমন্বয় বজায় রাখার প্রয়োজন হবে।" 

ডিজিটাল এবং এআই প্রযুক্তির ব্যবহার

টাস্কফোর্স বলেছে যে, ডিজিটাল এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার সহজতর করার জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিতে ব্যাপকভাবে কৌশলগত জোর দেওয়া প্রয়োজন।

উদাহরণস্বরূপ, স্যাটেলাইট সেন্সিং প্রযুক্তি ব্যবহার কৃষি কাজ উন্নত করার জন্য ফসলের পূর্ব-সতর্কীকরণ ব্যবস্থা সক্ষম করতে পারে। অন্যদিকে, দূরশিক্ষণ নিশ্চিত করতে পারে যে, ভৌগোলিক বাধা নির্বিশেষে শিক্ষা নিরবচ্ছিন্নভাবে অব্যাহত থাকবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "এসব উন্নত প্রযুক্তিকে সমন্বিত করে, আমরা একাধিক ক্ষেত্রে গুণমান, দক্ষতা ও সুবিধা লাভের সুযোগ উন্নত এবং জনগণের জীবন মান উন্নত করতে পারি।" 

ডিজিটাল বৈষম্য হ্রাস

টাস্কফোর্স বিদ্যমান ডিজিটাল বৈষম্য দূর করার জন্য ডিজিটাল এবং এআই প্রযুক্তি কার্যকরভাবে ব্যবহারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল গ্রহণের সুপারিশ করেছে।

প্রতিবেদনে ডেটা খরচ কমানো, সাশ্রয়ী মূল্যে স্মার্টফোনের প্রাপ্তি বৃদ্ধি করা- বয়স-নির্দিষ্ট বিষয়বস্তুর জন্য উপযুক্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবায়িত করা এবং দেশীয় সফ্টওয়্যার ও হার্ডওয়্যার ভিত্তিক আইসিটি শিল্পের বিকাশকে উৎসাহিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, "ব্যাপক ডিজিটাল সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে, আমরা নাগরিকদের ক্ষমতায়ন করতে পারি, ডিজিটাল সাক্ষরতা বৃদ্ধি করতে পারি এবং আইসিটি খাতে উদ্ভাবনকে উদ্দীপিত করতে পারি।" 

পরিকল্পনা প্রক্রিয়া সংস্কার

বাংলাদেশের পরিকল্পনা প্রক্রিয়া উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে যার ফলে নীতি বাস্তবায়নে অদক্ষতা ও সমন্বয়ের অভাব দেখা দিয়েছে। এই প্রক্রিয়া সংস্কার করা অত্যন্ত জরুরি।

টাস্কফোর্স বলেছে, এই সংস্কার উদ্যোগের জন্য সুশাসন অনুশীলন, পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন কাঠামো এবং উন্নত নীতি নির্ধারণ প্রক্রিয়াগুলিতে ব্যাপকভাবে জোর দেওয়া প্রয়োজন। উন্নয়ন লক্ষ্যগুলো কার্যকর ও দক্ষতার সাথে পূরণ করা নিশ্চিত করার জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন ব্যবস্থা ও আন্ত:বিভাগীয় সমন্বয় বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিতে হবে।

নেতৃত্বের পেশাদারিত্ব

টাস্কফোর্স প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাব থাকতে পারে এমন জেনারেলিস্ট নিয়োগের পরিবর্তে কারিগরি অধিদপ্তর, বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে নেতৃত্বের পদে যোগ্য টেকনোক্র্যাটদের নিয়োগ করতে সরকারের কাছে সুপারিশ করেছে।

প্রথাগত অনুশীলন থেকে এই ধরণের পরিবর্তন নিশ্চিত করবে যে, নেতৃত্ব তাদের কার্যক্ষেত্রের সাথে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম ও অবগত থাকবে।

প্রতিবেদন অনুসারে, এই ধরনের কৌশলগত পরিবর্তনের তাৎক্ষণিক সুবিধাগুলির মধ্যে রয়েছে প্রকল্পের উন্নত সুফল লাভ, উন্নত পরিষেবা প্রদান এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে জবাবদিহিতা বৃদ্ধি।

শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সম্প্রতি "সমতাপূর্ণ ও টেকসই উন্নয়নের জন্য অর্থনীতির পুনর্কৌশলীকরণ এবং সম্পদ সংগ্রহ" বিষয়ক টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করেছেন।

উন্নয়ন কৌশল পুনর্গঠন, আর্থিক ব্যবস্থায় ফাঁকফোকর খুঁজে বের করা এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের জন্য গত ১০ সেপ্টেম্বর ১২ সদস্যের এই টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছিল।