শিরোনাম
ঢাকা, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : রুশ দার্শনিক ও চিন্তাবিদ অ্যালেক্সান্ডার ডুগিন মনে করেন বিশ্ব এক-মেরুকেন্দ্রীক ব্যবস্থা থেকে কয়েক-মেরুকেন্দ্রীক ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং ইরান ও রাশিয়ার মত দেশগুলোকে এই ঐতিহাসিক ক্রান্তি-লগ্নের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার সংস্থা সাহাব নেটওয়ার্ককে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বিশ্বের ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ট্রাম্পের ক্ষমতা ফিরে পাওয়া, নতুন বহুজাতিক ব্যবস্থায় ইরান ও রাশিয়ার অবস্থান এবং মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে কথা বলেছেন।
মার্কিন কৌশলগত নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসার কথা তুলে ধরে ডুগিন মত প্রকাশ করেন যে, লিবারেলিজম বা কথিত উদারনৈতিকতাবাদ ও বিশ্বায়ন-ভিত্তিক মার্কিন একাধিপত্য বা কর্তৃত্ববাদীতার অবসান ঘটেছে। সাংস্কৃতিক প্রভাব খাটানো, স্বাধীন দেশগুলোর সার্বভৌমত্বকে দুর্বল করা ও প্রচারণা-ভিত্তিক কৃত্রিম বিপ্লব বা রঙ্গিন বিপ্লবগুলোকে নেপথ্য থেকে পরিচালনা করা এসবের পরিবর্তে এখন যে নতুন কৌশল মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বেছে নিয়েছে তা হল এক ধরনের সাম্রাজ্যবাদী-জাতীয়তাবাদ। এ পর্যায়ে ওয়াশিংটন বিশ্বের নেতা সেজে নয় বরং এক স্বতন্ত্র সাম্রাজ্য হিসেবে নিজ স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা চালিয়ে যাবে।
ডুগিন মনে করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়ার নামে ট্রাম্প এখন বিশ্ব-ব্যবস্থার নতুন সংজ্ঞা দেয়ার চেষ্টা করছেন এবং বিশ্বায়নকামী নীতিগুলো পরিত্যাগের মাধ্যমে। এর অর্থ প্রথাগত জোটবদ্ধতার ওপর নির্ভরতা কমিয়ে ও বিভিন্ন অঞ্চলে সরাসরি মার্কিন পেশী-শক্তি প্রদর্শন করার নতুন কৌশল প্রয়োগ করছে ওয়াশিংটন। এ অবস্থায় রাশিয়া ও ইরান দুই স্বাধীন শক্তি হিসেবে পশ্চিমা আধিপত্যবাদের কারণে অতীতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রেক্ষাপটে মার্কিন কৌশল পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট নানা সুযোগগুলোকে কাজে লাগাতে পারে বলে ডুগিন মনে করেন। তার মতে ট্রাম্প অতীতের মতই ইরান-বিরোধী নীতি অব্যাহত রাখলেও তেহরানকে মোকাবেলার ক্ষেত্রে তার কৌশল হবে বাইডেনের কৌশলের চেয়ে ভিন্ন। ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রশাসনের ‘পর্যায়ক্রমিক ক্ষয় সাধন’ কৌশলের বিপরীতে ট্রাম্প সরাসরি ও দ্রুত চাপ দেয়ার নীতি ব্যবহার করতে চাইবেন। ডুগিনের মতে ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতিতে ইসরাইল আগের মতই প্রাধান্য পাবে, ফলে ইরান ও প্রতিরোধ অক্ষের ওপর মার্কিন চাপ বাড়তেই থাকবে। তবে ট্রাম্পের ডানপন্থী সহযোগী গ্রুপগুলোর ভেতরে ইসরাইলকে লাগামহীন ও নিঃশর্ত সাহায্য দেয়ার বিরোধী প্রতিবাদী কণ্ঠও শোনা যাচ্ছে।
ডুগিন ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে কৌশলগত ঐক্যকে সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম প্রধান ভূরাজনৈতিক ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করে এই ঐক্য সামরিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারে সহায়ক হবে বলে মন্তব্য করেছেন। তাঁর মতে ইরানের উচিত রাশিয়ার পারমাণবিক ছায়াতলে আশ্রয় নেয়া এবং বিনিময়ে রাশিয়া এই অঞ্চলে ইরানের ভূ-রাজনৈতিক সুবিধাগুলোকে ব্যবহার করতে পারে। যার মধ্যে রয়েছে পারস্য উপসাগর ও দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের সুবিধা। তার মতে রুশ-মার্কিন ঐক্যের এই বিষয়টি কেবল কৌশল হিসেবেই জরুরি নয় এক নতুন সভ্যতার ভিত্তি গড়ার কাজেও পশ্চিমা চাপগুলো ঠেকানোর জন্য জরুরি।
ডুগিন ফিলিস্তিন ও গাজার সাম্প্রতিক ঘটনা-প্রবাহ সম্পর্কে বলেছেন, এই সংঘাত বিশ্বে ইসরাইল সম্পর্কে অতীতের যে ধারণা ছিল তা বদলে দিয়েছে। ইসরাইল গত কয়েক দশকে নিজেকে নির্যাতিত বা মজলুম হিসেবে তুলে ধরতে সফল হয়েছিল। কিন্তু গাজায় বেসামরিক জনগণের ওপর ইসরাইলের নির্বিচার গণহত্যা ওই চিত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে এবং বিশ্ব-জনমত এখন ইসরাইলের বিপক্ষে। আর এটাই সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসরাইলের সবচেয়ে বড় পরাজয়।