পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মেজর জিয়ার নেতৃত্বে বিদ্রোহ করি : অলি আহমদ

বাসস
প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২০২৫, ১১:৪৫ আপডেট: : ২৫ মার্চ ২০২৫, ১৫:২২
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম। ফাইল ছবি

\ মুরসালিন নোমানী \

ঢাকা, ২৫ মার্চ, ২০২৫ (বাসস) : লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম বলেছেন, ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ঢাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্র্যাকডাউনের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তৎকালীন মেজর জিয়ার নেতৃত্বে আমি সর্বপ্রথম ৮ম বেঙ্গল রেজিমেন্টকে নিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করি।’

রাজধানীর মহাখালীর ডিওএইচএস-এর বাসভবনে রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসস’কে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে মহান স্বাধীনতা দিবসের স্মৃতি রোমন্থন করে সাবেক মন্ত্রী অলি আহমদ এ কথা বলেন।

কর্নেল (অব.) অলি আহমদ আরও বলেন, ‘১৯৭১ সালে আমি ছিলাম চট্টগ্রামে ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত তরুণ একজন অফিসার। সেনাবাহিনীর সদস্য হয়েও জনগণের পক্ষে ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করার অভিজ্ঞতা আমার হয়েছিল।’ 

অলি আহমদ বলেন, স্বাধীনতাযুদ্ধের পক্ষে ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে ঐক্যবদ্ধ করা এবং সঠিক সময়ে বিদ্রোহ করে অস্ত্রশস্ত্রসহ সদলবলে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার অভিজ্ঞতা ছিল খুবই রোমহর্ষক। ২৫ মার্চ রাতে ঢাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্র্যাকডাউনের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মেজর জিয়ার নেতৃত্বে আমি সর্বপ্রথম ৮ম বেঙ্গল রেজিমেন্টকে নিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করি। সে সময় বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক ছিলেন কর্নেল আব্দুর রশিদ জানজুয়া এবং সহ-অধিনায়ক ছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান। 

এলডিপি’র প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘১৯৭৩ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নিজ হাতে লেখা একটি ডক্যুমেন্ট আমার (অলি) কাছে আছে। সেখানে তিনি (শহীদ জিয়া) লিখেছেন, ক্যাপ্টেন অলি আহমদ বিদ্রোহের জন্য মুখ্য ভূমিকা পালন করেন।’

তিনি বলেন, ‘মেজর জিয়াউর রহমান ২৭ মার্চ কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তিনি যখন স্বাধীনতা ঘোষণা করেন, তখন আমি পাশে বসেছিলাম।’

‘পটিয়া থানায় বসে আমরা স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই’- এ কথা উল্লেখ করে অলি আহমদ বলেন, ‘আমি  সে সময় জিয়াউর রহমানকে বললাম, আপনি রেডিও স্টেশনে চলে যান। তাকে আমি গার্ড দিয়ে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে পাঠিয়ে দিলাম । এটা ছিল ট্রান্সমিটিং স্টেশন। এটাকে কিছুটা পরিবর্তন করে ব্রডকাস্টিং স্টেশন করা হয়।’ 

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করে অলি আহমদ আরো বলেন, ‘২৭ মার্চ সকালে জিয়াউর রহমান ও আমি পটিয়া থানায় উপস্থিত হই। ঠিক ওই সময় ওই স্থানে আসেন মাহমুদ নামের একজন ব্যক্তি। তিনি প্রায় ৬ ফুট ২ ইঞ্চি লম্বা। তিনি থানার ভেতরে প্রবেশ করে বললেন, এখানে ক্যাপ্টেন অলি আহমদ কে ? আমাদের কাঁধে কোন ব্যাচ ছিলো না। শুধু খাকি ইউনিফর্ম পরা। আমি তাকে থানার বারান্দায় ডেকে নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি ক্যাপ্টেন অলিকে কেনো তালাশ করছেন? তিনি উত্তরে বললেন, ক্যাপ্টেন অলিকে স্বাধীনতা ঘোষণা করতে হবে। কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, অলি আহমদ চট্টগ্রামের সন্তান। তিনি যদি স্বাধীনতা ঘোষণা করেন তাহলে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসবেন। জবাবে আমি বললাম, কক্ষের ভেতরে যিনি বসে আছেন, উনি হলেন মেজর জিয়াউর রহমান। তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা করবেন। এরপর মেজর জিয়ার সঙ্গে আমার এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই মেজর জিয়াউর রহমান মাহমুদকে সাথে নিয়ে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। আমি মেজর জিয়াকে বললাম, বোয়ালখালী থানার ফুলতলা প্রাইমারি স্কুলে আমি আর্মি হেড কোয়ার্টার স্থাপন করে কিছুক্ষণের মধ্যেই কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে উপস্থিত হব। আমি উপস্থিত হওয়ার আগেই তৎকালীন মেজর জিয়া বেতার ভাষণের জন্য বিষয়বস্তু লিপিবদ্ধ করেন। আমি উপস্থিত হয়ে দু’টি সংশোধনী করেছিলাম। জিয়াউর রহমান সংশোধনীগুলো গ্রহণ করেছিলেন।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য অলি আহমদ বলেন, ‘কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র ছিল মূলত ট্রান্সমিশন স্টেশন। ওটাকে ব্রডকাস্টিংয়ের জন্য রূপান্তর করা হলো একদল টেকনিশিয়ানের মাধ্যমে। সন্ধ্যা নাগাদ মেজর জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন।’ 

তিনি ঘোষণায়, পৃথিবীর অন্যান্য রাষ্ট্রকে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার অনুরোধ জানান। এছাড়াও গোলা-বারুদ, অস্ত্র ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার হাত বাড়ানোর আহ্বান জানান। বিভিন্ন জায়গায় অবস্থানরত বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইপিআর, পুলিশ, ছাত্র-শ্রমিক এবং সাধারণ জনগণকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান। 

তিনি বলেন, ‘মূলত জিয়াউর রহমানের এই ভাষণ ছিল সমগ্র জাতির ও আন্তর্জাতিক বিশ্বের জন্য এক দিক নির্দেশনা। জাতি কখনো তার এ সাহসী ভূমিকার কথা ভুলবে না। এরপর পুরো চট্টগ্রাম ও বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ শুরু হয়। তবে এ যুদ্ধে আওয়ামী লীগের মধ্যম সারি বা উচ্চ সারির কোন নেতা সম্পৃক্ত ছিল না। পরে আমরা জানতে পারি, শেখ মুজিবুর রহমান স্বপ্রণোদিত হয়ে ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানীদের হাতে আত্মসমর্পণ করেন। অথচ দীর্ঘ নয় মাস আমরা পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করি।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
রাজধানীতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তিন শ্রমিকের মৃত্যু
হজ ও ওমরাহ পালনকে সহজ ও সাশ্রয়ী করার প্রয়াস অব্যাহত থাকবে : বিমান সচিব
অধ্যক্ষ আব্দুল জব্বারের মৃত্যুতে মির্জা ফখরুলের শোক প্রকাশ
বিএনপি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির রাজনীতি বিশ্বাস করে : সেলিমুজ্জামান
সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ঠেকাতে ইতিহাস চর্চায় মনোযোগ দিতে হবে : ড. মাহমুদুর রহমান
বাংলাদেশে সবার অধিকার সমান, এই দেশ সবার : সেনাবাহিনী প্রধান
ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতে সোমবার ওয়াশিংটন যাচ্ছেন জেলেনস্কি
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ছাড়া এতো রক্তপাত দেখিনি: মাহবুব মোর্শেদ
হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়ক ৪ লেনে ও বড়াইগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চলের দাবিতে মানববন্ধন
নতুন বাংলাদেশ গড়তে কোনো বিভাজন নয় : আমীর খসরু 
১০