ঢাকা, ৯ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস): এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর হো ইয়ুন জিওং বুধবার বলেছেন, তারা বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে রাজস্ব আহরণ, খেলাপি ঋণ এবং জ্বালানি নিরাপত্তার মতো বিষয়গুলোতে আরো গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের প্রত্যাশা করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি সরকার অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি, বর্ধিত অনাদায়ী ঋণের সমস্যা সমাধান, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য আরো গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার এগিয়ে নেবে।’
বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ আবাসিক মিশন অফিসে প্রকাশিত এডিবি’র সর্বশেষ প্রতিবেদন এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক (এডিও) এপ্রিল ২০২৫-এর বাংলাদেশ অধ্যায়ের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এডিবি কান্ট্রি ডিরেক্টর এই মন্তব্য করেন।
এডিবি’র দেশীয় অর্থনীতিবিদ চন্দন সাপকোটা একটি পাওয়ার-পয়েন্ট উপস্থাপনা উপস্থাপন করেন।
জিওং বলেন, ‘আমরা সরকারি বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনার উন্নতি আশা করি বিশেষ করে প্রকল্প প্রস্তুতি এবং বাস্তবায়ন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিনের উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে এডিবি নীতি-ভিত্তিক ঋণ, প্রকল্প বিনিয়োগ এবং কারিগরি সহায়তার মাধ্যমে এই ক্ষেত্রগুলোতে সরকারকে সহায়তা অব্যাহত রাখবে।
তিনি বলেন, ‘এডিবি বেসরকারি খাতের উন্নয়ন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের স্থিতিস্থাপকতা, ডিজিটাইজেশন, আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং আঞ্চলিক জনসাধারণের পণ্য, পাশাপাশি ক্ষমতায়নের ওপরও উচ্চ গুরুত্ব দেবে।’
জিওং বলেন, এডিবি আশা করছে, ২০২৫ অর্থবছরে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আরো মাঝারি হবে। তবে, আমরা ২০২৬ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ চাহিদার উন্নতির সাথে সাথে পুনরুত্থানের আশা করছি। আমরা আশা করছি মুদ্রাস্ফীতি উচ্চ থাকবে। মুদ্রানীতি সম্ভবত কঠোর থাকবে। ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতাগুলো সমাধানের ওপর জোর দেওয়া হবে যার মধ্যে ক্রমবর্ধমান অনাদায়ী ঋণও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।’
তিনি বলেন, বহিরাগত খাতে শক্তিশালী রেমিট্যান্স প্রবাহের কারণে এডিবি আশা করছে চলতি হিসাবের ঘাটতি কিছুটা কমবে।
তিনি আরও বলেন, একইভাবে রাজস্ব খাতে ঋণদানকারী সংস্থা আশা করছে, রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধি এবং সরকারি পুনরাবৃত্ত ব্যয় বৃদ্ধির প্রত্যাশায় রাজস্ব ঘাটতি ২০২৪ অর্থবছরের কাছাকাছি থাকবে।
অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির নেতিবাচক দিকগুলোর ঝুঁকি রয়েছে উল্লেখ করে এডিবি কান্ট্রি ডিরেক্টর বলেন, একগুঁয়ে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, দীর্ঘস্থায়ী আর্থিক কঠোরতা, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, প্রতিকূল আবহাওয়া ঘটনা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক শুল্কের ফলে সৃষ্ট বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার কারণে প্রবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
সমাপনী বক্তব্যে জিয়ং বলেন, বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল রয়েছে।
তিনি বলেন, উচ্চ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে এই স্থিতিস্থাপকতাকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। তিনি আরো বলেন, ২০২৬ সালের নভেম্বরে দেশটি স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে দ্রুত এই সংস্কার বাস্তবায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জিয়ং বলেন, ‘বাংলাদেশে বিনিয়োগ নীতি সংস্কার ও টেকসই উন্নয়নের রোডম্যাপ’ শীর্ষক এডিবি এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার আসন্ন যৌথ গবেষণা প্রতিবেদনে বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করার জন্য বিশেষ করে এলডিসি-পরবর্তী সময়ে এফডিআই-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এখন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সমীকরণের একটি অংশ এবং এর স্থায়িত্ব আরেকটি অংশ। আমরা প্রয়োজনীয় সংস্কার বাস্তবায়নে এবং দেশকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো গ্রহণে সরকারকে এডিবি’র অব্যাহত সহায়তা পুনর্ব্যক্ত করছি।’