ঢাকা, ২১ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস): সকল নারীর সুরক্ষা বাড়াতে অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করেছে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন।
সর্বক্ষেত্রে সর্বস্তরে নারীর প্রতি বৈষম্য বিলুপ্তি ও নারী পুরুষের সমতা অর্জনের লক্ষ্যে পদক্ষেপ চিহ্নিতকরণের সুপারিশ করেছে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে শনিবার নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন তাদের সুপারিশসহ প্রতিবেদন পেশ করেন।
প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদনটি পেশ করেন নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন প্রধান শিরীন পারভিন হক। এ সময় কমিশনের অন্যান্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টা প্রতিবেদন পেয়ে নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করতে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের যে-সব সুপারিশ বাস্তবায়নযোগ্য তা দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন।
সব বয়সের নারীর জন্য সুস্বাস্থ্য সুরক্ষা বাড়াতে কমিশন অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ বিষয়ে কি করণীয়-তা উল্লেখ করে বলেছে, ‘মেয়েদের বিয়ের বয়স সর্বনিম্ন ১৮ বছর নিশ্চিত করে কৈশোরকালীন, অনাকাঙ্ক্ষিত ও ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভধারণ থেকে বিরত রাখা; অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান অপারেশন নিয়ন্ত্রণে ২০২৩ সালের উচ্চ আদালতের নির্দেশনা কার্যকর করা।’
পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের মেয়াদে করণীয় বিষয়ে বলা হয়েছে,‘ নারীর চাহিদা ও প্রয়োজন শনাক্ত করে স্বাস্থ্যসেবা অর্থায়ন কৌশলপত্র ২০১২-২০৩২ পর্যালোচনা ও সংশোধন করা এবং এ প্রক্রিয়ায় নারী সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা, প্রবীণ নারীদের স্বাস্থ্য চাহিদার স্বীকৃতি ও অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা ২০১৩ সংশোধন করা এবং বাস্তবায়ন নিশ্চিতে পরিবীক্ষণ ও জবাবদিহিতার ব্যবস্থা করা,এবং দেশব্যাপী প্রসূতি ও নবজাতক মৃত্যু পর্যবেক্ষণ এবং পর্যালোচনা করা,মৃত্যুর কারণ শনাক্ত করা এবং বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে সীমাবদ্ধতা ও সেবার ঘাটতি চিহ্নিত করে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নেওয়া ।’
উল্লেখ্য, সংস্কার কমিশন ১৫টি বিষয়ে সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে। বিষয়গুলো হচ্ছে- সংবিধান, আইন ও নারীর অধিকার, সমতা ও সুরক্ষার ভিত্তি, নারীর অগ্রগতির জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা ও জাতীয় সংস্থাসমূহ, নারীর স্বার্থ ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় পর্যায়ের উন্নয়ন, নারী ও মেয়ে শিশুর জন্য সহিংসতামুক্ত সমাজ, জনপরিসরে নারীর ভূমিকা: জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে, জনপ্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণ, নারীর অগ্রগতির জন্য শিক্ষা, প্রযুক্তি ও দক্ষতা বৃদ্ধি, সকল বয়সী নারীর জন্য সুস্বাস্থ্য, অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ ও সম্পদের অধিকার, শ্রম ও কর্মসংস্থান, নারী শ্রমিকের নিরাপদ অভিবাসন, দারিদ্র হ্রাসে টেকসই সামাজিক সুরক্ষা, গণমাধ্যমে নারীর অংশগ্রহণ, চিত্রায়ণ ও প্রকাশ, ক্রীড়া ও সংস্কৃতিতে নারীর অন্তর্ভুক্তি ও বিকাশ এবং দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনে নারী।
চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এ কমিশনের মেয়াদ রয়েছে। গতবছরের নভেম্বরে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। এ সংস্কার কমিশন মোট ৪৩টি নিয়মিত বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।
নারী অধিকার, উন্নয়ন সংস্থা, শ্রমিক সংগঠন, পাহাড় ও সমতলের অধিবাসী এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সঙ্গে ৩৯টি পরামর্শ সভা করেছে কমিশন। এছাড়া অন্যান্য সংস্কার কমিশনের সঙ্গে ৯টি সভায় মিলিত হয়েছে।