দোহা (কাতার), ২৩ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস): প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের মতো জঘন্য অপরাধ কোনোভাবেই বিচার ও শাস্তিহীন থাকা উচিত নয় এবং মিয়ানমারকে এই অপরাধের জন্য দায়ী করা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য আস্থা তৈরির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়।
তিনি কাতার সফরের দ্বিতীয় দিনে আজ বুধবার ‘জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীকে ঘিরে সামাজিক ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ: রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ’ শীর্ষক এক উচ্চপর্যায়ের গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিয়ে এ মন্তব্য করেন।
আজ সকালে দোহায় মান্দারিন ওরিয়েন্টাল হোটেলে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে), আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) এবং মিয়ানমারের জন্য গঠিত স্বাধীন তদন্ত প্রক্রিয়া (আইআইএমএম) -এর আওতায় রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত নৃশংসতার বিচার ও জবাবদিহিতার চলমান উদ্যোগগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, জাতিসংঘ ও রোম সংবিধির সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বাস করে, গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ কোনোভাবেই শাস্তির বাইরে থাকা উচিত নয়।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘মিয়ানমার বা এর কর্মকর্তাদের ওপর এই অপরাধগুলোর দায় চাপানো রোহিঙ্গাদের রাখাইনে প্রত্যাবাসনের জন্য আত্মবিশ্বাস তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে’।
তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ এই তিনটি আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে বিচার প্রক্রিয়াকে সক্রিয়ভাবে সহায়তা করছে।
আইসিজে-তে গাম্বিয়া ২৩ অক্টোবর ২০২০ তারিখে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নির্ভরযোগ্য প্রমাণসহ তার অভিযোগপত্র (মেমোরিয়াল) জমা দেয় এবং মিয়ানমার তার পাল্টা জবাব (কাউন্টার-মেমোরিয়াল) জমা দেয় ২৪ অক্টোবর ২০২৩-এ।
২৩ মে ২০২৪-এ গাম্বিয়া তাদের উত্তর জমা দেয় এবং মিয়ানমার তার পাল্টা উত্তর (রিজয়ান্ডার) জমা দেয় ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪-এ।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এই মামলাটি ২০২৫ সালের শুরুর দিকে মূল (মেরিট) পর্বে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। আইন সংস্থা ফোলে হোয়াগ জানিয়েছে, তিনটি ধাপ (অস্থায়ী, আপত্তি ও মূল) সফলভাবে সম্পন্ন হলে, তারা মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে গণহত্যার শিকারদের জন্য ক্ষতিপূরণ দাবিতে আইসিজেতে আবেদন করবে’।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, গাম্বিয়া সরকার ওআইসি সদস্য রাষ্ট্রগুলো থেকে প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহে একযোগে কাজ করছে।
তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ওআইসি ২.৭৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সংগ্রহ করেছে, যার মধ্যে বাংলাদেশের অবদান সবচেয়ে বেশি—৭ লাখ ডলার।
নোবেল শান্তি বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আইসিজেতে চলমান বিচার প্রক্রিয়ার ব্যয় নির্বাহে যে তীব্র বাজেট ঘাটতি দেখা দিয়েছে, সেই প্রেক্ষাপটে ওআইসির শক্তিশালী সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে কাতার ‘রোহিঙ্গা ফান্ড’-এ আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য ওআইসিকে অনুরোধ করতে পারে, যা মামলার খরচ মেটাতে এবং এ কাজে গতি বজায় রাখতে সহায়ক হবে।
গোলটেবিল আলোচনায় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।