ঢাকা, ১৩ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : অন্তর্বর্তী সরকারের মাত্র ১১ মাসের মধ্যে প্রবাসী আয়ের তীব্র প্রবাহ এবং প্রত্যাশিত রপ্তানি আয়ের ফলে ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি টাকা শক্তিশালী হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ দিনে বাংলাদেশি টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের মূল্য হ্রাস পেয়েছে। আজ বেশিরভাগ ব্যাংক ডলার বিনিময় করেছে প্রতি ডলার ১২০.৩০ টাকা থেকে ১২১.২০ টাকায়, যেখানে গত সপ্তাহের শুরুতে ডলারের দর ছিল ১২২.৮০ টাকা থেকে ১২২.৯০ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবাসী বাংলাদেশিরা রেকর্ড ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে। যা দেশের ইতিহাসে এক অর্থবছরে প্রাপ্ত সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স।
এটি আগের অর্থবছর (২০২৩-২৪) এর ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় ২৬ দশমিক ৮০ শতাংশ বেশি। এই রেমিট্যান্স প্রবাহের ধারাবাহিকতায়, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসের প্রথম ১২ দিনে প্রবাসীরা প্রায় ১ হাজার ৭১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন।
এই সময়ে প্রবাসীদের প্রেরিত গড় দৈনিক রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ৮৯ দশমিক ২৫ মিলিয়ন ডলার। যেখানে গত বছরের একই সময়ে দেশে রেমিট্যান্সের প্রবাহ ছিল ৯৪৮ মিলিয়ন ডলার।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশের রপ্তানি আয় ৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৪৮ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। যা দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত দেয় এবং ডলারের বিপরীতে টাকার শক্তিশালী হওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাসসকে বলেন, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালু করার পরও ডলারের দরপতন অব্যাহত রয়েছে এবং টাকার মান শক্তিশালী হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘প্রায় এগারো মাস আগে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসে এবং সর্বক্ষেত্রে পরিবর্তনের অঙ্গীকার করে। অর্থনীতি, প্রতিষ্ঠান, প্রশাসন সংস্কারে বেশ কিছু নীতি-ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং এর মাধ্যমে জনগণের মধ্যে আস্থা তৈরির চেষ্টা চলছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডলারের বিনিময় হার কমে প্রায় ১২০ টাকায় এসেছে, যা একটি ইতিবাচক দিক।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই কর্মকর্তা জানান, ডলারের দামের পতনের প্রধান কারণ সরবরাহ বৃদ্ধি। গত দুই বছরের মধ্যে এখন ডলারের সরবরাহ সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে হঠাৎ রেমিট্যান্সের প্রবাহ বৃদ্ধির পেছনে একাধিক কারণ কাজ করেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার মূলধনী বাজারে মূল্য কারসাজি রোধে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। এর বাইরে রপ্তানি ৪৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা এই প্রবৃদ্ধিতে বড় অবদান রেখেছে।’
প্রিমিয়ার ব্যাংক পিএলসি’র ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ডিএমডি) আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে রেমিট্যান্স ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকারকে কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে সামষ্টিক অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে থাকা দেশের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক স্বস্তি হিসেবে কাজ করছে।