শ্রমিকদের দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতিপূরণ ‘নোটিশ অব অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান শুরু করেছে বেপজা

বাসস
প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯:২৬

ঢাকা, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস): বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা) আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)’র সহযোগিতায় এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি স্কিম (ইআইএস) প্রকল্পের আওতায় আজ আনুষ্ঠানিকভাবে শ্রমিকদের দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতিপূরণ হিসেবে ‘নোটিশ অব অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান শুরু করেছে।

ধানমন্ডির বেপজা কমপ্লেক্সে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঢাকা ও চট্টগ্রাম ইপিজেড থেকে দুইজন নিহত শ্রমিকের পরিবার ও কুমিল্লা ইপিজেড থেকে কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় শারীরিক অক্ষমতাজনিত একজন শ্রমিককে ‘নোটিশ অব অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান। এছাড়াও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মুনির হোসেন খান, আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর (নিযুক্ত) ম্যাক্স টুনন, জার্মান উন্নয়ন সংস্থার সেডটেক ক্লাস্টারের ভারপ্রাপ্ত ক্লাস্টার কো-অর্ডিনেটর মাইকেল ক্লোড। বেপজা সদস্য (বিনিয়োগ উন্নয়ন) মো. আশরাফুল কবীর স্বাগত বক্তব্য দেন।

বেপজা নির্বাহী চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি চালু হওয়ো ইআইএস প্রকল্পটি বেপজা, আইএলও এবং জিআইজেড-এর আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড ও ক্রেতাদের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্বের ফসল।

তিনি বলেন, পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের জন্য নির্ভরযোগ্য সামাজিক সুরক্ষা প্রদান করতে এ প্রকল্প চালু করা হয়েছে। বর্তমানে বেপজার জোনে ৩ লাখ ৮০ হাজারের বেশি শ্রমিক কর্মরত। যেহেতু আরএমজি খাত ইপিজেড শিল্পের ৫২ শতাংশ, আমরা এই পরিকল্পনাটি বাকি ৪৮ শতাংশ শিল্পেও সম্প্রসারণের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য স্পষ্ট, সামাজিক সুরক্ষায় কোনো শ্রমিক পিছিয়ে থাকবে না।

নির্বাহী চেয়ারম্যান আরও বলেন, নির্বাচিত সুবিধাভোগী ও তাদের পরিবারের কাছে নোটিশ অব অ্যাওয়ার্ড আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেওয়া আমাদের জন্য অত্যন্ত সম্মানের বিষয়। এটি শুধু একটি কাগজপত্র নয়, এটি বেপজার দৃঢ় প্রতিশ্রুতির প্রতীক। শ্রমিকদের খারাপ সময়ে আমরা পাশে দাঁড়াবো। এটি একটি বাস্তব প্রতিশ্রুতি, যারা আমাদের সফলতার মূল ভিত্তি, বেপজা সবসময় তাদের মর্যাদা এবং অধিকার রক্ষা করবে।

তিনি বলেন, বেপজা’কে অবশ্যই দায়িত্বশীল বিনিয়োগের জন্য একটি সহায়ক পরিবেশ গড়ে তোলা, আন্তর্জাতিক শ্রম ও পরিবেশগত মানদণ্ডের সাথে সম্মতি জোরদার করা এবং শিল্প প্রবৃদ্ধি যাতে সকলের জন্য টেকসই উন্নয়নে রূপান্তরিত হয়, তা নিশ্চিত করা অব্যাহত রাখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা আইএলও এবং আমাদের ব্যবসায়িক অংশীদারদের—বিশেষ করে ব্র্যান্ড ও ক্রেতাদের সঙ্গে আমাদের আন্তরিক সহযোগিতাকে গভীরভাবে মূল্যায়ন করি এবং ভবিষ্যতেও এই সহযোগিতা অব্যাহত রাখার ব্যাপারে আগ্রহী।

জিয়াউর রহমান বলেন, ইপিজেডের শ্রমিকরা নিবেদিত ইপিজেড আইন ও নিয়ম অনুযায়ী বাড়তি সুরক্ষা ও সুবিধা ভোগ করে। ইপিজেড শ্রমিকরা জোনের বাইরে কর্মরত সমকক্ষদের তুলনায় ৩০-৪০ শতাংশ বেশি বেতন পান। অতিরিক্ত সুবিধার মধ্যে রয়েছে প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রুপ ইনসুরেন্স, বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা, গর্ভবতী শ্রমিকদের জন্য পুষ্টি সহায়তা, ডে-কেয়ার সেন্টার, নারী শ্রমিকদের জন্য হোস্টেল, ২৪/৭ হেল্পলাইন এবং দেশ-বিদেশে প্রশিক্ষণের সুযোগ। ইপিজেড শ্রমিকদের সংগঠন প্রতিষ্ঠা এবং সমষ্টিগত বার্গেনিং এজেন্ট নির্বাচন করার অধিকার রয়েছে।

তিনি বলেন, বেপজা শ্রমিকরা বিরোধ নিষ্পত্তিতে বিশেষ সুবিধা ভোগ করেন। এর মধ্যে রয়েছে- বিনামূল্যে পরামর্শ, মীমাংসা, সমাধান, সালিশি এবং শ্রম আদালত ও আপিল ট্রাইব্যুনালে প্রবেশাধিকার। শ্রমিক অধিকার থেকে শুরু করে আগুন ও ভবন নিরাপত্তাসহ সকল কমপ্লায়েন্স বিষয় বেপজা ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশনস অফিসার, ইন্সপেক্টর ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্বারা কঠোরভাবে মনিটর করা হয়। এতে স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা এবং দ্রুত প্রতিক্রিয়াকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।

জিয়াউর রহমান বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমরা আইন ও নীতি সংস্কারে অসাধারণ অগ্রগতি করেছি, বিশেষ করে শ্রমিক সংগঠন, সমষ্টিগত বার্গেনিং, কর্মস্থল নিরাপত্তা, ন্যায্য বেতন, দক্ষতা উন্নয়ন এবং সার্বিক শ্রম কল্যাণে অগ্রগতি হয়েছে।

ম্যাক্স টুনন বলেন, যেকোনো আর্থিক সহায়তা একটি জীবন ফিরিয়ে দিতে পারে না। তবে সময়মতো ক্ষতিপূরণ পরিবারকে পুনর্গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় স্থিতিশীলতা প্রদান করে। আইএলও বেপজা এবং অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করে এই পরিকল্পনাকে সম্প্রসারণ ও শক্তিশালী করার জন্য সম্পূর্ণভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

ড. মাইকেল ক্লোড বলেন, এই পরিকল্পনা শ্রমিক ও নিয়োগকর্তা উভয়ের জন্য সুরক্ষা প্রদানে যৌথ দায়িত্বের প্রতিফলন। জিআইজেড বাংলাদেশের শ্রম ব্যবস্থাকে আরও নিরাপদ ও সহনশীল করার এই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপকে সহযোগিতা করতে পেরে গর্বিত।

মো. মুনির হোসেন খান বলেন, এই উদ্যোগ প্রমাণ করে সরকার, নিয়োগকর্তা, শ্রমিক এবং আন্তর্জাতিক অংশীদার একসাথে একটি নিরাপদ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শ্রম বাজার গঠন করতে পারে।

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বেপজা, আইএলও এবং জিআইজেড-এর মধ্যে একটি ‘লেটার অব ইনটেন্ট’  স্বাক্ষরিত হয়। এই পরিকল্পনার লক্ষ্য হলো এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনের পোশাক খাতের শ্রমিকদের কর্মস্থলের দুর্ঘটনার কারণে মৃত্যু বা স্থায়ী শারীরিক অক্ষমতার ক্ষেত্রে আর্থিক সুবিধা প্রদান করা। এতে শ্রমিকদের পরিবার মাসিক আর্থিক সহায়তা পাবে, যা পেনশনের মতো সুবিধা হিসেবে টিকে থাকবে।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের অর্থায়নে ইআইএস প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এতে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে আইএলও ও জার্মান উন্নয়ন সংস্থা- জিআইজেড।

প্রাথমিকভাবে, এই প্রকল্পটি গার্মেন্ট খাতের শ্রমিকদের জন্য চালু হয়েছে। তবে ধাপে ধাপে অন্যান্য খাতের শ্রমিকদের জন্য সম্প্রসারণ করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে পারলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক হ্রাসের সম্ভাবনা রয়েছে : বাণিজ্য উপদেষ্টা
ইজি বাইকে পূর্ণ যাত্রী বহন করলে যানজট কমবে, বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে : গবেষণা
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩০.৫৯ বিলিয়ন ডলার
কাল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম বর্ষে প্রথম রিলিজ স্লিপের ফল প্রকাশ
গণতন্ত্র ও লিঙ্গসমতার ওপর গুরুত্বারোপ তারেক রহমানের
সংশোধনী আসছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড আইনে, মতামত চেয়েছে মন্ত্রণালয়
রাজশাহীর রেশম ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে সরকার
চট্টগ্রাম নগরীতে অনুমতি ছাড়া রাস্তা কাটলে আইনানুগ ব্যবস্থা : চসিক মেয়র 
রুবিওর সফর ইসরাইল-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ‘শক্তি’ প্রমাণ করছে : নেতানিয়াহু
বাংলাদেশে জাতিসংঘের ‘যুব ফটো কনটেস্ট’ ঘোষণা
১০