ঢাকা, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের সব ধরনের ক্রয় ও প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ করার উদ্যোগ নেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রশংসা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া বিগত শাসনামালের পুরনো বা চলমান সব ধরনের সরাসরি আলোচনাও স্থগিত করেছে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশিত ‘২০২৫ ফিসক্যাল ট্রান্সপারেন্সি রিপোর্ট’-এ এসব তথ্য উঠে এসেছে। এতে রাজনৈতিক পালাবদলের সময় বাংলাদেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনার পর্যালোচনা তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুলাই মাসে সরকার পরিবর্তনের পর অরাজনৈতিক অন্তর্বর্তী সরকার আগের বাজেট সুপারিশগুলো অনুসরণ করলেও, আর্থিক স্বচ্ছতা জোরদার করতে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার শুরু করেছে। পূর্ববর্তী সরকার নির্বাহী বাজেট প্রস্তাব ও কার্যকর বাজেট প্রকাশ করলেও বছরের শেষের প্রতিবেদন সময়মত প্রকাশ করতে পারেনি।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাজেট নথিগুলো আপাতদৃষ্টিতে নির্ভরযোগ্য মনে হলেও, সেগুলো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। ঋণ সম্পর্কিত তথ্য জনসাধারণের সহজে জানার সুযোগ ছিল এবং বাজেট নথিতে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর বরাদ্দ ও প্রাকৃতিক সম্পদের রাজস্ব অন্তর্ভুক্ত ছিল।
তবে, নির্বাহী দফতরগুলোর ব্যয়ের বিস্তারিত বিবরণ এবং সরকারের রাজস্ব ও ব্যয়ের পূর্ণাঙ্গ চিত্রের অভাব এখনও লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
নিরীক্ষা বা অডিট সম্পর্কেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকার পরিবর্তনের কারণে দেশের সর্বোচ্চ নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি হিসাব পর্যালোচনা করতে পারেনি। কিছু সারসংক্ষেপ প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়া নিরীক্ষা সংস্থার স্বাধীনতা আন্তর্জাতিক মানের ছিল না বলেও উল্লেখ রয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলনের চুক্তি করার জন্য আইন আছে। অন্তর্বর্তী সরকার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়ানোর জন্য শক্তিশালী পদক্ষেপ নিয়েছে।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশের জন্য কিছু সুপারিশও তুলে ধরা হয়েছে। সেগুলো হল : বছর শেষের বাজেট প্রতিবেদন সময়মত প্রকাশ করা যাতে সরকারি ব্যয় ও কাজের ওপর জনগণ এবং প্রতিষ্ঠানগুলো নজর রাখতে পারে।
বাজেট নথিগুলো আন্তর্জাতিক মান ও স্বীকৃত নীতিমালা অনুযায়ী তৈরি করা, যাতে সেগুলো বিশ্বাসযোগ্য হয় এবং অন্যান্য দেশের অর্থনীতির সঙ্গে তুলনা করা যায়।
সরকারি আয় ও ব্যয়ের বিস্তারিত তথ্য খোলাখুলিভাবে জানানো, যাতে জনগণের বোঝাপড়া ও আস্থা বাড়ে।
দেশের সর্বোচ্চ নিরীক্ষা সংস্থা সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে এবং পর্যাপ্ত বাজেট ও জনবল থাকতে হবে।
সংক্ষিপ্ত তথ্যের বাইরে আরও বিস্তারিত অনুসন্ধান, সুপারিশ ও ব্যাখ্যা সম্বলিত পূর্ণাঙ্গ অডিট রিপোর্ট (নিরীক্ষা প্রতিবেদন) প্রকাশ করা।
সরকারি ক্রয় চুক্তি এবং প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের তথ্যও বিস্তারিত প্রকাশ করা।
মার্কিন প্রতিবেদনের শেষে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের চলমান সংস্কারগুলো ‘গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক মান পূরণে আরও কাজের প্রয়োজন রয়েছে বলেও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।