রোহিঙ্গা সংকট: স্থায়ী সমাধান ও তহবিল বৃদ্ধির আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

বাসস
প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৩:৩৯
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আজ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৮০তম অধিবেশনে ভাষণ দিয়েছেন। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

নিউইয়র্ক, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান এবং তহবিল বৃদ্ধির জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

নিউইয়র্কে স্থানীয় সময় শুক্রবার সকালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে দেয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘তহবিল সংকটের কারণে আজকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ন্যূনতম জীবনমান বজায় রাখার যৌথ প্রয়াসও ভঙ্গুর হয়ে উঠেছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ইতোমধ্যে এই সংকটের বিষয়ে সতর্ক করেছে। অবিলম্বে নতুন তহবিল না এলে, মাসিক রেশন অর্ধেকে নামিয়ে মাথাপিছু মাত্র ৬ ডলারে নামতে পারে, যা রোহিঙ্গাদের অনাহার ও অপুষ্টিতে নিমজ্জিত করবে।’

প্রধান উপদেষ্টা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান, ‘বিদ্যমান তহবিলের বাইরে নতুন ও বর্ধিত তহবিল নিশ্চিত করতে হবে এবং মিয়ানমার সরকার ও রাখাইনের অন্যান্য অংশীদারদের উপর ইতিবাচক পরিবর্তন ও দ্রুত রাজনৈতিক সমাধানের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে হবে।’

মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিবেশী দেশ মায়ানমারে চলমান সংঘাত সমগ্র অঞ্চলের জন্য এক গভীর উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। এটি শুধু আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকেই ঝুঁকিতে ফেলছে না, বরং বাংলাদেশে আশ্রয়প্রাপ্ত বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনও কঠিন করে তুলেছে।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আট বছর পার হলেও রোহিঙ্গা সংকটের কোনো সমাধান দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। উপরন্তু, বাংলাদেশ প্রতিনিয়তই মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে বাধ্য হচ্ছে। সাংস্কৃতিক পরিচয়ভিত্তিক রাজনীতির কারণে রোহিঙ্গাদের ওপর অধিকার বঞ্চনা ও নির্যাতন রাখাইনে অব্যাহত রয়েছে।’

তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের প্রান্তিকীকরণের প্রক্রিয়া আর চলতে দেওয়া যাবে না। যেসব বৈষম্যমূলক নীতি ও কর্মকাণ্ড আজকের এই পরিস্থিতি তৈরি করেছে, তার সমাধান এবং প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা এখনই গ্রহণ করা সম্ভব।’

তিনি উল্লেখ করেন, ‘পূর্ণাঙ্গ জাতীয় রাজনৈতিক মীমাংসার অপেক্ষা না করে রাখাইনের সমস্যাগুলোর চূড়ান্ত রাজনৈতিক সমাধান প্রয়োজন। তবে এর জন্য রাখাইন অঞ্চলের সংশ্লিষ্ট সকল জাতিসত্তার অংশগ্রহণে এমন একটি বন্দোবস্ত প্রয়োজন যেন রোহিঙ্গারা সমঅধিকার ও নাগরিকত্বসহ সমাজের অংশ হতে পারে।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এই সংকটের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী রোহিঙ্গারা, আর তাদের পরেই বৃহত্তম ভুক্তভোগী হল বাংলাদেশ। তবে রোহিঙ্গা সংকট কোনোভাবেই বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের কোনো দ্বিপাক্ষিক বিষয় নয়। আমরা শুধু একটি দায়িত্বশীল প্রতিবেশী এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্বশীল সদস্য হিসেবে আমাদের মানবিক দায়িত্ব পালন করে আসছি।’

তিনি যোগ করেন, ‘অন্য প্রতিবেশী দেশগুলোকেও তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। রাখাইনে স্থিতিশীলতা আনতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যে কোনো যৌথ প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ সদাপ্রস্তুত।’

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমরা আশা করি, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের উচ্চপর্যায়ের রোহিঙ্গা সম্মেলন বিশ্বব্যাপী দৃঢ় সংকল্প তৈরি করবে এবং রোহিঙ্গাদের জন্য বাস্তবসম্মত আন্তর্জাতিক সহায়তা নিশ্চিত করবে, যেখানে তহবিল সংগ্রহ সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবে। একইসঙ্গে একটি রোডম্যাপ গ্রহণ করে সময় নির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান সম্ভব হবে।’
 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
সার্ক পুনরুজ্জীবনে জোরালো আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
জাতিসংঘে ভাষণে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রগতি ও সংস্কার তুলে ধরলেন প্রধান উপদেষ্টা
পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এখনই জরুরি: প্রধান উপদেষ্টা
‘সম্প্রীতির বন্ধনে ঐক্যবদ্ধ হই’ : মাটিরাঙায় সম্প্রীতি সভায় উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমার আহ্বান
নির্বাচনে যদি কোন দলকে সুবিধা দেয়া হয়, জনগণ মেনে নেবে না : রিজভী 
নারীর ক্ষমতায়ন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার : প্রধান উপদেষ্টা
ইসরাইলি বসতিতে কার্যক্রম চালানো ১৫৮ কোম্পানির তালিকা প্রকাশ করল জাতিসংঘ
রোহিঙ্গা সংকট: স্থায়ী সমাধান ও তহবিল বৃদ্ধির আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
অবৈধ সম্পদ সংরক্ষণকারী দেশকে পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
নিশাঙ্কার সেঞ্চুরির ম্যাচে সুপার ওভারে জিতল ভারত
১০