তদন্ত কর্মকর্তার জবানবন্দি: চব্বিশের অভ্যুত্থানে ৪১টি জেলায় হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে

বাসস
প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬:২৪ আপডেট: : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭:২৪

ঢাকা, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫(বাসস) : চব্বিশের জুলাই আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান চলাকালে আইনশৃংখলা বাহিনী ও সরকার দলীয় সশস্ত্র নেতাকর্মীরা দেশের ৪১টি জেলার ৪৩৮টি স্পটে হত্যাকান্ড সংগঠিত করেছে।

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে চলা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জবানবন্দিতে একথা বলেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর (পিপিএম)।

মঙ্গলবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনাল-১ দেয়া জবানবন্দিতে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, জুলাই আগস্টে ছাত্র জনতার অভ্যুত্থান চলাকালে আইনশৃংখলা বাহিনী এবং সরকার দলীয় সশস্ত্র নেতাকর্মীরা দেশের ৪১টি জেলার ৪৩৮টি স্পটে হত্যাকাণ্ড সংগঠিত করেছে। এছাড়া ৫০টিরও অধিক জেলায় আন্দোলন কারীদের ওপর মারণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে।

সাক্ষীর জবানবন্দিতে তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর বলেন, আমি তদন্ত কালে পেয়েছি যে, ২০২৪ এর আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার যত গুম, খুন, জখম, অপহরণ ও নির্যাতন করেছে তার মূল উদ্দেশ্য ছিলো ক্ষমতায় টিকে থাকা। এছাড়া গত ১৫ বছরের অধিক সময় ধরে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বিরোধী দল, মত ও প্রতিপক্ষের উপর হত্যা, জঙ্গি নাটক, জোরপূর্বক অপহরণ, গুমসহ পাতানো নির্বাচনের সব কিছুর মূলে ছিলো দীর্ঘদিন ক্ষমতায় টিকে থাকা। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এসেছে, ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য যত রকমের ব্যবস্থা আছে তার সবই গ্রহণ করেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ এর আন্দোলনে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ গ্রহণ করেছে।

এদিকে, এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার জবানবন্দির অংশবিশেষ ও জব্দ করা ভিডিও বিটিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। সেই জুলাই আন্দোলনে নৃশংসতা নিয়ে বিবিসি ও আল জাজিরায় প্রচারিত ভিডিও চিত্র জব্দ তালিকার অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রদর্শিত হয়।

ঐতিহাসিক এই মামলায় এর আগে সাক্ষ্য দিয়েছেন গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতিক শহীদ আবু সাঈদের পিতাসহ স্বজন হারা পরিবারের অনেকে। এছাড়া স্টার উইটনেস হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক ও জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া নাহিদ ইসলাম এবং ‘দৈনিক আমার দেশ’ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

এই মামলায় প্রসিকিউসন পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এসএইচ তামিম শুনানি করছেন। সেই সাথে অপর প্রসিকিউটররা শুনানিতে উপস্থিত থাকেন।পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। আর এই মামলায় গ্রেফতার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এক পর্যায়ে এই মামলায় দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদঘাটনে রাজসাক্ষী হতে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের আবেদন মঞ্জুর করেন ট্র্যাইব্যুনাল। পরবর্তীতে এই মামলার রাজসাক্ষী হয়ে সাক্ষ্য দেন পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন।

এই মামলাটি ছাড়াও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে গুম-খুনের ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হয়েছে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যা কাণ্ডের ঘটনায়।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, এর দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব অপরাধের বিচার কাজ চলছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় শেষ হয়েছে ডিএসই’র আজকের লেনদেন
আফগানিস্তানে দেশব্যাপী ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট : এএফপি 
দুর্গাপূজা উদযাপনে পূজার্থীদের এবার উচ্ছ্বাস বেশি : ফারুক-ই-আজম
দুই বছর পর শতবর্ষী মন্দিরে নারীদের উদ্যোগে দুর্গাপূজার আয়োজন
ইসলামাবাদে সার্ক এনার্জি সেন্টারের ১৮তম গভর্নিং বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত
বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে সার্বিয়ার জরিমানা
নীলফামারীতে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণের সমাপনী
কাল থেকে শুরু সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস অক্টোবর
জয়পুরহাটে এআই প্রযুক্তির ব্যবহার শীর্ষক সেমিনার
দুর্গাপূজা প্রকৃতি ও মানবিক সম্পর্কের প্রতি গভীর ভালোবাসার বার্তা বহন করে : ফরিদা আখতার
১০