
মো. মামুন ইসলাম
রংপুর, ৩ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : রংপুর কৃষি অঞ্চলে ধানক্ষেতের ক্ষতিকর পোকা দমনে কীটনাশক ব্যবহারের পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব পার্চিং পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
পার্চিং পদ্ধতিতে কৃষকরা ধানক্ষেতের ওপর নির্দিষ্ট দূরত্বে বাঁশের খুঁটি বা গাছের ডাল স্থাপন করেন। সেখানে শিকারি পাখিরা বসে ধানগাছের ক্ষতিকর পোকা খেয়ে ফেলে। এতে ফসল সুরক্ষা পায় এবং কীটনাশকের ব্যবহারের বেশি প্রয়োজন হয় না।
পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষার এই পদ্ধতিকেই পার্চিং বলা হয়। রংপুর অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (ডিএই) কৃষিবিদ মুহাম্মদ আলী বলেন, পার্চিং পদ্ধতি ব্যয়বিহীন এবং পরিবেশবান্ধব। রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট এবং নীলফামারী এ পাঁচটি জেলার আমন ধানের জমিতে ডেড পার্চিং, লাইভ পার্চিং ও হালকা ফাঁদ পদ্ধতি গ্রহণের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।
রংপুর অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, কৃষকরা ধানগাছকে পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে ডেড পার্চিং ও লাইভ পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। ফলে উন্নত ধানের ফলন হচ্ছে।
তিনি বলেন, বোরো ও আমন ধানগাছে পোকা আক্রমণ প্রতিরোধে কৃষকরা সবচেয়ে সহজ ও পরিবেশবান্ধব পার্চিং পদ্ধতি গ্রহণ করে ব্যাপকভাবে উপকৃত হচ্ছেন। এতে পোকা দমনে খরচ কম হচ্ছে, কীটনাশকের ব্যবহার হ্রাস পাচ্ছে এবং স্বাস্থ্যসম্মত ধান উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে।
চলতি মৌসুমে কৃষকরা ৬ লাখ ২১ হাজার ৫০৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন। এর মধ্যে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ১৬০ হেক্টর জমিতে পোকা দমনে পার্চিং পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে।
রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলার ৩,৬৯,১৬০ হেক্টর আমন ধানক্ষেতে কৃষকরা ইতোমধ্যে বাঁশের খুঁটি বা গাছের ডাল স্থাপন করেছেন এবং এই কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
এই অঞ্চলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এ পদ্ধতি ব্যবহারে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে এবং ব্যাপক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এতে কৃষকরা কম খরচে, কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব পার্চিং পদ্ধতি গ্রহণ করে বোরো ও আমন ধানগাছকে পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করছেন এবং স্বাস্থ্যসম্মত ধান উৎপাদন করছেন।
দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের পিএইচডি ফেলো মো. মামুনুর রশীদ বলেন, কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহার জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের জন্য হুমকি। এর ফলে অনেক দেশীয় মাছ, উপকারী পোকা ও পাখি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এতে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও বাস্তুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পরিচালিত উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি কৃষকদের ধানগাছকে পোকা আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে এবং পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করে অর্থ সাশ্রয় করতে প্রশিক্ষিত করছে। কারণ এই পদ্ধতির প্রয়োগ বাস্তবিক অর্থে ফলপ্রসূ ও লাভজনক।
মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ধানক্ষেতে পার্চিং পদ্ধতির ব্যবহার অর্থনৈতিক, পরিবেশগত ও স্বাস্থ্যগত সুবিধা রয়েছে। এ পদ্ধতিতে বাঁশের খুঁটি বা গাছের ডাল ব্যবহার করে শিকারি পাখিকে আকৃষ্ট করা হয়, যারা ক্ষতিকর পোকা খেয়ে ফেলে। এতে কীটনাশকের প্রয়োজন কমে যায় এবং স্বাস্থ্যসম্মত ধান উৎপাদন সম্ভব হয়।
বাসসের সঙ্গে আলাপকালে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামের কৃষক হামিদুর রহমান এবং সদর উপজেলার কাথিহারা গ্রামের কৃষক ইসহাক আলী বলেন, তারা প্রতি বছর তাদের বোরো ও আমন ধানক্ষেতে পার্চিং পদ্ধতি গ্রহণ করছেন।
ইসহাক আলী বলেন, ধানক্ষেতে পোকা দমনে পার্চিং পদ্ধতি গ্রহণ করে কীটনাশকের খরচ কমিয়ে স্বাস্থ্যসম্মত ধান উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষা, জীববৈচিত্র্য ও বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার হচ্ছে।
তারাগঞ্জ উপজেলার দোলাপাড়া গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন এবং কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া গ্রামের কৃষক বদিউল আলম বলেন, তারা প্রতি বছর ধানক্ষেতে পার্চিং পদ্ধতি প্রয়োগ করে সুফল পাচ্ছেন।