
ঢাকা, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস): ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের সময়সূচি, ভোটগ্রহণ পদ্ধতি ও ভোটদানের প্রক্রিয়া নিয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) পরিপত্র জারি করেছে।
২০২৬ এর ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় গণভোটের প্রশ্ন, ভোটদানের সময়, রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ, ভোটগ্রহণ পদ্ধতি নির্ধারণ, ফলাফল প্রকাশসহ বিভিন্ন বিষয়ে ইসি এই পরিপত্র জারি করেছে।
ইসি সচিবালয়ের উপসচিব (নির্বাচন পরিচালনা-২ অধিশাখা) মোহাম্মদ মনির হোসেন স্বাক্ষরিত এক পরিপত্রে বলা হয়েছে, ‘২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-জনতার সফল গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রকাশিত জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগের উদ্দেশ্যে জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ এ সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত কতিপয় প্রস্তাবের বিষয়ে জনগণের সম্মতি রয়েছে কি না তা যাচাইয়ের জন্য সরকার গণভোট অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এলক্ষ্যে সরকার কর্তৃক ইতোমধ্যে গণভোট অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি করা হয়েছে। গণভোট অনুষ্ঠান সুষ্ঠু, সুন্দর ও সুচারুভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার এর সহায়ক হিসেবে নির্দেশনা স্বরূপ নির্বাচন কমিশন নিম্নোক্ত পরিপত্র জারি করছে।’
গণভোট এর বিষয়/প্রশ্ন: ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং জুলাই জাতীয় সনদে লিপিবদ্ধ সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত নিম্নলিখিত প্রস্তাবসমূহের প্রতি ভোটারগণ সম্মতি জ্ঞাপন করেন কি না (হ্যাঁ/না) সেই বিষয়ে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে।
(ক) নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার আলোকে গঠন করা হবে।
(খ) আগামী জাতীয় সংসদ হবে দুই কক্ষ বিশিষ্ট ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ সদস্য বিশিষ্ট একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে এবং সংবিধান সংশোধন করতে হলে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন দরকার হবে।
(গ) সংসদে নারী প্রতিনিধি বৃদ্ধি, বিরোধী দল হতে ডেপুটি স্পীকার ও সংসদীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচন, মৌলিক অধিকার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, স্থানীয় সরকার, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাসহ তফসিলে বর্ণিত যে ৩০টি বিষয়ে জুলাই জাতীয় সনদে ঐকমত্য হয়েছে- সেগুলো বাস্তবায়নে আগামী সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী রাজনৈতিক দলগুলো বাধ্য থাকবে।’
(ঘ) জুলাই জাতীয় সনদে বর্ণিত অপরাপর সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাস্তবায়ন করা হবে।’
গণভোট অনুষ্ঠানের সময়সূচি ও গণবিজ্ঞপ্তি: ‘গণভোট অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন ভোটগ্রহণের সময়সূচি উল্লেখ করে ১১ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। বিজ্ঞপ্তি অনুসারে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিন অর্থাৎ আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৬ তারিখে অনুষ্ঠিত হবে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত একই সাথে বিরতিহীনভাবে অনুষ্ঠিত হবে।’
রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ: ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য কমিশন কর্তৃক যে সকল রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ ও অধিক্ষেত্র নির্ধারণ করা হবে সে সকল রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারগণ গণভোট অনুষ্ঠানের জন্য সংশ্লিষ্ট অধিক্ষেত্রে নিযুক্ত হয়েছেন বলে গণ্য হবেন। একইভাবে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে যে সকল প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসারগণ নিযুক্ত হবেন সেসকল প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসারগণ গণভোট অনুষ্ঠানের জন্য সংশ্লিষ্ট ভোটকেন্দ্রে নিযুক্ত হয়েছেন বলে গণ্য হবেন। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাগণ একইসাথে একই সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।’
ভোটকেন্দ্র, ভোটার তালিকা ও ভোটার: ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্ধারিত ভোটকেন্দ্র, গণভোট অনুষ্ঠানের জন্য ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। এছাড়া ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতকৃত ভোটার তালিকা হবে গণভোটের ভোটার তালিকা এবং উক্ত তালিকাতে উল্লিখিত ভোটারগণ গণভোট প্রদানের অধিকারী হবেন। অর্থাৎ ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সহকারী রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক প্রিজাইডিং অফিসারের নিকট সরবরাহকৃত প্রত্যেক ভোটকেন্দ্রের জন্য ভোটদানের অধিকারী ভোটারগণের তথ্য সম্বলিত ভোটার তালিকা গণভোটের ভোটার তালিকা হিসেবে ব্যবহৃত হবে।’
ব্যালট পেপার ও ব্যালট বাক্স: ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট ভিন্ন রংয়ের ব্যালটে অনুষ্ঠিত হবে। গণভোটের ব্যালট (ফরম-১) গোলাপি রঙের হবে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত, নির্ধারিত এবং সরবরাহকৃত স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সই গণভোটের ব্যালট বাক্স হিসাবে ব্যবহৃত হবে। ভোটারগণ ভোট প্রদান শেষে জাতীয় সংসদের ব্যালট ও গণভোটের ব্যালট একই বাক্সে ফেলবেন।’
পোস্টাল ভোট: ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ২৭ দফা (১) এর উপ-দফা (ক) বা (খ) বা (গ) বা (ঘ) তে উল্লিখিত বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি ভোটার ও দেশে অবস্থানরত নির্দিষ্ট ভোটারগণও আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০২৬ এর সাথে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে গণভোট এ ভোটদান করবেন। গণভোট এর জন্য পোস্টাল ব্যালট (ফরম-২) ব্যবহৃত হবে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পোস্টাল ব্যালটে ভোটদানে যোগ্য ব্যক্তিগণ যে পদ্ধতি অবলম্বনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন গণভোটের ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি অনুসৃত হবে।’
ভোটদান পদ্ধতি: ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত পদ্ধতিতে একইসাথে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যালট পেপারের সাথে গণভোটের একটি ব্যালট পেপার সরবরাহ করা হবে এবং গণভোটের ব্যালট পেপারে হ্যাঁ বা না তে সিল দিয়ে ব্যালট পেপার ভাঁজ করে নির্ধারিত ব্যালট বাক্সে ফেলবেন। পোস্টাল ব্যালটের ক্ষেত্রে, ভোটার গণভোটের পোস্টাল ব্যালট পেপারে (ফরম-২) হ্যাঁ বা না এর পাশে ফাঁকা ঘরে টিক বা ক্রস চিহ্ন দিয়ে প্রদান করে তাঁর ভোট/মত প্রকাশ করবেন।’
ভোটার কর্তৃক ভোটদানের প্রক্রিয়া: ‘ভোটার ব্যালট পেপার পাওয়ার সাথে সাথে ব্যালট পেপার চিহ্নিত করার জন্য নির্ধারিত গোপন কক্ষে যাবেন। যে প্রশ্নটিতে গণভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে, সে প্রশ্নে হ্যাঁ-সূচক বা না-সূচক ভোটদান করতে চাইলে একজন ভোটার ব্যালট পেপারে মুদ্রিত হ্যাঁ-সূচক ঘরে বা না-সূচক ঘরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সরবরাহকৃত সিলমোহর দ্বারা নিজ ভোট প্রদান করবেন। ভোট প্রদানের পর ভোটার ব্যালট পেপারটি ভাঁজ করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যালটের সাথে নির্ধারিত স্থানে রক্ষিত ব্যালট বাক্সে তা প্রবেশ করাবেন।’
ভোটগ্রহণ সমাপ্তির পর: ‘ভোটগ্রহণ সমাপ্তির অব্যবহিত পর প্রিজাইডিং অফিসার ভোটকেন্দ্রে/পোস্টাল ভোটের গণনা কেন্দ্রে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে নিয়োজিত এজেন্টদের উপস্থিতিতে (যদি থাকে) প্রত্যেকটি ব্যালট বাক্স খুলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যালট ও গণভোটের ব্যালটসমূহ আলাদা করবেন। অতঃপর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যালটসমূহ প্রার্থী ভিত্তিক এবং গণভোটে ভোটদানকৃত হ্যাঁ-সূচক ও না-সূচক ব্যালট পেপারসমূহ পৃথক করে গণনা করবেন।’