শিরোনাম
ঢাকা, ২৫ জানুয়ারি, ২০২৫(বাসস): ঘরটি বেশ বড়সড়। দুই পাশে দুটি গোল সার্কেল করে দুই থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের বর্ণমালা শেখাচ্ছেন শিক্ষক তানজিলা জাহান ও সালমা আক্তার। পাশেই ছোট্ট রিফাত খেলনা ঘোড়ায় খেলছে আর গান গাইছে। দেড় বছরের মনিকাকে খাওয়াচ্ছেন আয়া আকলিমা বেগম।
এটা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মাতুয়াইল ডাম্পিং স্টেশনের (ময়লা ডাম্প করা হয় যেখানে) গেটের কাছে অবস্থিত একটি ডে-কেয়ার সেন্টারের চিত্র। গ্রাম-বাংলা উন্নয়ন কমিটি পরিচালিত এই ডে-কেয়ার সেন্টারে ১০৭ জন মায়ের ১২৭ টি শিশু সন্তান আছে। অধিকাংশেরই বয়স ২ থেকে ৭ বছরের মধ্যে। শুধু তিনটি শিশুর বয়স দুই বছরের নিচে। জীবিকার তাগিদে ডাম্পিং স্টেশনে কাজ করেন যারা তাদের শিশুদের নিয়েই চলছে এই ডে-কেয়ার সেন্টার।
রাজিয়া মাতুয়াইল ডাম্পিং স্টেশনে কাজ করেন, স্বামী এখানেই ভাঙ্গারির ভ্যান টানেন। স্ত্রী বিভিন্ন রকমের ভাঙ্গা জিনিসপত্র ময়লা থেকে বাছাই করেন আর স্বামী ভ্যানে করে ভাঙ্গারি দোকানে নিয়ে যান। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কাজ করেন রাজিয়া। স্বামী বাড়ি ফেরেন আরও পরে। তাদের সাড়ে তিন বছরের ছেলে বিল¬াল এ সময় থাকে মাতুয়াইল ডে-কেয়ার সেন্টারে।
রাজিয়ার মতো এই ডাম্পিং স্টেশনে কাজ করেন এমন অনেক নারী তাদের শিশুদের এই সেন্টারে রেখে কাজে যান। সেন্টার সংশ্লি¬ষ্টরা জানান, সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত এই ডে-কেয়ার সেন্টারের কার্যক্রম চলে। এখানে শিশুদের সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার ও বিকেলের নাস্তা দেওয়া হয়। এ ডে কেয়ার সেন্টারে শিশুদের অক্ষর জ্ঞানও দেওয়া হয়।
এই শিশুদের কেন্দ্র করে পাশেই গ্রাম-বাংলা উন্নয়ন কমিটি একটি প্রাথমিক স্কুলও গড়ে তুলেছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির মনিটরিং, ইভালুয়েশন এন্ড লার্নিং বিভাগের এসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর সায়মা সাইদ।
তিনি বলেন, বাবা-মায়েরা হতদরিদ্র ও অসচেতন বলে ডাম্পের নোংরা-আবর্জনাসহ বাচ্চাদের নিয়ে আসেন। আমাদের সহকর্মীরা তাদের মুখ-হাত ধোয়া থেকে শুরু করে কাপড় ধোয়া-পরিষ্কারের কাজ করে। সকাল-দুপুর-বিকেল তিন শিফটে এখানে কাজ হয়।
শুধু স্কুলই নয়, এখানে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও চালু করেছে গ্রাম-বাংলা উন্নয়ন কমিটি। প্রতিষ্ঠানের অ্যাডভোকেসি নেটওয়ার্ক ম্যানেজার মো. আবুল বাশার বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কাজ করা শ্রমিকদের শিশুদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য নিয়ে তারা কাজ করছেন। এই শিশু ও তাদের পরিবারকে দেখার জন্য তারা প্রতি সপ্তাহে একজন এমবিবিএস চিকিৎসককে আনেন। তারা শিশুদের প্রয়োজনীয় সকল ওষুধ দেন। এছাড়া বাবা-মাকেও প্রয়োজনে ওষুধ দেয়া হয়। যেহেতু তারা ময়লা-আবর্জনার পাশে থাকে, তাই তাদের চর্মরোগসহ সর্দি-জ্বর লেগেই থাকে।
গ্রাম-বাংলা উন্নয়ন কমিটির নির্বাহী পরিচালক এ কেএম মাকসুদ বলেন, এই ডে-কেয়ার সেন্টার হওয়ার আগে প্রত্যেক মা-ই তাদের কোলের শিশুকে নিয়ে আবর্জনা ও দুর্গন্ধের মধ্যে কাজ করতেন। ২০০৮ সাল থেকে তারা এসব মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ শুরু করেন। ২০১২ সালে ডে-কেয়ার সেন্টারটি চালু হয় এবং ২০১৫ সালে ডে কেয়ার সেন্টার ও স্কুলটি পূর্ণাঙ্গ ভাবে কাজ শুরু করে। ২০১৬ সাল পর্যন্ত ‘চাইল্ড হোপ ইউকে’ এবং বর্তমানে ‘কমিক রিলিফ আইএসএ’র ফান্ডে কাজ করছে গ্রাম-বাংলা উন্নয়ন কমিটি। শিশুদের ময়লা-আবর্জনা থেকে সরিয়ে অন্য পেশায় যুক্ত করাই তাদের মূল লক্ষ্য বলে মাকসুদ জানান।