মাদক ঝুঁকিতে পথশিশুরা : নেশার ফাঁদে বন্দি শৈশব

বাসস
প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩:০৬ আপডেট: : ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩:২৪
পথশিশু -প্রতীকী ছবি: সূত্র ইউনিসেফ’র ওয়েব সাইট

ঢাকা, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : বিগত ৮০ ও ৯০ দশকে যেসব অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত শিশু ‘টোকাই’ নামে পরিচিত ছিল তাদেরই এখন পথশিশু নামে ডাকা হয়। সমাজের প্রান্তিক অংশে বেড়ে ওঠা এসব শিশুরা নিজেদের মতো করে বাঁচার চেষ্টা করলেও, নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে ধীরে ধীরে জড়িয়ে যাচ্ছে মাদকের অন্ধকারে। ইচ্ছা করে কেউই পথশিশু হয় না। পারিবারিক দারিদ্র্য, অস্বচ্ছলতা, কিংবা পরিবার ভেঙে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তাদের এ পথে ঠেলে দেয়। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরের ট্রাফিক সিগনালে দেখা যায় শিশুরা ফুল বিক্রি করছে, গাড়ি পরিষ্কার করছে, কিংবা ময়লার ভাগাড় থেকে পলিথিন, কাগজ, বা প্লাস্টিক সংগ্রহ করছে। এসব কাজের মাধ্যমে অর্জিত অর্থের একটি বড় অংশ ব্যয় হয় মাদক সেবনে।

নেশার ফাঁদে বন্দি শৈশব

সম্প্রতি রাজধানীর পান্থপথ এলাকার একটি গলিতে দেখা যায়, ১০-১২ বছর বয়সী সোহেল নামে এক পথশিশু তার বড় বন্ধু কবিরের সঙ্গে বসে গাঁজা সেবন করছে। সোহেলের ভাষ্যমতে, তারা দু’জনই এতিম। দিনের বেলা ময়লা কুড়িয়ে যা উপার্জন করে, তা স্থানীয় এক অভিভাবকের কাছে জমা দেয়। সেই অভিভাবক তাদের খাবার এবং মাদক সরবরাহ করে।

সোহেল জানায়, ‘আমার বাবা-মা নেই। মা আমাকে এক যুবকের কাছে দিয়ে গেছে। সারাদিন যা উপার্জন করি, তা ওই মামার হাতে তুলে দিই। সে আমাকে খাবার আর গাঁজা দেয়। আমার কোনো স্বপ্ন নেই। আমি শুধু খেতে আর ঘুমাতে চাই।’

কবির যোগ করে, ‘এখানকার প্রায় সব ছেলেই মাদক নেয়। গাঁজা, চাক্কি (ঘুমের ওষুধ), ড্যান্ডি (জুতার আঠা), এমনকি গুল বা নকটিনের মতো মাদক সহজে পাওয়া যায়। আমরা শুধু গাঁজা আর ড্যান্ডি সেবন করি।’

মাদকের সহজলভ্যতা

এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পথশিশুদের মধ্যে ড্যান্ডি বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় মাদক। অল্প খরচে এবং সহজলভ্য হওয়ায় এটি তাদের কাছে বিশেষ আকর্ষণীয়। মাত্র ৮০-৯০ টাকায় এক বোতল ড্যান্ডি পাওয়া যায়।

এক সমীক্ষা অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে প্রায় ১০ লাখ পথশিশু রয়েছে, যার অর্ধেকের বয়স ১০ বছরের নিচে। এদের মধ্যে ৯৫ শতাংশই কোনো না কোনো মাদক গ্রহণ করে।

সমাধানের পথে এগিয়ে আসা জরুরি

মাদকবিরোধী সংগঠন ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশ-এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার সৈয়দা অনন্যা রহমান বলেন, ‘পথশিশুরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। তাদের পুনর্বাসনের জন্য সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা জরুরি। কেবল আইন করেই এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। সচেতনতা বৃদ্ধি, মাদকবিরোধী প্রচারণা এবং যথাযথ পুনর্বাসন কার্যক্রম এখন সময়ের দাবি।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘প্রথমেই আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যেন কোনো শিশু পথশিশুতে পরিণত না হয়। পাশাপাশি মাদককে সহজলভ্য করে তুলছে এমন উৎসগুলো বন্ধ করা এবং এ শিশুদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় ও শিক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি।’

পথশিশুদের জন্য সচেতনতা এবং দায়িত্বশীলতার সঙ্গে এগিয়ে এলে তাদের আলোকিত ভবিষ্যৎ তৈরি সম্ভব। আসুন, এই সংকট সমাধানে ব্যক্তিগত ও সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়ে এগিয়ে যাই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
ব্যাংককে ভবনধস: সংশ্লিষ্ট কোম্পানির চীনা নির্বাহী গ্রেফতার
ট্রাম্পের আমলে অতি ধনী ও টেক জায়ান্টদের ওপর কর আরোপ থেমে গেছে
মার্কিন শুল্কনীতির কারণে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমাতে পারে আইএমএফ: ব্লুমবার্গ
কুমিল্লায় আলুর ন্যায্য মূল্য নিয়ে বিপাকে কৃষকরা 
পুতিনের ইস্টার যুদ্ধবিরতির মধ্যেও রুশ হামলা অব্যাহত: জেলেনস্কি
গাজা সহায়তা নিয়ে হামাস নেতাদের সাথে তুরস্কের গোয়েন্দা প্রধানের বৈঠক
বর্ষা আসলেই বাঁধ ভাঙে, শঙ্কায় তিস্তা পারের মানুষ, দ্রুত বেড়িবাঁধ সংস্কারের দাবি রংপুরবাসীর
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নতুন দুই বিচারপতিকে সংবর্ধনা
দুই ওপেনারকে হারিয়ে প্রথম সেশনে ৮৪ রান বাংলাদেশের
বিএনপির সাথে বৈঠকে বসেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন
১০