নেত্রকোনা, ২৭ জুলাই, ২০২৫ (বাসস): জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটিয়েছি।
সেদিন ছাত্র-জনতা যে আশা আকাঙ্ক্ষা নিয়ে স্বৈরাচারকে হটিয়েছিল, তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি।
তিনি বলেন, অভ্যুত্থানের পরেও বাংলাদেশকে পুরোনো পদ্ধতিতে চালানোর চেষ্টা অব্যাহত আছে। এটা এ দেশের ছাত্র-জনতা মেনে নেবে না।
আজ রোববার দুপুরে নেত্রকোনা জেলা শহরের মোক্তারপাড়ার পুরাতন কালেক্টরেট মাঠে এনসিপি আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
জেলা শহরে যানজট ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষার কথা চিন্তা করে পূর্বঘোষিত জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচি বাতিল করে শুধু সমাবেশ করা হয়। সমাবেশের আগে জেলা সার্কিট হাউজে জুলাই গনঅভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারের সদস্যদের সাথে মতবিনিময় করেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ।
সকাল থেকে নেত্রকোনার বিভিন্ন উপজেলা থেকে দলটির নেতাকর্মীরা পুরাতন কালেক্টরেট মাঠে জমায়েত হতে থাকেন। দুপুর ১২টার দিকে নাহিদ ইসলামসহ কেন্দ্রীয় নেতারা সমাবেশস্থলে উপস্থিত হন। দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠক প্রীতম সোহাগের সঞ্চালনায় সমাবেশ শুরু হয়।
নাহিদ ইসলাম বলেন, অবিলম্বে সংস্কার, গণহত্যার বিচার ও নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে। মুজিববাদ ও ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে, জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র গড়ে তুলতে হবে। নতুন সংবিধানে মানুষের সকল অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ফ্যাসিস্ট সরকারের গণহত্যা ও সকল অপকর্মের বিচার করতে হবে।
তিনি বলেন,আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদকে উৎখাত করেছি। এখন গণতান্ত্রিকভাবে ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে সংস্কারের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে চাই। এজন্য আমরা মানুষের কাছে যাচ্ছি, তাদের কথা শুনছি।
তিনি বিচার, সংস্কার ও নতুন বাংলাদেশ গঠনে জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র নিশ্চিতে আগামী ৩ আগস্ট ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমবেত হওয়ার জন্য সবাইকে আহ্বান জানান।
সমাবেশে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরউদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে। আমাদের শরীরে একবিন্দু রক্ত থাকতে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র সহ্য করব না। অবিলম্বে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে হবে।
নেত্রকোনার ঐতিহাসিক নাজিরপুর যুদ্ধ দিবসের শহীদদের স্মরণ করে সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা বলেন, অনেক সময় আমাদের জাতীয় নাগরিক পার্টিকে বলা হয়, আমরা নাকি একাত্তরকে ধারণ করিনা। কিন্তু আমি বলব একাত্তরও আমাদের, চব্বিশও আমাদের। এ দুটি দিবস বাংলাদেশের সবার।
তিনি বলেন, নেত্রকোনার মানুষ কঠোর পরিশ্রম করেন। এ জেলার মানুষের সাথে পালাগান, হাওর, বাওরের একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এ অঞ্চলে বন্যা একটা বাস্তবতা। নিয়মিত বিরতিতে বন্যা হয়, বন্যায় আপনাদের ঘর-বাড়ি, ফসল, প্রাণ-প্রকৃতির ক্ষতি হয়। কিন্তু বন্যা মোকাবিলায় যেরকম প্রস্তুতি ও ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার, রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সেরকম ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। বরং আপনার আপনাদের নিজস্ব শক্তি ও সাহসের মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, এ জেলায় বন্যা মোকাবিলা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থায় অনেক পিছিয়ে রয়েছে। আমরা এমন একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থা চাই, যেখানে কেউ চিকিৎসার অভাবে মারা যাবে না এবং দুর্নীতি থাকবে না।
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, আরিফুল ইসলাম আদিব, যুগ্ম-আহ্বায়ক অর্পিতা শ্যামা দেব, জাতীয় যুবশক্তির কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব ডা. জাহেদুল ইসলাম, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার ও যুবশক্তির যুগ্ম আহ্বায়ক মারুফ আল হামিদসহ দলটির কেন্দ্রীয়ও স্থানীয় বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।