ঢাকা, ২৭ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : সরকারি ভবনগুলোর ছাদে সৌরশক্তি স্থাপনের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে প্রায় ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ করার সরকারের উদ্যোগের প্রশংসা করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
এই উদ্যোগের সফল বাস্তবায়নের জন্য যথাযথ পূর্ব পরিকল্পনা এবং কার্যকর বাস্তবায়ন নির্দেশিকাগুলোর উপর আলোকপাত করে সিপিডি বলেছে যে, এটি বাংলাদেশকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে।
সিপিডি আজ রোববার নগরীতে তাদের কার্যালয়ে ‘জাতীয় ছাদ সৌরশক্তি কর্মসূচি: এর নকশা, বাস্তবায়ন, পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন সংক্রান্ত প্রস্তাবনা’ শীর্ষক আলোচনায় এ অভিমত ব্যক্ত করেছে।
সিপিডি এবং বাংলাদেশ টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি সমিতি (বিএসআরইএ) যৌথভাবে এই আলোচনার আয়োজন করে।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম আলোচনা পর্ব সঞ্চালনা করেন এবং সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট হেলেন মাশিয়াত প্রিয়তি এবং বিএসআরইএ সদস্য মো. নাসির উদ্দিন উপস্থাপনা করেন।
হেলেন মাশিয়াত প্রিয়তি তার উপস্থাপনায় বলেন, কর্মসূচিটি পুরোদমে চালানোর পরিবর্তে নির্বাচিত এলাকাগুলোর জন্য পাইলট প্রকল্প দিয়ে শুরু করা উচিত।
তিনি বলেন, বিকিরণের প্রভাব, বিভিন্ন বিভাগে অর্থায়নের সম্ভাবনা, গ্রিড প্রস্তুতি, প্রধান প্রধান লোডশেডিং এলাকা এবং আরইবি সমিতির উপস্থিতির উপর ভিত্তি করে পাইলট প্রকল্পের নমুনা নির্বাচন করা উচিত।
নতুন কর্মসূচিকে পূর্ববর্তী কর্মসূচির ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিতে হবে এবং একই নীতির পুনরাবৃত্তি করা উচিত নয়।
তিনি আরও বলেন ‘কার্যক্রমের সফল বাস্তবায়নের জন্য একটি নীতিমালা থাকা উচিত। সৌর প্যানেল, ব্যাটারি এবং ইনভার্টার থেকে সকল ধরণের শুল্ক, আমদানি শুল্ক, ভ্যাট এবং কর অব্যাহতি দেওয়া উচিত।’
তিনি বলেন, জাতীয় ছাদ সৌর কর্মসূচির সর্বাধিক কার্যকারিতার জন্য, সৌর বিকিরণ সম্ভাবনা এবং সরকারি অফিসের অবস্থানের উপর ভিত্তি করে স্থান নির্বাচন করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রযুক্তিগত এবং আর্থিক সম্ভাব্যতা নিশ্চিত করার জন্য একটি উপযুক্ত, স্থান ভিত্তিক পদ্ধতি অপরিহার্য।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় ছাদ সৌর কর্মসূচির সাফল্য নিশ্চিত করার জন্য, প্রতিটি স্থাপনার ছায়া বিশ্লেষণসহ ছাদ ও কাঠামোগত মূল্যায়ন, সৌর বিকিরণ এবং টিল্ট অপ্টিমাইজেশন এবং স্থান ভিত্তিক সরঞ্জাম নির্বাচন এবং একটি বিস্তৃত সম্ভাব্যতা যাচাই করতে হবে।
তিনি বলেন, গ্রিড বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া চলাকালীন, এনইএম ট্যারিফ ইউটিলিটি প্রদানকারীদের সাথে আলোচনা করে চূড়ান্ত করা উচিত।
তিনি বলেন, এই কর্মসূচির সম্পূর্ণ ক্রয় প্রক্রিয়াটি প্রযুক্তি সম্পৃক্ত হওয়ার কারণে প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়নে জন্য একটি প্রযুক্তিগত কমিটি থাকতে হবে।
তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন নামীদামী ল্যাবগুলিকে ইনস্টলেশনের আগে এবং পরে সরঞ্জাম পরীক্ষার দায়িত্ব দেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত সরকারি ভবনের ছাদে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে একটি পুনঃঅর্থায়ন প্রকল্প অথবা একটি সবুজ শক্তি তহবিল চালু করা।
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি ভবনগুলোতে ক্যাপেক্স এবং ওপেক্স-ভিত্তিক ছাদ সৌর প্রকল্প উভয় ক্ষেত্রেই, একটি সার্বভৌম গ্যারান্টি বা ব্যাংক গ্যারান্টি প্রক্রিয়া প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করা উচিত। অর্থ মন্ত্রণালয় বা কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক জারি করা একটি সার্বভৌম গ্যারান্টি সময়মত অর্থ প্রদান এবং চুক্তি বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা প্রদান করবে।’
তিনি বলেন, সরকারি ক্রয় ও অবকাঠামোগত স্বচ্ছতার সমস্যাগুলির কারণে, তৃতীয় পক্ষের পর্যবেক্ষণ ও যাচাইকরণ প্রক্রিয়া চালু করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরও বলেন, ছাদের সৌরশক্তি ব্যবস্থার জরুরি মেরামত ও গুরুত্বপূর্ণ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিশেষ করে ওপেক্স মডেলের অধীনে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিতে যেখানে বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণ বাজেট অপর্যাপ্ত বা অনুপস্থিত সেক্ষেত্রে সরকারি সহায়তায় একটি গ্যারান্টি তহবিল চালু করা উচিত।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স বিভাগের প্রাক্তন পরিচালক খোন্দকার মোর্শেদ মিল্লাত এবং জিওসোলার বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার নাজনীন আখতার।