ঢাকা, ২৩ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, ‘জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে আমরা এ দেশ থেকে স্বৈরাচারকে বিদায় করতে পেরেছি। বিপরীত শক্তি আমাদের বিভক্ত করার চেষ্টা করছে। সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘স্বৈরাচার বিরোধী যে দলই হোক- বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপিসহ অন্যান্য সব দলকে জাতীয় স্বার্থে, দেশের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। বাংলাদেশি জনগণের একটাই শক্তি রয়েছে, সেটা হলো ঐক্য। সেটা আমরা জুলাই-আগস্টে প্রমাণ করেছি।’
আজ বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে দেওয়া বক্তব্যে মির্জা আব্বাস একথা বলেন।
‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে গণতন্ত্র, সংস্কার ও বাস্তবতা’- শীর্ষক এ সভার আয়োজন করে গণতন্ত্র ফোরাম।
বিএনপি সংস্কার ও নির্বাচন দুটোই চায় উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, আমরা এমন সংস্কার চাই, যেটা দেশের মানুষের জন্য প্রয়োজন। অপ্রয়োজনীয় সংস্কার- যেটা আরও বিপদ ডেকে আনবে, এমন সংস্কার আমাদের প্রয়োজন নেই।’
তিনি বলেন, ‘আজ একটা অবস্থা এসেছে যে, দেশের নির্বাচন না সংস্কার। অথচ নির্বাচনের বিকল্প শুধু নির্বাচনই হতে পারে, অন্য কিছু হতে পারে না। আমাদের জন্য, নির্বাচনের জন্য, দেশের জন্য ও দেশের মানুষের জন্য যে সংস্কারটুকু প্রয়োজন, আমরা সেই সংস্কারটুকুই চাই।’
মির্জা আব্বাস আরো বলেন, ‘আমি একবার বলেছিলাম, আপনারা যে সংস্কারের কথা বলছেন, সব মানা যাবে না। সেই কথাটিকে টুইস্ট করে আমাদের বিদেশে অবস্থানরত তথাকথিত সাংবাদিক বললেন যে, বিএনপি সংস্কার চায় না, মির্জা আব্বাস সংস্কার চায় না।’
বিএনপি’র এই সিনিয়র নেতা বলেন, জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী এই নির্বাচন কমিশন নির্বাচন দেবে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, নির্বাচন ডিসেম্বর না হলেও জুনের মধ্যে হবে। এই কথাটাই আমাদের বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। একবার বললেন ডিসেম্বর, আবার বললেন জুনের কথা। ভোট ডিসেম্বরে, প্রধান উপদেষ্টা এটা বলার পরপরই আরেকজন বললেন, ভোট জুনে হবে। নির্বাচন দ্রুত দেওয়ার কোনও লক্ষণ আমি দেখি না।’
ডানে-বাঁয়ের লোকদের থেকে প্রধান উপদেষ্টাকে সাবধানে থাকার ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘মুহাম্মদ ইউনূসকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলতে চাই, কয়েক দিন আগে যে লোককে নিয়োগ করা হয়েছে, সুফিউর না কী যেন নাম, এ তো আওয়ামী লীগের প্রোডাক্ট। আরও আওয়ামী লীগের প্রোডাক্ট আপনার ডানে-বাঁয়ে আছে। দয়া করে এদের কাছ থেকে সাবধানে থাইকেন। এরা পাঁচজন (কয়েকজন সচিব) এবং আপনার উপদেষ্টা পরিষদের কিছু লোক আপনাকে সঠিক রাস্তায় চলতে দেবে না। আপনার সারা জীবনের অর্জন, আপনি নোবেল লরিয়েট...এরা শেষ করে দেবে।’
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, আমরা আজ থেকে ২০ বছর আগে তাকে যেমন দেখেছি, এখন দেখছি অনেক তফাৎ। আজ তারেক রহমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন এবং সঠিকভাবে পালন করছেন। যারা এক সময় তাকে পছন্দ করতেন না, তারাও আজ বলতে বাধ্য হচ্ছেন, তারেক রহমানের মধ্যে ম্যাচুরিটি এসেছে। এটা শুনতে ভালো লাগে আমাদের।
বিএনপি’র এই নেতা বলেন, ‘খেয়াল করলাম, এনসিপি’র (নতুন আত্মপ্রকাশ করা দল) এক শীর্ষ নেতা বলে ফেলল, এখন নির্বাচন করা সম্ভব নয়। কারণ, প্রশাসনের সব জায়গায় বিএনপি’র লোক বসা আছে। ১৭ বছর আওয়ামী লীগ দেশ শাসন করল, বিএনপি’র লোক কই পাইলেন? আমি তো বুঝলাম না। ১৭ বছরে বিএনপি’র লোক মইরা ভূত হয়ে গেছে, একটাও নাই। অথচ আপনারা বলেন, সব বিএনপি’র লোক প্রশাসনে বসে আছে।’
বিএনপি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে- এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ইদানীং একটা গ্রুপ ফেসবুকে বলার চেষ্টা করছে, বিএনপি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে। ১৭ বছর আওয়ামী লীগ যন্ত্রণায় পাগল হয়ে গেছি। পরিবার-পরিজনসহ অশান্তিতে ভুগেছি। বিএনপি’র অনেকের পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে আওয়ামী লীগের অত্যাচারের কারণে। বরং আমি বলতে চাই, আওয়ামী লীগকে যারা দেশে পুনর্বাসিত করার চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। এই দেশে আওয়ামী লীগের অবস্থান থাকতে পারে না। শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মীসহ প্রশাসনের ব্যক্তি সবার বিচার হতে হবে।
আলোচনা সভায় গণতন্ত্র ফোরামের সভাপতি ভি পি ইব্রাহিমের সভাপতিত্বে বিএনপি’র যুগ্ম-মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহ বক্তব্য দেন। সভা সঞ্চালনা করেন গণতন্ত্র ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুর রহমান।