ডায়রিয়ায় আমাদের করণীয়

বাসস
প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৫, ১৮:৫২ আপডেট: : ১৭ মে ২০২৫, ১৯:২৬
প্রতীকী ছবি

ঢাকা, ১৭ মে, ২০২৫ (বাসস) : দেশের বিভিন্ন এলাকায় এখন প্রচণ্ড গরমের কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েই চলেছে। ডায়রিয়া থেকে রক্ষা পাচ্ছে না শিশু এবং নারীরা। সময়মতো চিকিৎসা দিতে না পারলে এতে জীবন মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। বিশেষ করে শিশুদের ডায়রিয়া প্রতিরোধে নিতে হবে বাড়তি যত্ন। কেননা বড়দের চেয়ে শিশুদের শরীরের কোষের বাইরের পানি বা এক্সট্রা সেলুলার ফ্লুইড বেশি থাকে। ফলে ডায়রিয়া হলে সহজেই তাদের শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়ে। পানিশূন্যতা তীব্র হলে শিশু অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। 

বিরূপ আবহাওয়ার কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকায় এখন ডায়েরিয়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। হাসপাতালে বেড়ের চেয়ে রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি হচ্ছে। গরমকালে ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। প্রতিবার পাতলা পায়খানার সাথে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি ও লবণ বের হয়ে যায় এবং তা যথাযথভাবে পূরণ করা না হলে, রোগীর পানিশূন্যতা, লবণশূন্যতা এমনকি রক্তচাপ কমে গিয়ে মারাত্মক আকার ধারণ করে। এতে মৃত্যুও হতে পারে। 

স্যালাইন কতটুকু খেতে হবে তা নির্ভর করবে কতবার পাতলা পায়খানা হচ্ছে বা কতটুকু পানি হারাচ্ছেন তার ওপর। ডায়রিয়ার কারণে একজন মানুষ মাত্র কয়েক ঘণ্টায় এক থেকে দেড় লিটারের বেশি পানি হারাতে পারেন। সহজ কথা হলো, প্রতিবার পায়খানা হওয়ার পর স্যালাইন খাওয়া এবং অল্প করে সারা দিন বারবার খাওয়া। এর বাইরে সারাদিন পানি ও তরল খাবার যেমন- স্যুপ, ডাবের পানি ইত্যাদি খেতে হবে। অনেক সময় ফুড পয়জনিংয়ের কারণে বমি বা পাতলা পায়খানা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত ওষুধ খাওয়া ঠিক হবে না, কারণ পয়জনিংয়ের ক্ষেত্রে বরং কিছু সময় বমি ও পাতলা পায়খানার মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ পয়জন বের হয়ে যায়। 

ডায়রিয়া শুরু হলে আধা সের/লিটার বিশুদ্ধ পানিতে এক প্যাকেট খাবার স্যালাইন ভালোভাবে মিশিয়ে রোগীকে খাওয়াতে হবে। বয়স দুই বছরের নিচে হলে তাদের প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর ১০ থেকে ২০ চা চামচ, দুই বছরের বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে ২০ থেকে ৪০ চা চামচ করে যতবার পাতলা পায়খানা হবে ততবারই খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে। বানানো খাবার স্যালাইন ৬ (ছয়) ঘণ্টা পর্যন্ত খাওয়ানো যায়। এরপর প্রয়োজন হলে আবার নতুন করে খাবার স্যালাইন বানাতে হবে। শিশুর ডায়রিয়া হলে খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি মায়ের বুকের দুধ বেশি করে খাওয়াতে হবে। এছাড়া বড়দের স্বাভাবিক সব ধরনের খাবার খাওয়াতে হবে। তবে তরল জাতীয় খাবার বেশি করে খাওয়াতে হবে। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের ভাতের মাড়, ডাবের পানি, চিড়ার পানি, লবণ-গুড়ের শরবত, খাবার স্যালাইন, বিশুদ্ধ পানি খাওয়াতে হবে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীদের জন্য পৃথক ইউনিট খোলা হয়েছে। সেখানে রোগীদের বিশেষভাবে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, হাত না ধুয়ে কোনো কিছু খেলে বা বাসি, পচা খাবার খেলেও ডায়রিয়া হতে পারে। অনেকেই ওয়াসার সরবরাহকৃত লাইনের পানি পান করে। পানির মাধ্যমে ডায়রিয়ার জীবাণু বেশি ছড়ায়। তাই পানি ফুটিয়ে পান করা সবচেয়ে বেশি নিরাপদ। আবার কেউ কেউ রাস্তাঘাটে খোলা খাবার এবং শরবত খেয়েও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন। বারবার পাতলা পায়খানা হলে, বমি হলে, ঝুঁকি না নিয়ে নিকটস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে রোগীকে ভর্তি হতে হবে।

ডায়রিয়া একটি সাধারণ রোগ। আজকাল ডায়রিয়া বা কলেরায় মৃত্যুর হার খুবই কম। কিন্তু আক্রান্ত হলে মানুষ দুর্বল হয়ে পড়ে, কার্যক্ষমতা কমে যায়। তাই সরকারের পাশাপাশি গণমাধ্যমেরও উচিত ডায়রিয়া প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা। ডায়রিয়া থেকে বাঁচতে বিশুদ্ধ খাবার পানি এবং টাটকা খাবার খেতে হবে। পচা ও বাসি খাবার খাওয়া যাবে না। বাজারের খোলা খাবার খাওয়া যাবে না। বৃদ্ধ ও শিশুদের প্রতি বাড়তি মনোযোগ দিতে হবে। গরমের সময় শিশু ও বৃদ্ধদের আঁটোসাঁটো পোষাক না পরে ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে। পোশাক সুতির হলে বেশি ভালো হয়। মনে রাখতে হবে ‘প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিউর।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে এসেছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
জবিতে ‘বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস’ পালিত
ঝিনাইদহে বজ্রপাত প্রতিরোধে তাল গাছের চারা রোপণ করল পুলিশ
সেপ্টেম্বর ছিল ইতিহাসের তৃতীয় উঞ্চতম মাস
জামায়াত আমিরের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনারের সৌজন্য সাক্ষাৎ
স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে জেহাদ অবিস্মরণীয় নাম: তারেক রহমান
টাঙ্গাইলে ১০ লাখ ১৬ হাজার ১১২ জন শিশু টাইফয়েড টিকাদানের আওতায় 
ড. তোফায়েল আহমেদের ইন্তেকালে জামায়াতের শোক
লক্ষ্মীপুরে গ্রাম আদালতের সুফল পাচ্ছেন নাগরিকরা, সহজে সেবা পাওয়ায় খুশি 
সারাদেশে ১০ হাজার মিডওয়াইফ নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে: মহাপরিচালক
১০