সরকার দেশের মানুষের স্বার্থ সুরক্ষায় প্রচেষ্টা চালাচ্ছে : ভোক্তা মহাপরিচালক

বাসস
প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৫, ১৭:৫০
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলীম আখতার খান। ফাইল ছবি

ঢাকা, ১৭ জুন, ২০২৫ (বাসস) : নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও  সরকার সীমিত সামর্থ্য ও লজিস্টিক দিয়ে দেশের ১৮ কোটি ভোক্তার স্বার্থ সুরক্ষায় প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন বলে জানিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলীম আখতার খান।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের সহযোগিতায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উদ্যোগে গতকাল সোমবার বিকেলে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজ সম্মেলন কক্ষে ‘ভোক্তা স্বার্থ রক্ষায় চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। 

চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীনের সভাপতিত্বে সেমিনারে আলোচক ছিলেন- চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম ও ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ফয়েজ উল্যার স্বাগত বক্তব্যের পর সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের সহকারী অধ্যাপক সাইদ আহসান খালিদ।

আলীম আখতার বলেন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকার পরও নানা আইনগত জটিলতার কারণে দেশের মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে ব্যবসায়ীরা যদি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হন আর সাধারণ ভোক্তারা যদি আইন জেনে নিজেরা তাদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার হন, তাহলে ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব।

তিনি বলেন, ভোক্তা সংরক্ষণ আইন ২০০৯ সালে প্রণীত হয়েছে। সে সময়ে অনেক বিষয়কে আমলে নিয়ে আইনটি প্রণীত হলেও সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য আইনটিকে যুগোপযোগী করা হচ্ছে। 

আলীন আখতার আরো বলেন, আইনটি সংশোধনের জন্য ইতোমধ্যেই কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং দ্রুত আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। 

তিনি বলেন, প্রশাসনিক জটিলতায় অধিদপ্তরের লোকবল নিয়োগে বিলম্বের কারণে ২৪টি জেলায় কর্মকর্তার পদ শূন্য আছে, যার কারণে ওই সব জেলায় ভোক্তা অধিকার সুরক্ষা ব্যাহত হচ্ছে।

‘ভোক্তা স্বার্থ রক্ষায় চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন- সিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার মাহমুদা বেগম, জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আলমগীর, জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা ফারহানুল ইসলাম, সিভিল সার্জন অফিসের সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা থোয়াইনু মং মার্মা, চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বারের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আইভি হাসান, ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, কাজীর দেউরী বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুর রাজ্জাক, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি সালেহ আহমদ সোলেমান, চট্টগ্রাম রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি ইলিয়াছ আহমদ, বারকোট রেস্টুরেন্ট এর স্বত্বাধিকারী মনজুরুল হক, বনফুলের জেনারেল ম্যানেজার আনামুল হক, ফুলকপির জেনারেল ম্যানেজার আবদুর সবুর, ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের যুগ্ম সম্পাদক মো. সেলিম জাহাঙ্গীর, চট্টগ্রাম ড্রিংকিং ওয়াটার ম্যানুফেকচার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফয়সল আবদুল্লাহ আদনান, ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস, যুব ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি আবু হানিফ নোমান, যুব ক্যাব চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি রাব্বি তৌহিদ ও সাধারণ সম্পাদক খাইরুল ইসলাম প্রমুখ।

সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীন বলেন, একটি সমাজকে পুরোপুরি পরিশুদ্ধ হতে হলে, সকল পর্যায়ের মানুষের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। তা না হলে সমাজে বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করবে। 

তিনি আরো বলেন, আমাদের সমাজ ব্যবস্থায়, এখনো মুষ্টিমেয় অসাধু লোকের প্রভাব বলয় থেকে সমাজ ও পরিবেশ মুক্ত নয়। তারা সমাজকে কলুষিত করছে। সেখানে আইনের শাসন ও প্রথা সেভাবে কার্যকর নয়। তাই ভোক্তা অধিকার সুরক্ষা দিতে হলে সকলকে একযোগে কাজ করার বিকল্প নাই। কারণ যিনি একটি পণ্যের ব্যবসায়ী, তিনি আরও দশটি পণ্যের ক্রেতা। সে কারণে সে যদি একটি পণ্য বিক্রি করে মানুষকে প্রতারিত করে থাকেন। তাহলে আরও দশটি পণ্য কিনে ঠকতে হচ্ছে। এটি কোনোভাবেই একটি সভ্য সমাজে চলতে দেয়া যায় না।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, জেলা প্রশাসন ভোক্তা অধিকার সুরক্ষায় যাবতীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তবে বাণিজ্যিক হাব হিসাবে যেভাবে বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব প্রদান করা দরকার, প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাবে সেভাবে করা না গেলেও বিভিন্ন অভিযানের মধ্য দিয়ে জেলা প্রশাসনের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।

ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, আইনের দুর্বলতার পাশাপাশি সাধারণ ভোক্তাদেরকে সচেতন করতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। 

সরকারকে ব্যবসায়ী তোষণ নীতির পরিবর্তে ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি। 

তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ টিভি ও পত্রিকায় একতরফা বিজ্ঞাপন দিয়ে পণ্য বিক্রি করলেও ভোক্তারা প্রতারিত হচ্ছেন। যার কারণে দেশে ন্যায্য ব্যবসা বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের পৃষ্টপোষকতা প্রদানে রাজনৈতিক দল ও সরকারকে সতর্ক হবার আহ্বান জানিয়ে দেশের স্বার্থে সাধারণ মানুষের বিষয়গুলোর প্রতি আরও যত্নবান হবার অনুরোধ করেন ক্যাব ভাইস প্রেসিডেন্ট।

মূল প্রবন্ধে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের সহকারী অধ্যাপক সাইদ আহসান খালিদ উল্লেখ করেন, ভোক্তা সংরক্ষন আইন, নিরাপদ খাদ্য আইন এবং ওষুধ ও কসমেটিক আইনে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো, বিশেষ করে সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তি সরাসরি আদালতে মামলা করতে বাধার বিষয়টি দূর করা দরকার। এছাড়াও আইন প্রয়োগে অধিকাংশ জায়গায় শিথিলতার কারণে মানুষ আইন না মানার সংস্কৃত বন্ধে জোর দেন। 

তিনি একই সঙ্গে আইন ও অধিকার সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। 

এছাড়াও তিনি ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের মধ্যকার বিরোধ নিষ্পত্তিতে শালিসী কার্যক্রম জোরদার, পণ্যের মান পরীক্ষায় সুযোগ সুবিধা ও জনবল বাড়ানোর সুপারিশ করেন।

সেমিনারে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন স্তরের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, ছাত্র প্রতিনিধি, ক্যাব চট্টগ্রাম এর প্রতিনিধিসহ সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
প্রবীণ সাংবাদিক ও বাসস পরিচালনা বোর্ডের সদস্য আলমগীর মহিউদ্দিনের দাফন সম্পন্ন
এখনই নির্বাচন হলে বিএনপি সর্বোচ্চ আসনে জিতবে : সাবেক এমপি হাবিব
খুলনায় বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন কমিটি গঠিত
পিআরের উদ্দেশ্য হলো ‘যদি কিছু পায়’: বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন
নীলফামারীতে চীনের উপহারের হাসপাতালের প্রস্তাবিত স্থান পরিদর্শন স্বাস্থ্য উপদেষ্টার
খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় শিবগঞ্জে ফ্রি চক্ষু মেডিকেল ক্যাম্প
সারা দেশে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গ্রেফতার ১,৬৬৫
ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার প্রস্তুতি ইসির
সম্পর্ক জোরদারে সম্মত জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া
সরকারি খরচে ১২ লাখ ৬১ হাজার ৬৫০ জনকে আইনি সহায়তা
১০