ঢাকা (উত্তর), ১৭ জুন, ২০২৫ (বাসস) : দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর অব্যাহত আগ্রাসন, জাতিগত নিধন এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে মুসলিম বিশ্বসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।
আজ মঙ্গলবার ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘ইসরাইলের বর্বর আগ্রাসন আন্তর্জাতিক আইন, মানবতা ও মুসলিম বিশ্বের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে সরাসরি হুমকি। আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, সম্প্রতি ইসরাইল ধারাবাহিকভাবে মুসলিম বিশ্বে আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে। যার সর্বশেষ উদাহরণ-গত ১৩ জুন শুক্রবার মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানের রাজধানী তেহরানে স্থানীয় সময় ভোর ৪টার দিকে দেশটির পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনাকে মূল লক্ষ্যবস্তু করে একাধিক বিমান হামলা । এতে ইরানের বিপ্লবী গার্ড প্রধান হোসেইন সালামি, সেনাপ্রধান মোহাম্মদ বাগেরি এবং অন্তত ছয়জন পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন। সোমবার ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল আইআরআইবিতে বোমা নিক্ষেপ করে ইসরাইল। হামলায় ৩ সাংবাদিক নিহত হন। এ ছাড়া গত ১৩ জুন থেকে শুরু হওয়া লাগাতার ইসরাইলি বর্বরতায় এখন পর্যন্ত সামরিক-বেসামরিক নারী-শিশুসহ অন্তত ২২৪ জনের মৃত্যুর তথ্য দিচ্ছে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন। ইসরাইলি হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরানও পালটা হামলা চালায়। এতে যুদ্ধ পরিস্থিতি যে দিকে অগ্রসর হচ্ছে, তা মধ্যপ্রাচ্যসহ পুরো বিশ্বের জন্য মারাত্মক হুমকি।’
নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘ইরানের বিরুদ্ধে এই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বিগত এক দশকে ইসরাইল ধারাবাহিকভাবে সিরিয়া, ইরাক ও লেবাননে হামলা চালিয়ে প্রায় ১ হাজার ১৪০ জনকে হত্যা করেছে, যাদের মধ্যে ইরানের রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম রাইসি এবং লেবাননের হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ অন্যতম। এ ছাড়াও ইরানের বিপ্লবী গার্ড, সামরিক-বেসামরিক নাগরিক, শিশুসহ অসংখ্য মানুষের ওপর নির্মম হামলা চালায় বর্বর ইসরাইলি বাহিনী। শুধু ২০২৪ সালেই সিরিয়া ও ইরাকে ইসরাইলি ড্রোন ও বিমান হামলায় নিহতের সংখ্যা প্রায় ৩৭৮ জন।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় বর্বর ইসরাইলি বাহিনীর চলমান গণহত্যা বিশ্ব বিবেককে বারবার প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। ১৯৪৭-৪৮ সালে জাতিসংঘের পরিকল্পনার আড়ালে ‘নাকবা’ ঘটিয়ে তারা ফিলিস্তিনের ৫৩১টি গ্রাম ধ্বংস করে, অন্তত ৮ লাখ মানুষকে উৎখাত করে এবং ১১টি শহর সম্পূর্ণভাবে দখলে নেয়। ইতোমধ্যে সামগ্রিকভাবে ফিলিস্তিনের ৮৫ শতাংশ ভূমি দখলে নিয়েছে ইসরাইল। টানা ৭৬ বছরের ইসরাইলি বর্বরতায় প্রায় ১ লাখ ৩৬ হাজার ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী শুধু ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের মে পর্যন্ত ইসরাইলি আগ্রাসনে প্রায় ৫৫ হাজারের অধিক ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১ লাখ ৯ হাজার জনেরও বেশি মানুষ। নিহতদের অন্তত ৪৮ শতাংশ নারী ও শিশু। সাম্প্রতিক সময়ে খাদ্য সহায়তার জন্য জড়ো হওয়া মানুষের ওপর চালানো হামলা ‘ফ্লাওয়ার ম্যাসাকার’ এ নিহত হন ১১৮ জন। টার্গেট কিলিংয়ের মাধ্যমে শহীদ করা হয় হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাঈল হানিয়া, সামরিক শাখার প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার, খালেদ মিশালসহ অসংখ্য নেতৃবৃন্দকে।
ছাত্রশিবির নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশ সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করে মুসলিম উম্মাহর ন্যায্য অধিকারের পক্ষে সময়োপযোগী ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।