প্লাস্টিক দূষণ রোধে ও নগর স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধিতে আইসিডিডিআর, বি-র প্রয়াস

বাসস
প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২৫, ১৯:৪২
ছবি : বাসস

ঢাকা, ১৯ জুন, ২০২৫ (বাসস) : বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২৫ উপলক্ষ্যে এক বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে আইসিডিডিআর,বি। 

আজ বৃহস্পতিবার ‘প্লাস্টিক দূষণ বন্ধ করি’ এই বৈশ্বিক প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আইসিডিডিআর, বি-র এনভায়রনমেন্টাল হেলথ অ্যান্ড ওয়াশ রিসার্চ গ্রুপ এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে গবেষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, উন্নয়ন সহযোগী, সরকারি কর্মকর্তা এবং পরিবেশকর্মীরাসহ তিন শতাধিক মানুষ অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ বলেন, এখানে উপস্থিত পরিবেশ সুরক্ষার চ্যাম্পিয়ন এবং বিশেষ করে আইসিডিডিআর,বি-এর গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা দেখে আমি ভীষণ অনুপ্রাণিত। প্লাস্টিক দূষণের মতো পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি পরিচ্ছন্ন, সবুজ ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এবং প্রতিটি নাগরিকের সম্মিলিত অঙ্গীকার অপরিহার্য।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. কামরুজ্জামান বলেন, এই সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকার গভীরভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আইসিডিডিআর,বি-র মেধাবী গবেষকদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, আপনাদের গবেষণা ও উদ্ভাবনগুলো আমাদের নীতি নির্ধারণে সহায়ক হবে। পরিবর্তনের ক্ষমতা প্রতিটি নাগরিকের হাতেই নিহিত, কোটি কোটি ক্ষুদ্র পদক্ষেপ যখন সম্মিলিত হয়, তখন তা পরিবর্তনের এক বিশাল ঢেউ সৃষ্টি করে। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য যেন প্লাস্টিকের স্তূপ রেখে না যাই, বরং রেখে যাই একটি পরিচ্ছন্ন, সবুজ ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ—এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

অনুষ্ঠানে আইসিডিডিআর,বি-এর নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, পরিবেশ নিয়ে আমাদের সব কাজের মূল লক্ষ্যই হলো মানুষের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা। আমাদের গবেষণা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, চারপাশে ছড়িয়ে থাকা আবর্জনার স্তূপ এবং সিসার মতো নীরব দূষণ মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। এর কারণে পুষ্টির অভাব, অপুষ্টি এবং এমনকি মস্তিষ্কের বিকাশেও সমস্যা হয়। তাই আমাদের মানুষের ভালো থাকার জন্য এসব পরিবেশগত সমস্যা মোকাবিলা করা অত্যন্ত জরুরি।

এনভায়রনমেন্টাল হেলথ অ্যান্ড ওয়াশ প্রোগ্রামের প্রধান ও প্রকল্প সমন্বয়ক ড. মো. মাহবুবুর রহমান পরিবেশগত স্বাস্থ্যে আইসিডিডিআর,বি-র গবেষণা এবং প্রমাণ-ভিত্তিক সমাধানের মাধ্যমে অর্জিত উল্লেখযোগ্য সাফল্যের কথা তুলে ধরেন। এছাড়াও, অনুষ্ঠানে পরিবেশের সুস্থতা আর জনস্বাস্থ্যের গভীর সম্পর্ক তুলে ধরা হয়, বিশেষ করে যত্রতত্র পড়ে থাকা আবর্জনার স্তূপের ভয়াবহ প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, এখান থেকে উৎপন্ন ব্যাকটেরিয়া আন্ত্রিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে এবং অপুষ্টির কারণ হতে পারে।

আলোচনায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ও সুপারিশের ওপর জোর দেওয়া হয়, যার সপক্ষে তথ্য-প্রমাণও তুলে ধরা হয়। প্লাস্টিক দূষণ মোকাবেলায়, যার বৈশ্বিক উৎপাদন ২০০৪ সাল থেকে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ৪৩ কোটি মেট্রিক টনে পৌঁছেছে, ব্যক্তিগতভাবে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পরিহার এবং প্রাকৃতিক তন্তুর পোশাক বেছে নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এছাড়া, কমিউনিটি পর্যায়ে বর্জ্য সংগ্রহ ও আলাদা করার সুসংগঠিত উদ্যোগের কথাও বলা হয়। শিল্পের জন্য পরিবেশবান্ধব মোড়ক ব্যবহার এবং সঠিক পরিস্রাবণ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়। নীতিগত পর্যায়ে কঠোর আইন প্রয়োগ এবং সংশ্লিষ্ট বিধিমালা বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয় এবং উৎপাদকদের দায়িত্ব বাড়ানো বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হয়।

সিসা দূষণের বিষয়ে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবেশগত স্বাস্থ্য সাফল্যের কথা তুলে ধরা হয়। ইনস্টিটিউট অব হেলথ ম্যাট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশন এর তথ্য অনুসারে বাংলাদেশের প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ শিশু সিসার বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত। এর একটি বড় উৎস হিসেবে হলুদ গুঁড়োতে থাকা লেড ক্রোমেটকে চিহ্নিত করা হয়। এই গবেষণার ফলস্বরূপ সরকার লেড ক্রোমেট আমদানি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেয়, যার ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হলুদে সিসার দূষণ ২৭% থেকে একেবারে ০%-এ নেমে আসে। সিসা নিয়ে আরও বৃহত্তর কর্মপরিকল্পনায় বাতাস, জল এবং মাটি থেকে বিষাক্ত দূষণ দূর করা, লেড-এসিড ব্যাটারির পুনর্ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা, বাজার থেকে সিসাযুক্ত পণ্য সরানো, শিল্প ও যানবাহনের সিসা নির্গমন নিয়ন্ত্রণ করা, ভোক্তা পণ্যে সিসামুক্ত মান নিশ্চিত করা এবং মসলা ও খাদ্য পণ্যের নিয়মিত পর্যবেক্ষণ অন্তর্ভুক্ত ছিল।

ইটভাটার ধোঁয়া কমানোর জন্য উদ্ভাবনী, কম খরচের সমাধানও উপস্থাপন করা হয়। এই ভাটাগুলো বার্ষিক কার্বন ডাই অক্সাইডের ১১% এবং ঢাকা শহরের পিএম ২.৫-এর ৫৮% এর জন্য দায়ী। বাস্তবায়িত সমাধানগুলো উল্লেখযোগ্য ফলাফল দেখিয়েছে, যার মধ্যে কয়লার ব্যবহার ২৩% হ্রাস এবং কার্বন ডাই অক্সাইড ও পিএম ২.৫ নির্গমন ২০% হ্রাস। এছাড়াও, হাসপাতালগুলোতে বর্জ্য জল ব্যবস্থাপনার জন্য উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের জরুরি প্রয়োজন তুলে ধরা হয়। গরমে বাইরের কর্মীদের ওপর তাপের প্রভাব মোকাবিলায় কৌশল নিয়েও আলোচনা হয়, তথ্য বলছে, গ্রীষ্মকালে ১৫% কৃষি শ্রমিকের হিট এক্সহশন হয় এবং ১০% হিট স্ট্রোকের শিকার হন।

অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল প্রতিযোগিতামূলক গবেষণা প্রদর্শনী, যেখানে ৫০০টিরও বেশি জমা পড়া অ্যাবস্ট্রাক্ট এর মধ্য থেকে সেরা তিনটি রিসার্চ পেপার উপস্থাপন করা হয়। এছাড়াও, পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ ও সমাধানগুলোকে ছবির মাধ্যমে তুলে ধরতে একটি আলোকচিত্র প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এই প্রতিযোগিতায় অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়া যায়, যেখানে ১,১০০ টিরও বেশি ছবি জমা পড়েছিল। অংশগ্রহণকারীরা স্মার্টফোন বা পেশাদার ক্যামেরা ব্যবহার করে তাদের নিজস্ব গল্প ও পরিবেশ ভাবনা তুলে ধরেছিলেন। এই চমৎকার ছবিগুলোর মধ্য থেকে সেরা ১০টি ছবি প্রদর্শনীতে স্থান পায় এবং বিচারকদের রায়ে শীর্ষ তিনজন ফটোগ্রাফারকে পুরস্কৃত করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
রোহিঙ্গাসহ বিশ্বের সকল শরণার্থী সংকট মোকাবেলায় বিএনপি অঙ্গীকারবদ্ধ : মির্জা ফখরুল
ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে বাংলাদেশ বিরোধী প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে : প্রেস উইং
জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টকে আরও জনপ্রিয় করা হবে : যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা
বিশ্ববাসীকে পরিষ্কার বার্তা দিতে হবে, রোহিঙ্গা সমস্যা অত্যন্ত গুরুতর : তারেক রহমান
বিশ্ববিদ্যালয়ের মান উন্নয়নে শিক্ষা ও গবেষণায় গুণগত সমৃদ্ধি অর্জন করতে হবে : বেরোবি উপাচার্য
বাতিল কারিকুলামের উপর প্রশিক্ষণ : প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দুদকের অভিযান
কুমিল্লায় তামাক বিরোধী প্রশিক্ষণ কর্মশালা 
শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের সাথে সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহী
চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের আমন্ত্রণে দূতাবাসে বিএনপি প্রতিনিধি দল
পুঁজিবাজার থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের পথ খুঁজতে কমিটি গঠন করবে সরকার
১০