ঢাকা, ২০ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘রাজনীতিটা অত সহজ পথ নয়। গোলাপের পাঁপড়ি ছড়ানো থাকে না। এখানেও সমস্যা থাকবে, সেটাই রাজনীতি। তাই জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীতে ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার মতভিন্নতায় হতাশ হওয়ার কিছু নেই।’
আজ রোববার সকালে শেরে বাংলা নগরে জিয়া উদ্যানে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধনকালে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, ভিন্নমত থাকবে, বহুমাত্রিক পথ থাকবে, কেউ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করবে, কেউ সমাজতন্ত্রের বিশ্বাস করবে, কেউ আপনার ওয়েলফেয়ার স্টেটে বিশ্বাস করবে, সব দল মত মিলিয়ে আমরা রেইনবো স্টেট, একটা রংধনু রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চাই।’
মির্জা ফখরুল আরো বলেন, অনেকের আগেই আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সংস্কার এবং ভিন্নমত সত্ত্বেও ঐক্যের ভিক্তিতে সেই স্বপ্ন দেখেছিলেন।
বিএনপি’র মহাসচিব বলেন, এখানে একজন শহীদের পিতা আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেছেন যে, আমরা আশা করেছিলাম গণঅভ্যুত্থানের পরে অতি দ্রুত রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত হবে, রাজনৈতিক কাঠামো তৈরি হবে, আমরা একটা নতুন বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারব।
মির্জা ফখরুল আরো বলেন, আমাদের লক্ষ্য একটাই যে, আমরা সত্যিকার অর্থে একটা উদারপন্থী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চাই। নতুন বাংলাদেশ চাই, পরিবর্তন চাই। আমরা দুর্নীতি চাই না, ঘুষ চাই না, আমরা হত্যা চাই না, নির্যাতন চাই না।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের মানুষ যেন সুস্থভাবে স্বাধীনভাবে কমফোর্টেবল ওয়েতে স্বস্তির সঙ্গে চলাফেরা করতে পারে, সেই ধরনের একটি রাষ্ট্র চাই।
বিএনপি’র মহাসচিব আরো বলেন, আমরা অত্যন্ত আশান্বিত যে, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব আমাদেরকে সেই লক্ষ্যের দিকেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
‘জাতীয়তাবাদী কৃষক দল’ ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ এই দুই সংগঠনের উদ্যোগে জুলাই অভ্যুত্থান উপলক্ষ্যে ‘গণঅভ্যুত্থান ২০২৪: জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা— সবুজ পল্লবে স্মৃতি অম্লান’ শীর্ষক নিম গাছ রোপণের এই অনুষ্ঠান হয়। ঢাকাসহ সারা দেশে যে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি চলমান আছে, এটি তারই অংশ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর জিয়াউর রহমানের সমাধি সংলগ্ন জিয়া উদ্যানে শহীদ সৈকত ও শহীদ আবু সাঈদের নামে দুইটি নিম গাছ রোপণ করেন বিএনপি মহাসচিব।
গতকাল শনিবার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এক অনুষ্ঠানে একজন শহীদের মায়ের আহজারির কথা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, শহীদের সেই মা একটা কথাই বলছিলেন, যে ছেলেটা নিয়ে আমি স্বপ্ন দেখেছি, আমার পরিবার স্বপ্ন দেখেছে, আমরা ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছি। মর্মান্তিক ও পাশবিকভাবে সেই ছেলেটাকে ওরা কেড়ে নিয়ে গেছে। তাকে গুলি করে মেরেছে। এরপরে একটা ভ্যানের মধ্যে উঠিয়েছে। বেঁচে আছে, না মরে গেছে সেটা না দেখে আরও ছয়-সাতটা লাশের সঙ্গে তাতে পুড়িয়ে দিয়েছে।
মহাসচিব বলেন, চিন্তা করতে পারেন! একটা স্বাধীন দেশের নাগরিক আমরা। ১৯৭১ সালের যুদ্ধ করেছি একটা স্বাধীন দেশের জন্য। সেই দেশের পুলিশ প্রশাসন, যা আমার রাষ্ট্রের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য দায়িত্ব পালন করে, আমাদের প্রত্যেকের ট্যাক্সের টাকায় থেকে যাদের বেতন হয়, তারা আজকে আমার ছেলেকে হত্যা করছে, পুড়িয়ে মারছে। কী নির্মম, নৃশংস, অমানবিক!
তিনি আরো বলেন, ‘এজন্য হাসিনাকে কোনোদিন ক্ষমা করা যাবে না, হাসিনা হচ্ছে মানবজাতির একটা কলঙ্ক, হাসিনা হচ্ছে মায়েদের একটা কলঙ্ক। আমাদের প্রথম কাজ হবে, এদের বিচার করা।’
বিএনপি’র মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের দ্বিতীয় কাজ হবে, শহীদদের পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। যারা আহত হয়েছেন, চোখ হারিয়েছে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। তা না হলে, ভবিষ্যতে জাতি আমাদের ক্ষমা করবে না।’
তিনি বলেন, সেজন্য গতকালও আমরা প্রস্তাব করেছি, আজকেও প্রস্তাব করছি, আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে একটা ফান্ড রেইস করব, যা মাধ্যমে এই পরিবারকে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করব।
মির্জা ফখরুল আরো বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাহেব আমরা বিএনপি পরিবারের মাধ্যমে এই কাজটা করেছেন।
ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আশা করি, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আগামী দিনে যে নির্বাচনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে, তা ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে অনুষ্ঠিত হবে।’
তিনি বলেন, সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা জনগণের একটা সরকার তৈরি করতে পারব। যে সরকার আমার এই শহীদদের মূল্যায়ন করবেন, তাদের মর্যাদা দেবেন। একই সঙ্গে যে জন্য সংগ্রাম হয়েছে, বাংলাদেশে সে ধরনের একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবার সব রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ এর আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমনের সঞ্চালনায় এই অনুষ্ঠানে বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি পালন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুলসহ চার জন শহীদের স্বজনরা বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে অবসরপ্রাপ্ত বিগ্রেডিয়ার জেনারেল একেএম শামসুল ইসলাম শামস, বাদলুর রহমান বাদল, সাইফ আলী খান, মোকছেদুল মোমিন মিথুন, জাহিদুল ইসলাম রনি, শফিকুল হক সাজু ও হাসনাইন নাহিয়ান সজীবসহ কৃষক দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।