ঢাকা, ২০ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : হোসনে আরা খাতুন নামে এক নারীর মৃত্যু নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিত্তিহীন খবর ছড়িয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা শনাক্ত করেছে ফ্যাক্টওয়াচ।
বাংলাদেশে চলমান গুজব, ভুয়া খবর, অপতথ্য প্রতিরোধ ও জনগণের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়ায় দায়িত্বে নিয়োজিত ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ফ্যাক্টওয়াচ হল একটি স্বাধীন ফ্যাক্ট-চেকিং সত্তা, যা লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত এবং সেন্টার ফর ক্রিটিকাল অ্যান্ড কোয়ালিটিভেটিভ স্টাডিজ (সিকিউএস) দ্বারা পরিচালিত।
ফ্যাক্টওয়াচ জানায়, ‘খোলা মাঠে একজন নারীর মৃতদেহ পড়ে আছে, এ ধরনের একটি ছবি শেয়ার করে ফেসবুকের বেশ কিছু পোস্টে দাবি করা হচ্ছে যে, নারীর নাম উপমা রায়। তিনি মুসলিম বিয়ে করার জন্য নিজের ধর্ম বদলে মুসলিম হয়ে সালমা আক্তার নাম নিয়েছিলেন।
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যায়, মৃত নারীর নাম উপমা রায় অথবা সালমা আক্তার নয়, তার নাম হোসনে আরা খাতুন।
ফেসবুক পোস্টগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এই হত্যাকাণ্ডকে ‘লাভ জিহাদ’ হিসেবে উপস্থাপন করছেন অনেকে।
উল্লেখ্য, ‘লাভ জিহাদ’ সাধারণত ভারতের রাজনীতিতে পরিচিত শব্দ। হিন্দু নারী মুসলিম পুরুষের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম হলে, সেটিকে ‘লাভ জিহাদ’ নামে আখ্যায়িত করা হয়। বাংলাদেশেও একই ধরণের ঘটনায় কেউ কেউ এই শব্দটি ব্যবহার করেন।
কিছু পোস্টে নারীর মৃতদেহের ছবির সঙ্গে যুক্ত ক্যাপশনে উল্লেখ করা হয় যে, ঘটনাটি ময়মনসিংহ গৌরীপুর উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের।
এই সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চে নেত্রকোনার স্থানীয় পত্রিকার একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। ‘খবর নেত্রকোনা’য় প্রতিবেদনটি প্রাকশিত হয়েছে ২০২৫ সালের ২ জুলাই।
এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহত নারীর নাম হোসনে আরা খাতুন (৩৩)। তিনি ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর উপজেলার ৬নং বোকাইনগর ইউনিয়নের মৃত আব্দুল গণির মেয়ে। তার মায়ের নাম রাবেয়া খাতুন।
গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. দিদারুল ইসলামের বরাতে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, হোসনে আরা খাতুনকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২ জুলাই ইউনিয়নের কাউলাটিয়া কবিরাজবাড়ি এলাকার এক কচুক্ষেত থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
ফেসবুকে ছড়ানো মৃতদেহের ছবিটি এই প্রতিবেদনের সঙ্গে যুক্ত আছে। ১২ আগস্ট গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. দিদারুল ইসলামের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে ফ্যাক্টওয়াচ।
তিনি জানান, হোসনে আরাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। পুলিশের অনুসন্ধানে হত্যাকারী ধরা পড়েছেন। হত্যাকারী হোসনে আরার প্রতিবেশী ছিলেন। আসামী অপরাধ স্বীকার করে জবানবন্দী দিয়েছেন।
ধর্মান্তরিত হওয়ার কোনো ঘটনা এখানে জড়িত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, না। এ ধরণের কোনো বিষয় নেই।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া ভিডিও, খবর ও গুজব ছড়ানোর ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব বিষয় নজর এলে ফ্যাক্ট চেক করে সত্য তুলে ধরাসহ গুজব প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছে ফ্যাক্টওয়াচ।