সীমাহীন কষ্টে বাঘ-বিধবারা

বাসস
প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩:৫৩

 

ঢাকা, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস): সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে যে সকল নারীর স্বামী মারা যায়, তারা বাঘ-বিধবা নামে পরিচিত। বন লাগোয়া গ্রামগুলোতেই বাস করে তারা। 

এসকল বাঘ-বিধবার জীবন নানা রকম কুসংস্কারের জালে বন্দী। বাঘ-বিধবাদের অলক্ষ্মী বা অপয়া বলে  মনে করা হয়। এ কারণে নানা সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে তাদের ডাকা হয় না। কারণ প্রচলিত বিশ্বাস রয়েছে, তাদের উপস্থিতি অমঙ্গল ডেকে আনবে। এছাড়া এসব নারীর দ্¦িতীয়বার বিয়ে করাও প্রায় নিষিদ্ধ। মনে করা হয়, তাদের জীবনে বাঘের অভিশাপ রয়েছে। ফলে এসব নারী একঘরে হয়ে  দুর্ভোগকবলিত জীবনযাপন করতে বাধ্য হন। 

খুলনার কয়রা উপজেলায় বাঘ বিধবা আছেন ৭৫০ জন।  সাতক্ষীরার  শ্যামনগর উপজেলায় বাঘ-বিধবার সংখ্যা এক হাজার ১৬৫ জন। এছাড়া বনসংলগ্ন  বাগেরহাটের মোংলা, মোড়েলগঞ্জ, শরণখোলা এবং খুলনার  দাকোপ  উপজেলায় বাঘ-বিধবা থাকলেও সঠিক পরিসংখ্যান নেই। স্বামী হারানো এসব  নারীর  সকলের অবস্থাই  শোচনীয়। 

সুন্দরবনে  ২০০৮ সালে  মাছ শিকারে গিয়ে বাঘের আক্রমণে  মৃত্যু হয় খুলনার  কয়রা উপজেলার আব্দুল গফ্ফারের। বাঘ-বিধবা হওয়ায়  দ্বিতীয়বার বিয়ে করতে পারেননি তার  স্ত্রী রোকেয়া খাতুন। লাঞ্ছনার  এখানেই শেষ নয়। তার কপালে  জোটেনি সরকারি বিধবা ভাতাও। সংসারের ঘানি টানতে গিয়ে দিনমজুরি পর্যন্ত করতে হয়েছে  রোকেয়াকে। বাঘ বিধবার তকমা নিয়ে এমন দুর্বিষহ  জীবনযাপন করতে হচ্ছে সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার হাজারো নারীকে। 

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারি-বেসরকারি  সংস্থার  কর্মকর্তারা বলছেন, সুন্দরবন অঞ্চলে  বাঘের আক্রমণে স্বামীর মৃত্যুর ঘটনায় বিধবা হওয়ার হার কমেছে। তবে আগে বাঘ-বিধবা হওয়া নারীদের দুর্দশা ঘুচানো  যায়নি। তবে সেলাই প্রশিক্ষণ দেয়াসহ বিভিন্নভাবে তাদের পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে।

বাঘ-বিধবা নামে পরিচিত নারীরা জানান, স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে  সংসার চালানো ও সন্তানদের লেখাপড়া শেখানোর জন্য কঠিন জীবনসংগ্রাম  করতে হচ্ছে তাদের। নদী-খালে মাছের পোনা ধরা, দিনমজুরি কিংবা অন্যের বাড়িতে  কাজ করে কোনোমতে টেনেটুনে সংসার চলছে। 

রোকেয়া বেগম বলেন, ‘স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে মেয়ে ও ছেলেকে মানুষ  করতে হচ্ছে।  কখনো  নদীতে মাছ ধরেছি, কখনো  দিনমজুরিও  করেছি।’

কয়রার আরেক বাঘ-বিধবা আম্বিয়া খাতুন বলেন, ২২ বছর আগে আমার স্বামী আমজাদ হোসেন সরদার সুন্দরবনে  মাছ শিকারে গিয়েছিলেন। বাঘের হামলায় তিনি মারা যান। এরপর  তিন মেয়েকে নিয়ে শুরু হয় নতুন যুদ্ধ, যা এখনো  চলছে। 

এদিকে এ পর্যন্ত তিনি বা আশেপাশের  কোনো বাঘ-বিধবা সরকারি ভাতাও পাননি। 

সূত্র জানায়, বনজীবীরা এখন আর আগের মত  অবাধে সুন্দরবনে যেতে পারছেন না। সুন্দরবনেও বাঘের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। এখন  বাঘের আক্রমণে বনজীবীর মৃত্যুর ঘটনাও কমেছে। এ কারণে সুন্দরবন অঞ্চলে বাঘ-বিধবা হওয়ার হার কমেছে। দেরিতে হলেও কতিপয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) ও সংগঠন বাঘ-বিধবাদের ভাগ্য বদলানোর কাজে এগিয়ে এসেছে। তারা বাঘ-বিধবাদের প্রশিক্ষণসহ নানা ধরনের কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নিয়েছে। শ্যামনগর উপজেলায় বাঘ-বিধবাদের নিয়ে কাজ করছে আরো  এনজিও। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুন্দরবন  পশ্চিম বন বিভাগের এক  কর্মকর্তা  বলেন, বর্তমানে  সুন্দরবনে বনজীবীদের প্রবেশে অনেক বিধিনিষেধ রয়েছে। তারা  জঙ্গলে সহজে ঢুকতে পারে না। তাই এখন বাঘের আক্রমণের শিকার হওয়ার তেমন তথ্যও পাওয়া যায় না। সুন্দরবনে  বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি ও  বাঘের অবাধ বিচরণ  নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে নানা পদক্ষেপ  নেয়া হয়েছে। সুন্দরবনে পর্যটক প্রবেশও নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

কয়রা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জানান, বাঘ-বিধবাদের তালিকা তৈরির কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী বাঘ-বিধবাদের পুনর্বাসন করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
নাটোরে উন্নয়ন সম্পৃক্ততার লক্ষ্যে নারী সমাবেশ
বাগেরহাটে প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান কার্যক্রমের উদ্বোধন
মুন্সীগঞ্জে অবৈধ অস্ত্র ও মাদকসহ গ্রেপ্তার ৪
দুর্গাপূজায় আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করবে কেএমপি
ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনে ডিএমপি’র ২,১৫২ মামলা
যুক্তরাজ্যে দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফরের জন্য প্রস্তুত ট্রাম্প
জাতিসংঘ তদন্তকারীদের অভিযোগ : গাজায় ‘গণহত্যা’ চালাচ্ছে ইসরাইল
দিনাজপুরে আউশ ধান চাষে এবার অধিক ফলন, খুশি কৃষক
সার আমদানির চুক্তি অনুমোদনে সরকারের সুপারিশ 
নবনির্বাচিত জাকসু কমিটি’র শপথ ১৮ সেপ্টেম্বর
১০