\ আল-আমিন শাহরিয়ার \
ভোলা, ৪ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : জেলার উপকূলের মৎস্য অভয়ারণ্যে ইলিশের নিরাপদ প্রজনন নিশ্চিতে আজ শনিবার মধ্যরাত থেকে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে। ভোলার মেঘনা, তেঁতুলিয়া, কালাবাদর, বেতুয়া ও ইলিশা নদীতে সকল প্রকার মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
আগামী ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে বলে জানিয়েছেন, মৎস্য অধিদপ্তর।
এসময় নৌবাহিনী, নৌ-পুলিশ, কোস্টগার্ড এবং বিমান বাহিনীসহ মোট চার বাহিনীর প্রহরাও অন্তর্ভুক্ত থাকবে নিষেধাজ্ঞার এ অভিযানে। মৎস্য বিভাগ জানায়, ভোলার সাত উপজেলার মেঘনা, কালাবাদর, তেঁতুলিয়া ও ইলিশা নদীতে মাছ শিকার করা নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ১ লাখ ৭১ হাজার। তবে বেসরকারিভাবে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে আড়াই লাখ জেলে।
তথ্য অনুযায়ী, ভোলা উপকূলের কয়েক লাখ জেলে ৩০/৩৫ বছর ধরে মৎস্য আহরণের সাথে জড়িত থাকলেও নানা জটিলতার ঘূর্ণিপাকে তাদের ভাগ্যে এখনো জোটেনি সরকারি প্রণোদনার জেলেকার্ড।
জেলা মৎস্য দপ্তর জানায়, ইলিশের নিরাপদ প্রজনন এবং বেড়ে ওঠার জন্য প্রতি বছর মেঘনা ও তেঁতুলিয়াসহ উপকূলের সংযোগ নদীগুলোতে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার। তারই ধারাবাহিকতায় আজ শনিবার (৪ অক্টোবর) মধ্যরাত থেকে শুরু হয়ে ২৫ অক্টোবর মধ্যরাত পর্যন্ত মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।
এ সময়ের মধ্যে মেঘনা নদীর চর ইলিশা থেকে চর পিয়াল পর্যন্ত ৯০ কিলোমিটার এবং তেঁতুলিয়া নদীর ভেদুরিয়া থেকে চর রুস্তম পর্যন্ত ১শ' কিলোমিটারের মধ্যে সকল প্রকার মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। অভিযান সফল করার লক্ষ্যে মৎস্য বিভাগ ইতিমধ্যে সচেতনতামূলক সভা-সমাবেশ, লিফলেট বিতরণ, পোস্টারিংসহ বিভিন্নভাবে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছে।
ভোলার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন বাসস'কে জানান, জেলার ৭ উপজেলায় ১ লাখ ৭১ হাজার নিবন্ধিত জেলের মধ্যে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৪৩৮ জেলে পরিবারের জন্য ৩৫৮৫.৯৫০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ হয়েছে। নানাবিধ কারণে অন্যসব জেলেদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই করার পর চাল দেয়ার সিদ্ধান্ত হবে। নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে জেলার নিবন্ধিত জেলেরা ২৫ কেজি করে চাল পাবেন। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ওই চালের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
এদিকে সাম্প্রতিক মৌসুমের শুরুতে ভোলার নদ-নদী ছিলো ইলিশ-শূন্য। কিন্তু মৌসুমের শেষভাগে যে মূহুর্তে ইলিশের মুখ দেখা শুরু করলো জেলেরা ঠিক সে মূহুর্তেই ইলিশ ধরায় আসলো নিষেধাজ্ঞা। এতে নাখোশ ভোলার জেলেরা। তারা বলছেন, নদীতে ইলিশ না থাকায় পুরো মৌসুমেই আমরা বেকার সময় কাটিয়েছি, কিন্তু যখন ইলিশ পাওয়া শুরু হলো তখনই আবার নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় আমাদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়েছে।
ভোলা সদরের ইলিশা মাছঘাটের আড়ৎ মালিক সমিতির সভাপতি বাদশা মিয়া জানান, ভরা মৌসুমে ইলিশ না পেয়ে আমরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত তেমনি জেলেরাও হতাশ হয়েছেন। তাই ১২ অক্টোবর থেকে যদি এ নিষেধাজ্ঞা দিতো তাহলে জেলে, আড়ৎদারসহ সবার জন্যই ভালো হতো।
ভোলার চরফ্যাশনের সামরাজ মৎস্য অবতরন কেন্দ্রর জেলে সুফিয়ান মাঝি, বাহালুল ও তারাপদ মাঝির একই দাবি। তারা বলেন, নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে আমাদেরকে যথাযথ সাহায্য করলে আমরা লোকসান ও ক্ষতি থেকে কিছুটা মুক্তি পেতাম।
তথ্য অনুযায়ী মতে, গত সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) মৎস্য উপদেষ্টা ফরিদা আখতার আন্ত:মন্ত্রনালয়ের বিশেষ সভায় 'মা' ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টদের সাথে বিষদ আলোচনা করেন। ওইদিন তিনি বলেন, আশ্বিনী পূর্ণিমার আগের চার দিন ও অমাবস্যার পরের তিন দিনকে অন্তর্ভুক্ত করে মোট ২২ দিন ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২৫’ চলবে। এ অভিযানে মৎস্য কর্মকর্তাদের পাশাপাশি নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অংশ নেবেন। এ সময় ৩৭ জেলার ১৬৫ উপজেলার ৬ লাখ ২০ হাজার জেলে পরিবারকে সরকারিভাবে ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় সহায়তা দেয়া হবে।
ওদিকে ইলিশ ধরা নিষেধাজ্ঞা শুরুর আজ প্রথমদিন ভোররাত থেকে ভোলার নদ-নদীগুলোতে ছিল শুনশান নিরবতা। সকাল থেকে মেঘনা নদীর বিভিন্ন মাছঘাটগুলো ঘুরে দেখা গেছে, আড়ৎগুলো বন্ধ। নেই ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাক। নদীপাড়ে বসে জেলেরা ছেড়া জাল বুনছেন। কেউবা কাটাচ্ছেন অলস সময়।
সদর উপজেলার তুলাতুলি মাছঘাটে গিয়ে কথা হয় সেখানকার জেলে রুস্তম মাঝি, রসূল মাঝি ও সম্ভূনাথ মাঝির সাথে। তারা বলেন, আমাদের জীবন জীবিকা চলে নদীতে মাছ পাওয়া না পাওয়ার ওপর। তারা অভিযোগ করেন, ত্রিশ-পয়ত্রিশ বছর ধরে মাছধরা পেশার সাথে জড়িত থাকলেও আমাদের কারোর কপালে-ই এখনো জেলেকার্ড মিলেনি। তারা আরও জানান, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের জমানায় চেয়ারম্যান-মেম্বারকে ঘুষ দিতে পারিনি বলে জেলেকার্ডের তালিকায় আনাদের নাম উঠেনি। তবে বর্তমান অর্ন্তর্বতীকালীন সরকারের আমলে তাদের নাম নেয়া হয়েছে। এবার তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে বলে আশা করছেন তারা। জেলেরা বলেন, শতকষ্ট হলেও সরকারের দেয়া নিষেধাজ্ঞা আমরা মেনে চলবো কিন্তু আমাদেরকে এ সময় সঠিকভাবে প্রনোদনা দেয়ার দাবি জানাই স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারের প্রতি।