।। আবদুস সালাম আজাদ জুয়েল।।
চাঁদপুর,৪ অক্টোবর, ২০২৫( বাসস): দেশের জাতীয় সম্পদ ইলিশের প্রজনন রক্ষায় ২২ দিন জেলার পদ্মা-মেঘনা নদীর ৭০ কিলোমিটার অভয়াশ্রম এলাকায় ইলিশসহ সব ধরণের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার।
গতকাল শুক্রবার দিনগত রাত ১২টার পর থেকে মা ইলিশ রক্ষায় এই কর্মসূচি শুরু হয়েছে।
আজ শনিবার সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত মেঘনা উপকূলীয় জেলা সদরের লালপুর, কল্যাণপুর, আনন্দ বাজার, বড় স্টেশন যমুনা রোড, টিলাবাড়ি, পুরান বাজার রনাগোয়াল, দোকানঘর, রামদাসদী, বহরিয়া ও হরিণা ফেরিঘাট পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে জেলে নৌকা শূন্য নদী। তবে যাত্রী ও মালবাহী অন্যান্য নৌযান চলাচল করছে।
সদরের আনন্দ বাজার এলাকায় জেলেরা নৌকাগুলো ডাঙ্গায় উঠিয়ে রেখেছে। শহরের লঞ্চঘাট সংলগ্ন টিলাবাড়ি এলাকায় খালের মধ্যে কারেন্টজালসহ কিছু নৌকা দেখা গেছে।
আনন্দ বাজার এলাকার জেলে ইমাম হোসেন (৫০) বলেন, গত দুদিন আগেই আমরা নৌকা ও জাল ডাঙ্গায় উঠিয়ে রেখেছি। নদীতে ভরা মৌসুমে ইলিশ পাওয়া যায়নি। ইলিশ সঠিকভাবে ডিম ছাড়তে পারলে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
একই এলাকার জেলে খালেক মিয়া (৪৮) বলেন, যারা প্রকৃত জেলে তারা কখোনেই মা ইলিশ ধরে না। মৌসুমে কিছু জেলে আছে তারা প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে মা ইলিশ ধরে। আমরা নিষেধাজ্ঞা মেনে এখন অবসরে আছি। সবাই এই আইন কানুন মেনে চলুক এটা চাই।
লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের কোটারাবাদ এলাকার জেলে খলিল মোল্লা (৪৩) বলেন, অভিযান মেনে চলি। তবে আমাদের সংসার চলে না। সরকারি সহায়তা বৃদ্ধি করার দরকার। সরকার আমাদের দিকে নজর দিয়ে পাশে থাকুক।
হরিণা ফেরিঘাটের মাছ ব্যবসায়ী আবুল কাশেম কালু হাওলাদার বলেন, আমাদের আড়ৎগুলো বৃহস্পতিবার রাত ১০টার পর বন্ধ করে দিয়েছি। এই ২২ দিন আমরা অবসর সময় কাটাব। তবে সরকারি অভিযান বাস্তবায়ন করতে হলে নদীতে কোন নৌকা রাখা যাবে না। তিনি প্রশাসনের কাছে দাবী জানান যেনো কঠোরভাবে নিষেধাজ্ঞা মানতে জেলেদের বাধ্য করা হয়।
জেলার সদর উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মির্জা ওমর ফারুক বলেন, টাস্কফোর্স ইতোমধ্যে নদীতে অভিযান শুরু করেছে। জেলেরা এখন পর্যন্ত অভিযান অমান্য করে নদীতে নামছে না। বিশাল এই জলরাশিতে সকলের সহযোগিতা থাকলে মা ইলিশের প্রজনন রক্ষা হবে।
নৌ পুলিশের চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ মোশফিকুর রহমান বলেন, গত বেশ কয়েকদিন আমরা জেলে পাড়ায় গিয়ে মা ইলিশ না ধরার জন্য জেলে ও এলাকার লোকদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারপরেও আইন অমান্য করলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি আরো বলেন, সাগর থেকে নদীর মিঠা পানিতে আসা ইলিশ নিরাপদে ডিম ছাড়ার জন্য ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত সরকারের এই নিষেধাজ্ঞা। জেলার মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত পদ্মা-মেঘনার ৭০ কিলোমিটার হচ্ছে অভয়াশ্রম এলাকা। এই সময়ে আইন অমান্য করে কেউ ইলিশ আহরণ, ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন ও মজুদ করলে তাদের বিরুদ্ধে মৎস্য আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে প্রশাসন।