রাজশাহী, ১২ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব স্পষ্টভাবে বলেছেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন সফলভাবে আয়োজন করা এখন বর্তমান প্রশাসনের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের বিষয়।
আজ রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য এসব কথা বলেন। এসময় তিনি বলেন, আগামী ১৬ অক্টোবর রাকসু নির্বাচন আয়োজনে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। নির্বাচন কমিশন, রিটার্নিং অফিসার, প্রার্থী ও সংশ্লিষ্ট সবাই আন্তরিকভাবে কাজ করছেন। এই নির্বাচন সফলভাবে সম্পন্ন করতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারী সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাই।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, সব ধরনের বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। নির্বাচন কমিশন, রিটার্নিং অফিসার এবং প্রার্থীরা সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন।
তিনি আরও বলেন, সফলভাবে নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনবো। আমরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে আরো এগিয়ে নিয়ে যাব।
ভিসি বলেন, ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টার মধ্যে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হবে।
তিনি বলেন, দীর্ঘ ৩৫ বছর পরা এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। অচলাবস্থা ভেঙে এবং বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আমরা এ নির্বাচন আয়োজন করছি।
রাবি প্রশাসন এবং শিক্ষার্থীসহ সবাই নির্বাচনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে জানিয়ে ভিসি বলেন, আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, আমরা সকল প্রার্থীদের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করেছি এবং বর্তমান ধারা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়, নেতৃত্ব বিকাশে উৎসাহিত করা এবং প্রশাসনের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করার জন্য একটি সাংগঠনিক প্ল্যাটফর্ম তৈরির লক্ষ্য নিয়ে ১৯৬১ সালে রাকসুর যাত্রা শুরু হয়।
তবে, ১৯৮৯ সালের পর আর কোনো রাকসু নির্বাচন হয়নি। ছাত্র সহিংসতা, সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলা এবং প্রশাসনের অনীহাকে রাকসু নির্বাচনে অচলাবস্থার প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
আসন্ন রাকসু,হল সংসদ ও সিনিটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের জমজমাট প্রচারণায় মুখরিত ক্যাম্পাস।
রাকসু নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ. নজরুল ইসলাম বলেন, প্রয়োজনীয় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে এবং ১৬ অক্টোবর নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও সফলভাবে অনুষ্ঠিত হবে।
নির্বাচনে মোট ভোটার ২৮ হাজার ৯০৫। এর মধ্যে ১১টি ছাত্র হলের ১৭ হাজার ৬০০ জন এবং ছয়টি ছাত্রী হলের ১১ হাজার ৩০৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।
এই নির্বাচনের মাধ্যমে ৩৫ বছরের বিরতির পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র প্রতিনিধিত্বের পুনরুজ্জীবন ঘটছে এবং ক্যাম্পাস বিশেষ করে আবাসিক হলগুলোতে ইতোমধ্যেই উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মতে, রাকসু কেবল নেতৃত্ব নির্বাচনের একটি প্রক্রিয়া নয় বরং শিক্ষার্থীদের মতামত এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার একটি মাধ্যমও।
প্রধান নির্বাচন কর্মকর্তা অধ্যাপক সেতাউর রহমান জানান, নির্বাচনে ৯০৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তার মধ্যে রাকসুতে ২৪৮ জন, হল সংসদে ৫৯৭ জন এবং সিনেটের জন্য ৫৮ জন।
রাকসু নির্বাচনে, ১৮ জন সহ-সভাপতি (ভিপি) , ১৩ জন সাধারণ সম্পাদক (জিএস) এবং ১৬ জন সহকারী সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
হল সংসদ নির্বাচনে, ভিপি পদে ৬১ জন, জিএস পদে ৫৮ জন এবং এজিএস পদে ৫৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, যেখানে ছয়টি ছাত্র হলে ভিপি পদে ১৬ জন এবং জিএস পদে ১৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
রাকসু, হল পরিষদ এবং সিনেট-প্রতিনিধি নির্বাচনে মোট ১১টি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।